<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মার্কিন নির্বাচনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ থাকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সরাসরি বিতর্ক। এর আগের নির্বাচনগুলোর প্রাক্বালে এ ধরনের তিনটি বিতর্কের চর্চা থাকলেও এবার দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে একটি বিতর্ক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচন ঘিরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিসের মধ্যে প্রথম এবং শেষ বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ১১ সেপ্টেম্বর। এর আগে গত জুন মাসের বিতর্কে বাইডেনকে ধরাশায়ী করে ট্রাম্প যখন অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন, হঠাৎ ঘোষণা এলো ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তখন থেকে একটি নিরুত্তাপ নির্বাচন এখন পর্যন্ত সময়ে এসে যথেষ্ট উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বাইডেনের সঙ্গে বিতর্কে অনেকটা শান্ত মেজাজে আবির্ভূত হলেও এবার কমলার সঙ্গে বিতর্কে তিনি যেন অনেকটা পুরনো মূর্তি নিয়ে হাজির হলেন! স্বভাবসুলভ আক্রমণের মধ্য দিয়ে বাইডেনকে একজন অস্তিত্বহীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে যখন আখ্যায়িত করছিলেন, ধীরস্থির কমলা পাল্টা আক্রমণে বিদ্ধ করে তাঁকে মনে করিয়ে দিলেন যে তিনি বাইডেনের সঙ্গে নয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাঁর সঙ্গে। ট্রাম্প কথার মোড় ঘুরিয়ে কমলাকে একজন মন্দ প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এভাবেই দেড় ঘণ্টার বিতর্ক এগিয়ে চলে। উভয় পক্ষই সমানে সমান লড়েছেন বলে মন্তব্য করা হয়েছে বিশ্লেষকদের পক্ষ থেকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/14-09-2024/2/kalerkantho-ed-2a.jpg" height="251" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/14-09-2024/2/kalerkantho-ed-2a.jpg" style="float:left" width="350" />ফিলাডেলফিয়ায় এবিসি নিউজ আয়োজিত এই বিতর্কে উঠে এসেছে গর্ভপাত, অভিবাসন, অর্থনীতি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ, ক্যাপিটল হিলে হামলা এবং কর ব্যবস্থার মতো বিষয়গুলো। উভয়েই তাঁদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে এই ইস্যুগুলো নিয়ে তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। গর্ভপাত বিষয়টি এই বিতর্কে অন্যতম ইস্যু হিসেবে আসলেও দুজনের কারো বক্তব্য থেকেই এটা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। উপরন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প কমলা হ্যারিসকে দোষারোপ করে বলেছেন যে ডেমোক্র্যাটরা গর্ভধারণের ৯ মাসের মাথায় গর্ভপাতের অধিকার দিতে চান। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প বিষয়টি রাজ্য পর্যায়ে নিষ্পত্তিযোগ্য বলে দাবি করেন। কমলার পক্ষ থেকেও জানানো হয় ট্রাম্পের আমলে নিয়োককৃত তিনজন বিচারকও এ ক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের কর্তৃত্বকে খর্ব করেছেন। সুতরাং যা দাঁড়াচ্ছে, তারা উভয়েই এটি নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা দেননি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমান বিশ্বে অন্যতম আলোচ্য বিষয় ইউক্রেন-রাশিয়া এবং হামাস-ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ট্রাম্প ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যকার যুদ্ধের জন্য বাইডেনকে দায়ী করেন এবং যুদ্ধ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন। তিনি এ ধরনের যুদ্ধের কোনো প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন না। অন্যদিকে পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাকে ইঙ্গিত করে কমলার পক্ষ থেকে বলা হয় এই সময়ে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকলে পুতিন এত দিন কিয়েভে বসে থাকতেন এবং গোটা ইউরোপে তিনি তাঁর প্রভাব বিস্তার করতেন। সেই সঙ্গে তিনি এটাও যুক্ত করেন যে ইউরোপের নেতারাও চান না যে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হোন। কারণ এর মধ্য দিয়ে ইউরোপের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। বিতর্কের এই পর্যায়ে কমলার কাছে ট্রাম্প ধরাশায়ী হয়েছেন বলে মনে করা যায়। একইভাবে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন ইস্যু নিয়ে কমলার তুলনায় ট্রাম্প ভালো করতে পারেননি। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে দাবি করে বলা হয় যে তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে এ ধরনের যুদ্ধ হতো না, কিন্তু তিনি থাকলে কিভাবে এই যুদ্ধ প্রতিহত করতেন সেটা ব্যাখ্যা করেননি। অন্যদিকে কমলার দিকে ইঙ্গিত করে আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন যে কমলা প্রেসিডেন্ট হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে ইসরায়েল রাষ্ট্র ধ্বংস হয়ে যাবে, অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে কমলা ইসরায়েলবিদ্বেষী। সেই সঙ্গে কমলা নির্বাচিত হলে তিনি এ ক্ষেত্রে বাইডেনের নীতিকেই এগিয়ে নেবেন বলে মনে করেন ট্রাম্প। তবে ইসরায়েলের সমর্থনে বাইডেনের এত দিনকার প্রত্যক্ষ সমর্থন এবং সহায়তার বিশ্লেষণে ট্রাম্পের দাবির পক্ষে জনমত গঠনের খুব একটা সুযোগ রয়েছে বলে মনে করার কারণ নেই। কেবল বিতর্কের কারণেই তিনি এ ধরনের হালকা বিষয় উপস্থাপন করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে দুজনের পক্ষ থেকেই এক পর্যায়ে এই যুদ্ধের আশু অবসানের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কমলার পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের বিষয়টি নতুন করে উচ্চারণ করা হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">করারোপের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে কমলা হ্যারিস ধনীদের সুরক্ষায় ট্রাম্পের নীতির সমালোচনার জবাবে ট্রাম্প দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের বিষয়টিকে রক্ষাকবচ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। চীনসহ কিছু দেশের ওপর অতিরিক্ত করারোপেরে ফলে কার্যত মার্কিন নাগরিকদের ওপরই অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে ট্রাম্পের জবাব, এর মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত করের ফলে অতিরিক্ত অর্থ সংস্থানের মধ্য দিয়ে মার্কিন অর্থনীতিই লাভবান হয়েছে। যার সুফল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রশাসনও পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। করারোপ বিষয়ে ট্রাম্প তাঁর নীতিতে অটল থেকে জানিয়েছেন যে বিদেশি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত এই করারোপের ফলে জিনিসের দাম বাড়বে না, উপরন্তু মানুষের আয় বৃদ্ধি হবে এবং জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটবে। ২০২১ সালে ক্যাপিটল হিলে হামলার বিষয়ে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জবাব, এর জন্য তাঁর কোনো প্রকার দায়বদ্ধতা নেই। জবাবে কমলার পক্ষ থেকে সেদিন কী হয়েছিল সেটা নিয়ে ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখতে পরামর্শ দেওয়া হয়। সেদিন হামলার আগে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এক বক্তব্যে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফাইট লাইক হেল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলে হামলাকারীদের উসকানি দেওয়া হলেও এর জন্য তিনি অনুতপ্ত নন বলে জানান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব কিছু মিলিয়ে এবারের ট্রাম্প-কমলার মধ্যকার বিতর্কটি বেশ জমে উঠেছিল, যার মধ্য দিয়ে কমলা হ্যারিস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হলেন। এর আগে গত জুন মাসে ট্রাম্প-বাইডেনের মধ্যকার বিতর্কের পর অনেকেই যখন আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পকেই আগামী দিনের মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলেন, এমন অবস্থায় দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন কমলা হ্যারিস। গত মাসের ২২ তারিখে শিকাগোতে ডেমোক্রেটিক দলের কনভেনশনের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করার পর থেকে প্রায় প্রতিটি জরিপে ট্রাম্পের তুলনায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে নির্বাচনী বিতর্কের পর ফক্স নিউজের এক জরিপেও কমলা ৪৭ পয়েন্ট পেয়ে ট্রাম্পের তুলনায় ৩ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। এর বাইরেও বিচ্ছিন্নভাবে মার্কিন নাগরিকদের অনেকেই কমলাকে বিতর্কে জয়ী হিসেবে মনে করছেন।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মার্কিন নির্বাচনের সাম্প্রতিক জনমত জরিপগুলোর সঙ্গে এ বছরের শুরুর দিকের জরিপগুলোর অনেকটাই তারতম্য দেখা যাচ্ছে। বছরের শুরুর দিকের প্রায় প্রতিটি জরিপে বাইডেন এগিয়ে থাকলেও ক্রমেই ট্রাম্পের ওপর মানুষের আস্থা বাড়তে থাকে। এর জন্য মধ্যপ্রাচ্যে বাইডেনের নীতি নিয়ে ব্যাপকসংখ্যক মানুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ডেমোক্রেটিক দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী পরিবর্তন এবং ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের প্রতি ক্রমাগত সহানুভূতি প্রদর্শনের বিষয়টি তাঁর প্রতি নাগরিকদের হতাশ করে থাকতে পারে। সে দিক দিয়ে কমলার পক্ষ থেকে সংকট সমাধানে দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের বিষয়টিই আন্তর্জাতিকভাবে একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান হিসেবে বিবেচিত মনে হওয়ার কারণে নাগরিকদের একটা বড় অংশ কমলার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন বলে মনে করা যেতে পারে। তবে এখানে এটাও বলে রাখা ভালো যে জনমত জরিপ যে সব সময় প্রকৃত অবস্থার প্রতিফলন ঘটায় না তার উদাহারণও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা গেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব শেষে ট্রাম্প ও কমলার মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যবধানের যে কয়েকটি জায়গা রয়েছে, সেদিক দিয়ে কমলা হ্যারিসের অধিকারপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে। অভিবাসন প্রশ্নে ট্রাম্প যতটা কঠোর, কমলা ততটাই নমনীয়, যা অভিবাসী নাগরিকদের কমলার দিকে বেশি টেনে আনতে পারে। অন্যদিকে ট্রাম্পের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> স্লোগানটিকেও সমর্থন করেন একটা বড়সংখ্যক আমেরিকান। সেদিক দিয়ে নির্বাচনের প্রায় দুই মাস বাকি থাকতে দুই প্রার্থীরই ভোটারদের কাছে টানতে আরো অনেক কৌশলী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে আপাতত ডেমোক্রেটিক শিবিরে অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস পরিলক্ষিত হচ্ছে। কমলা বিতর্কে ভালো করেছেন। তাঁদের তরফ থেকে আরেকটি বিতর্ক অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সেটির সম্ভাবনা কম। মার্কিন রাজনীতিতে একটি অপ্রচলিত ধারণা রয়েছে যে মার্কিনরা কোনো নারীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চায় না। নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করে রাজনীতির এ পর্যন্ত টেনে এনেও যদি ট্রাম্পের কাছে পরাজয়বরণ করতে হয়, তাহলে সে ধারণাটি অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">mfulka@yahoo.com  </span></span></span></span></p>