<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রায় দেড় মাস আগে দুই চোখে অপারেশন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চোখে ঝাপসা দেখি। ব্যানারের বড় লেখাগুলো কাছ থেকে পড়তে পারি, কিন্তু বইয়ের ছোট অক্ষরগুলো এখনো অস্পষ্ট। এ কারণে পড়াশোনাও করতে পারছি না। চোখ ভালো না হলে এইচএসসি পরীক্ষা কিভাবে দেব? আমি পরিবারের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এভাবেই নিজের শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে নরসিংদী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. ইবাত হোসেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে গত ১৯ জুলাই দুই চোখ, মাথাসহ সারা দেহে অন্তত দুই ডজন ছররা গুলি লাগে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইবাত হোসেন বলে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অপারেশন করা হলেও ডাক্তাররা চোখ থেকে গুলি বের করতে পারেননি। তাঁরা জানিয়েছেন, চোখে জেল দেওয়া আছে, এক মাস পর বের করে দেবেন। তবে দৃষ্টিশক্তি আদৌ স্বাভাবিক হবে কি না সেই নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইবাতের চোখে এখনো দুটি ছররা গুলি রয়ে গেছে। শুধু চোখ নয়, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে প্রায় দুই ডজন ছররা গুলি বহন করছে ইবাত। এর মধ্যে মাথায় দুটি, পিঠে ১০টি, হাতে তিনটি, দুই গালে চারটি। এ ছাড়া অন্যান্য স্থানেও কয়েকটি গুলি রয়ে গেছে। আর্থিক সংকট ও জরুরি বিবেচনায় শুধু চোখের অপারেশন করানো হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিন ভাইয়ের মধ্যে ইবাত বড়। বাকি দুই ভাই বিভিন্ন শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। বাবা মো. আলমগীর মিয়া পেশায় ব্যক্তিগত গাড়িচালক। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নরসিংদী শহরে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। গ্রামে নিজের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও সন্তানদের ভালো মানের স্কুলে পড়াশোনা করানোর লক্ষ্য নিয়ে শহরে আসেন তিনি। একজনের আয়ে বাসাভাড়া, সংসার খরচ এবং তিন সন্তানের পড়াশোনার খরচ মেটাতে বেশ হিমশিম খেতে হয়ে তাঁকে। টানাপড়েনের সংসারে ভূমিকা রাখতে বাধ্য হয়েই পড়াশোনার পাশাপাশি একটি দোকানে ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে কর্মচারীর চাকরি নেয় ইবাত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আলমগীর মিয়া বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমি সব দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত। যে পড়াশোনার জন্য আমি শহরে এসেছি, এখন তার লেখাপড়ারও ক্ষতি হচ্ছে। সে আয় করে আমার সংসারের ব্যয়ের একটি অংশ মেটাত। পাঁচ মাস কাজও করেছে। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর সেই কাজও নেই, বরং অসুস্থতার কারণে তার পেছনে বাড়তি খরচ হচ্ছে। আমি ক্ষতির মধ্যেই আছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আর্থিক সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার যে আয় তাতে সঞ্চয়ের কোনো সুযোগ নেই। উন্নত চিকিৎসার জন্য ইবাতকে ঢাকায় নিতে হয়েছিল। আন্দোলনের সময় গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল, অ্যাম্বুল্যান্সও ঢাকা যেতে চায়নি। তখন ৯ হাজার টাকা ভাড়ায় অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে ঢাকায় যেতে হয়েছে। হাসপাতালে একজনের খাবার দেয়। ইবাতকে দেখভাল করতে আমি আর ইবাতের মা হাসপাতালে ছিলাম। আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে চিকিৎসা বাবদ ৭০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। সঞ্চয় না থাকায় এই টাকার জোগাড় করতে বিভিন্ন জায়গায় হাত পাততে হয়েছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>