<p>বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিতে একটি চোখ হারিয়েছে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাহাদ হাসান (১৭)। অন্য চোখটিও ভবিষ্যতে হারিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। এত কিছুর পরও অন্য চোখের আলোয় বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ দেখতে চান নাহাদ।</p> <p>নাহাদ হাসান বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার চোপিনগর ইউনিয়নের চোপিনগর ঠাকুরপাড়া গ্রামের কবির হোসেন ও নাজমা বেগম দম্পতির ছেলে। উপজেলার মাদলা ইউনিয়নের নন্দগ্রাম টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট নাহাদ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অন্যদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিল। বুলেট এসে তার ডান চোখে বিদ্ধ হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক জানান, বুলেটের অংশ চোখের মণি ভেদ করে ভেতরে আটকে আছে। নাহাদের চোখটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।</p> <p>নাহাদ হাসান জানান, ৪ আগস্ট বিকেলে বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় অন্যদের সঙ্গে আন্দোলনের মিছিলে ছিল সে। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়লে তা তার ডান চোখে বিদ্ধ হয়। এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে ১৫ হাজার টাকা দেন। স্থানীয় সংগঠন দেয় ১৯ হাজার টাকা। এ ছাড়া আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে আরো তিন হাজার টাকা সংগ্রহ করে রংপুর চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা চলে। সেখান থেকে ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হয় নাহাদ। ৮ সেপ্টেম্বর তার চোখে অস্ত্রোপচার করানো হয়।</p> <p>নাহাদ হাসান বলে, ‘আমার এক চোখ নষ্ট হয়েছে, তাতে দুঃখ নেই। কয়েক বছরের মধ্যে আরেক চোখও নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে ডাক্তারের কাছ থেকে শুনেছি। শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, অসংখ্য মানুষ পঙ্গু হয়েছে। আমি আমার আরেক চোখ দিয়ে বৈষম্যহীন-দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই।’</p> <p>নাহাদের বাবা রাজমিস্ত্রি কবির হোসেন বলেন, ‘নাহাদকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। বড় হয়ে সে সংসারের হাল ধরবে। মানুষের জন্য কাজ করবে। কিন্তু সেই স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট। এখন নিজেই দেশের বোঝা হয়ে রইল। জানি না মহান আল্লাহ ওর কপালে কী লিখেছেন।’</p> <p> </p> <p> </p>