<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় অধ্যাপক মহত্প্রাণ চিকিৎসা সমাজ বিজ্ঞানী ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিমের মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশে ডায়াবেটিস চিকিৎসা কার্যক্রমকে তিনি সেবার আদর্শে উদ্ভাসিত করেছিলেন। এই দিনটি ডায়াবেটিস সেবা দিবস হিসেবে পালিত হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৫৬ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ডায়াবেটিস চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রথম বছরে মাত্র ৩৯ জন রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়েছিল। সেখানে এখন শুধু বারডেমেই  চিকিৎসাধীন নিবন্ধিত রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখের কাছাকাছি। শুধু ঢাকা শহর এবং এর উপকণ্ঠে নয়, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ডায়াবেটিস চিকিৎসা কেন্দ্র আজ দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সততা থাকলে অঙ্কুর কী করে মহা মহীরুহের রূপ লাভ করতে পারে, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠান শাহবাগের বারডেম এটির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বারডেম এখন শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বিস্ময়করভাবে সমাদৃত, এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক এর একটি সহযোগী কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন বাংলাদেশের ডায়াবেটিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিক চিকিৎসার মডেল বা অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে গণ্য করে। আর ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জসলিন, ইংল্যান্ডের লরেন্স এবং বাংলাদেশের ইব্রাহিমের নাম জড়িয়ে রয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রোগীর পরীক্ষা ও রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ডা. ইব্রাহিম ছিলেন নৈপুণ্য ও সূক্ষ্মতার প্রতি অচঞ্চল; এর মধ্যেই তিনি তাঁর শিক্ষার্থী-সহকর্মীদের শিখিয়ে ও বুঝিয়ে দিতেন রোগীর রোগ পরীক্ষণ ও নির্ণয় বিষয়টি কত নিখুঁত ও সূক্ষ্ম হওয়া উচিত এবং তিনি কিভাবে তা চান। তিনি ছিলেন প্রকৃতই একজন হাতে-কলমে শিক্ষাদাতা এবং একাধারে তাঁর চিকিৎসাদর্শনের মর্মসাধক। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম ডায়াবেটিক রোগীর পুনর্বাসনের বিষয়ে তাঁর চিন্তা-ভাবনাকে জাগ্রত রেখেছিলেন। তিনি জুরাইনে নিজের পারিবারিক সম্পত্তি সমিতিকে দান করে তথায় ডায়াবেটিক রোগীদের পুনর্বাসন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেন। ডায়াবেটিক রোগীরা যাতে সংসার ও সমাজের বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কর্মজীবনে অকেজো না হয়ে পড়ে, সে জন্য তাদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে যারা টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগী, তাদের সংসার ও সমাজের যাতে বোঝা হয়ে না দাঁড়াতে হয় সে জন্য সমিতির সিডিআইসি প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে ২০-২১ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের বিনা মূল্যে ইনসুলিন সরবরাহসহ তাদের মানসিক, শারীরিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৫৬ সেগুনবাগিচার টিনশেডে অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম যখন ডায়াবেটিক চিকিৎসা শুরু করেন, তখন থেকেই রোগীর ওপর পরিচালিত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় লব্ধ প্রাইমারি ডাটা সোর্সকে গবেষণার উত্কৃষ্ট উপাদান বিবেচনার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। সে সময় পরীক্ষার জন্য রোগীর সন্ধানে নামতে হতো তাঁকে। রাস্তায় চলার পথে কোনো রোগাক্রান্ত অসহায় অসুস্থ মানুষ বসে থাকলে তাকে নিজের গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতেন, তাকে খাইয়েদাইয়ে ভালো পোশাক-আশাক পরিয়ে উত্ফুল্ল করে তারপর তার থেকে রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করতেন। সেই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে তার গবেষণা এগিয়ে চলত। বিলেতের বিখ্যাত বিদ্যায়তনে অধ্যয়ন ও বড় বড় হাসপাতালে চাকরি সূত্রে অর্জিত অভিজ্ঞানের আলোকে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন, বিশ্লেষণ এবং উপসংহারে পর্যবেক্ষণ প্রক্ষেপণের মেথডোলজি তিনি অনুসরণ করতেন। তাঁর প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধগুলোতে বাস্তব অনুসন্ধান উৎসারিত পরিসংখ্যান তথ্য-উপাত্তের বিশ্লেষণের উপান্তে এসে একটি পরিশীলন পর্যায়ে পৌঁঁছাত। আধুনিক গবেষণা রীতিতে ডাটা বিশ্লেষণ ও একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতেন এবং তারই ভিত্তিতে টেকসই ও লাগসই চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার পথে যেতেন। এসব দেখেই বোঝা যেত তিনি একাধারে সফল ক্লিনিশিয়ান যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন খ্যাতনামা চিকিৎসক, শিক্ষক, হাসপাতাল প্রশাসক, সমাজ সংগঠক। </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সরকারের সাবেক সচিব ও </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এনবিআরের চেয়ারম্যান। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির কাউন্সিল সদস্য</span></span></span></span></p> <p> </p>