<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও সংসদীয় পদ্ধতির কথা ভাবছে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারবিষয়ক কমিশন। এই পদ্ধতিতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট হবে সদস্য বা কাউন্সিলর পদে। সদস্য বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হওয়ার পর আগ্রহীরা মেয়ের বা চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী হতে পারবেন এবং কাউন্সিলর বা সদস্যরা তাদের নির্বাচিত করবেন। নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র ও চেয়ারম্যানরা জবাবদিহি করবেন কাউন্সিলর বা মেম্বারদের কাছে। কাউন্সিলর বা মেম্বারদের কাছে আস্থা হারালে মেয়র বা চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হবে। তবে মেয়র, চেয়ারম্যানের পদ হারালেও তিনি কাউন্সিলর অথবা মেম্বার থেকে যাবেন। এ ছাড়া সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন একই আইনে এবং জাতীয় নির্বাচনের আগেই করতে চায় সংস্কার কমিশন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকাল শনিবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের অন্যতম সদস্য ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের কাছে এই চাওয়ার কথা জানান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা নাগরিক সমাজের সঙ্গে মত বিনিময় করেছি। সেখানে সবার অভিমত হচ্ছে, স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে হওয়া উচিত। কারণ স্থানীয় নির্বাচন করার কারণে আমাদের কমিশনের সক্ষমতা বাড়বে। টেস্ট হয়ে যাবে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে যে সাপোর্ট দরকার হবে, তা নিশ্চিত হয়ে যাবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচনের সময়ও কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. তোফায়েল আহমেদ স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংসদীয় পদ্ধতিতে করার পক্ষে যুক্তি উপস্থান করেছিলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">“</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের কেন্দ্রীয় বা জাতীয় সরকার হচ্ছে পার্লামেন্টারি বা সংসদীয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার হচ্ছে প্রেসিডেনশিয়াল বা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের মতো। এটা অসামঞ্জস্য। স্থানীয় সরকার হচ্ছে এক ব্যক্তিসর্বস্ব, মেয়র বা চেয়ারম্যাননির্ভর। কাউন্সিলর ও সদস্যরা এখানে কেউ নন। মেয়র, চেয়ারম্যানরা তাদের কিছু দিলে পাবেন, না দিলে পাবেন না। এই পদ্ধতি আমরা চালু করে রেখেছি। আবার এই পদ্ধতি এমনভাবে দলীয়করণ করে ফেলেছি যে অন্য কেউ এখানে আসতেও পারবে না। আগে অন্য দলের মেয়র, চেয়ারম্যানও থাকতেন। তখন একটা ভারসাম্য তৈরি হতো। এখন সে অবস্থা নেই। দলের বাইরে কেউ এসে গেলে তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা যদি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা সিটি করপোরেশন দেখি, সেখানে প্রায় দেড় শ ওয়ার্ড আছে। মেয়র পদে সেখানে কেউ সরাসরি নির্বাচন করতে পারেন না। মেয়র হতে যিনি আকাঙ্ক্ষা রাখেন তাকে আগে কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হতে হয়। কাউন্সিলর নির্বাচনের পর নির্বাচিত কাউন্সিলররাই ঠিক করবেন কাকে তারা মেয়র করবেন। সেখানে দলীয় প্রতীকেই কাউন্সিলর নির্বাচন হয়। সে হিসাবে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় সে দল থেকেই একজন মেয়র নির্বাচিত হন। সেখানে মেয়রের শক্ত বিরোধী পক্ষ থাকে। বিরোধী দলের নেতা সেখানে ডেপুটি মেয়রের মর্যাদা পান। কলকাতা সিটি করপোরেশনের সভা পরিচালনার জন্য কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। তার ভূমিকা থাকে আমাদের জাতীয় সংসদের স্পিকারের মতো। সেখানে কাউন্সিলরদের কাজ হচ্ছে মন্ত্রিসভার সদস্যদের মতো। তারা স্থায়ী কমিটিগুলোর চেয়ারম্যান হন। সবাই সেখানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। এতে প্রতিষ্ঠানটি প্রাণবন্ত থাকে। আমাদের এখানে কাউন্সিল পদ্ধতি নেই। ইংল্যান্ডে এবং আরো কিছু জায়গায় মেয়ররা নির্বাহী ক্ষমতাও প্রয়োগ করেন না। এ অবস্থায় আমাদের স্থানীয় সরকারগুলো প্রাণবন্ত করতে হলে এর কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের যেসব রাজ্যে সফল স্থানীয় সরকারব্যবস্থা আছে, সেগুলোকে মডেল হিসেবে নিতে পারি আমরা। আমি মনে করি, আমাদের এখানেও কলকাতার মতো </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মেয়র-ইন কাউন্সিল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> পদ্ধতি চালু হোক। কাউন্সিলর ও মেম্বারদের কাছেই মেয়র, চেয়ারম্যানরা জবাবদিহি করবেন। সরকার কাউকে বরখাস্ত করবে না। কাউন্সিলর ও মেম্বারদের আস্থা হারালে মেয়র বা চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হবে। তবে মেয়র, চেয়ারম্যানের পদ হারালেও তিনি কাউন্সিলর অথবা মেম্বার থেকে যাবেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">”</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকাল ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে জাতীয় নির্বাচন একটি, আর স্থানীয় নির্বাচন পাঁচটি। পাঁচটি স্থানীয় সরকারের মধ্যে তিনটির নির্বাচন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা প্রায় সারা দেশে হয়। সিটি করপোরেশন হয় মহানগর এলাকায়। জেলা পরিষদে আসলে কোনো নির্বাচনই হয় না। এখন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের আগে যদি জাতীয় নির্বাচনে যাই, তাহলে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে তা ঝুলে যাবে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো হয় আলাদা আলাদা আইনে। এর কোনো কম্প্রিহেনসিভ সিস্টেম নেই। আমাদের সংস্কারের বড় কাজ হবে একটি সিস্টেম ডেভেলপ করে দেওয়া। এই সিস্টেম করার জন্য এখন মোক্ষম সময়। কেননা বেশির ভাগ স্থানীয় সরকার কিন্তু নেই। কেবল ইউপি আছে। কাজেই ছবি আঁকার এটাই সময়। আমরা যদি সিস্টেম করতে পারি, একটা কম্প্রিহেনসিভ আইন হবে। সেই আইনের মধ্যে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান চলে আসবে এবং একটি তফসিল দিয়ে সবগুলো নির্বাচন করতে পারব।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ড. তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আগের সিটি নির্বাচনে সব আলো পড়েছে মেয়রের ওপর। অন্য স্থানীয় সরকারেও একই অবস্থা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও স্থানীয় সরকারে সরাসরি মেয়র, চেয়ারম্যান নির্বাচন হয় না। কাউন্সিলর ও মেম্বার পদে নির্বাচন হয়। তারা পরিষদে গিয়ে নির্বাহী কমিটি তৈরি করেন। আমরা তেমন সিস্টেম তৈরি করতে চাই। তাহলে নির্বাচনটা অনেক ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী হবে। বেশি লোকবল লাগবে না। একটি হিসাব করে আমি দেখেছি, গত নির্বাচন কমিশনের করা স্থানীয় নির্বাচনে ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ১৯ থেকে ২০ লাখ লোক লেগেছে। ২২৫ দিনের মতো সময় লেগেছে। তাই স্থানীয় নির্বাচনে যদি পার্লামেন্টারি সিস্টেম নিয়ে আসি, তাহলে ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচন একই সিস্টেমে করতে পারব। খরচ নেমে আসবে ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে। লোক লাগবে আট লাখ। সময় লাগবে ৪৫ দিন। এই সিস্টেমে যাওয়ার জন্য অধ্যাদেশ করে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ও এমপিদের ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে সংস্কার কমিশনের ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের কাজ পার্লামেন্ট মেম্বারদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। পার্লামেন্ট মেম্বারদের কাজ হচ্ছে জাতীয় সরকারের কাজগুলো জবাবদিহির মধ্যে আনা। এমপিরা যদি উন্নয়নের কাজ করেন তাহলে তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হবে। তারা জবাবদিহি করাবেন কাকে? সংবিধান অনুযায়ী, এমপিরা ওই কাজ করতে পারেন না।</span></span></span></span></p>