<p>মানিকগঞ্জ ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ডায়াবেটিক হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে সাধারণ ও গুরুতর রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরোধের কারণে কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলা ও মামলার ঘটনাসহ সর্বশেষ গত বুধবার থেকে কর্মবিরতি শুরু হওয়ায় হাসপাতালের কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।</p> <p>বুধবার সকাল ৯টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রধান দুটি ফটকে ভেতর থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফটকের সামনে বড় ব্যানারে কর্মবিরতির নোটিশ টাঙানো হয়েছে। ফটকের ভেতরে কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসে আছেন। বাইরে রোগীরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছেন, তবে অনুরোধ করেও তারা ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেন না।</p> <p>এদের একজন মো. সাইজুদ্দিন (৬৫), ঢাকার ধামরাই উপজেলার কালামপুর থেকে এসেছেন। সঙ্গে আছেন স্ত্রী ও ভাতিজি। স্ত্রীর কাঁধে ভর দিয়ে সাইজুদ্দিন এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি নিয়মিত এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়ে আসছেন এবং তার কার্ডও আছে। হঠাৎ করেই গতকাল থেকে ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে গেছে এবং পায়ের ক্ষতেও ব্যথা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বাড়ি থেকে হাসপাতালে আসা-যাওয়ায় প্রায় এক হাজার টাকা খরচ হয়েছে, অথচ তাকে হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।</p> <p>মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বংখুড়ি গ্রাম থেকে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন জোসনা বেগম (৫৫)। তিনি জানান, প্রায় ৩০ মাইল দূর থেকে এসেছেন এবং কিছু পরীক্ষা করাতে হবে। তবে এখন দেখছেন হাসপাতালে আন্দোলন চলছে এবং ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কী করবেন বুঝতে পারছেন না, অথচ শরীর আর চলতে চাইছে না।</p> <p>অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত ৩১ অক্টোবর। সেদিন মুখোশধারীরা হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার ও কর্মচারী নিতাই কুমার সরকারকে মারধর করে। হামলাকারীদের হামলার মুখে হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাসান মাহমুদ আলী পালিয়ে যান। এ ঘটনায় নাজনীন আক্তার মানিকগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় হাসপাতালের কর্মচারী রাসেল, নাজমুল, জুয়েলসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, হামলাকারীরা নাজনীন আক্তারকে শ্লীলতাহানি করে এবং মারধরে নিতাই কুমার গুরুতর আহত হন, যাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।</p> <p>এদিকে এই মামলার প্রতিবাদে এবং হাসপাতালের পরিচালক ডা. হাসান মাহমুদ আলী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাজনীন আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদানের দাবিতে হাসপাতালের ৮৭ জন চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন এবং গত রবিবার মানববন্ধন করেন।</p> <p>এ ব্যাপারে মামলায় আসামি হাসপাতালের কর্মচারী রাসেল বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় আমাদের শত্রুতাপূর্ণভাবে আসামি করা হয়েছে। আমরা অনেক আগেই এই দুই কর্মকর্তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করে আসছিলাম, কিন্তু প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা কর্মবিরতি কর্মসূচি নিতে বাধ্য হয়েছি।’</p> <p>মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আতিকুল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কর্মবিরতিতে অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং তারা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে সম্মত হয়েছেন। তাদের অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।</p>