<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সময় তখন সকাল ১১টা। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গামছা কাঁধে বসে আছেন প্রায় সত্তর বছরের এক বৃদ্ধ। নাম-পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, তাঁর নাম আব্দুল কাইয়ুম। তিনি সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত সুরমা নদীরপারের বাসিন্দা। তাঁর গ্রামের নাম দুল্লাপুর। বাবার নাম মৃত তাহের আলী। তিনি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শিমড়াইল এলাকায় ভাড়া থাকেন। কাজের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি অকপটে বলতে শুরু করেন, সেই ১৬ বছর বয়স থেকে পাথর টানার কাজ শুরু। সেই যুদ্ধ আজও চলছে অবিরত। অভাবের সংসার। কাজ করতে গিয়ে পাথরের আঘাতে একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি তিনি। সংসারের অভাবের কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আব্দুল কাইয়ুম আক্ষেপ করে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিদিন পাঁচ শ টাকা আয় করে চাল কিনতে গেলে মাছ কিনতে পারি না। মাছ কিনতে গেলে তেল কিনতে পারি না। এটাই হলো আমাদের জীবন। অসুস্থ হয়ে বিছানায় এক দিন পড়ে থাকলে ঘরে সেদিন আর চুলা জ্বলে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আব্দুল কাইয়ুমের মতো ওই ঘাটেই কথা হয় ৬০ বছরের শফিকুল ইসলাম, হোসেন মিয়া ও কালাম গাজীর সঙ্গে। তাঁরা তুলে ধরেন তাঁদের দুঃখ-কষ্টের কথা। যুগ যুগ ধরে তাঁরা আছেন এই পাথর টানার পেশায়। বয়সের কারণে এখন আর আগের মতো পরিশ্রম করতে পারেন না। তার পরও সংসার চালাতে হয়, নিজেরও ভালো থাকতে হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শীতলক্ষ্যার তীরে পাথর উত্তোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছেন ওই এলাকার প্রায় দুই হাজার মানুষ। পাথর তোলা, ভাঙা ও নামানো-ওঠানোর ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ ও পরিকল্পনার অভাবে প্রাণঘাতী ব্যাধি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিলিকোসিস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ঝুঁকিতে রয়েছেন সেখানকার পাথর শ্রমিকরা। পাথরের উপাদান সিলিকা (স্ফটিকের ধুলা) থেকে এ রোগ হয় বলে একে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিলিকোসিস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলা হয়। শ্রমিকরা হয়তো এ ব্যাপারে কোনো জ্ঞানই রাখেন না। মালিকপক্ষও তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেয় না। পাথর ভাঙার কাজে বায়ুদূষণের মতো সমানতালে চলতে থাকে শব্দদূষণ। এর মধ্যে শ্বাস নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছেন দরিদ্র শ্রমিকরা। ধুলা-বালু থেকে মুক্ত থাকার জন্য তাঁদের কেউ কেউ মুখে গামছা বেঁধে কাজ করেন, তবে অনেকে সেটারও ধার ধারেন না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বন্দরে ভারত ও ভুটান থেকে ট্রাকে করে আনা পাথর ৫০ থেকে ৬০টি ক্র্যাশিং মেশিনে ভেঙে গুঁড়া করছেন শ্রমিকরা। তীব্র বায়ু ও শব্দদূষণের মধ্যে দিনভর কাজ করতে হয় তাঁদের। তাঁদের সারা গায়ে ধুলার আবরণ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম জানান, সিলিকোসিস ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ। এই রোগে আক্রান্তদের শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সর্দি-কাশি, জ্বরসহ শরীর দিন দিন দুর্বল হয় ও ওজন কমে যায়। পাথরভাঙা শ্রমিকরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। মাস্কসহ বিশেষ ধরনের পোশাক পরলে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটির কেন্দ্রীয় কমিটির লেখক কল্যাণ সম্পাদক কবি জামান ভুইয়া জানান, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে নিরাপত্তা সরঞ্জাম অবশ্যই মালিককে সরবরাহ করতে হবে। এসব নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন দায়িত্ব নিলে শ্রমিকরা উপকৃত হবেন। আর এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে শ্রমিকদের মধ্যে একটি বিরাট অংশ সিলিকোসিসসহ ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।</span></span></span></span></p>