<p>শরৎকালের আকাশ ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়। শরতের এই চিরন্তন স্বভাবে পরিবর্তন এসেছে। কয়েক দিন ধরে বর্ষাকালের মতো বৃষ্টি ঝরছে রাজধানী ঢাকায়। গতকাল শুক্রবার আশ্বিনের ১২তম সন্ধ্যায়ও নগর ছিল বৃষ্টিভেজা। এদিন ঐতিহ্যবাহী সংগীত সংগঠন ছায়ানট আয়োজন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা-গানের। রবীন্দ্র-প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে ছায়ানট নিবেদন করে প্রকৃতি ও আত্মজয়ের গান। ললিত রাগের সুরে বাজে জাগরণী বাণী।</p> <p>দুটি পাঠ-আবৃত্তি আর ১৫টি একক ও সম্মেলক গানে কবিগুরুকে স্মরণ করে ছায়ানট। গত ২২ শ্রাবণ ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮১তম প্রয়াণবার্ষিকী। প্রথম পরিবেশনায় তাই ছিল শ্রাবণের আবাহন। দাদরা তালে সম্মেলক গান দিয়ে শুরু হয় আয়োজন। শিল্পীরা যখন গাইছিলেন ‘শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে’ তখন শ্রাবণ না হলেও আশ্বিনের শরৎ-সন্ধ্যায় ঝরছিল বর্ষণ। এরপর পর পর ছয়টি একক গান। সুমনা বিশ্বাসের ‘সত্যের আহ্বান’ থেকে একটি নাতিদীর্ঘ পাঠ। এরপর আবারও একক কণ্ঠে ছয়টি রবীন্দ্রসংগীত। তারপর আবার রবীন্দ্রনাথের শিশুতীর্থ থেকে জয়ন্ত রায়ের আবৃত্তি।</p> <p>১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের সূত্র ধরে এই ভূখণ্ডে সূচনা হয়েছিল বিপন্নতায় আপন সত্তা অটুট রাখার এক সাংস্কৃতিক আন্দোলন। তখনই জন্ম হয় ছায়ানটের। জন্মের পর থেকে মূলত রবীন্দ্রনাথ আর কাজী নজরুলের দেশ-ভাবনা আর সৃষ্টিকে অবলম্বন করেই প্রসারিত হয়েছে সংগঠনের কার্যক্রম। বর্তমানে ২৫ বৈশাখের রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীতে ছায়ানট আয়োজন করে দুই দিনের রবীন্দ্র-উৎসব এবং ২২ শ্রাবণের প্রয়াণবার্ষিকীতে গানে-পাঠে করে এক দিনের স্মরণানুষ্ঠান।</p> <p>রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস ২২ শ্রাবণে প্রতিবছর জাতি তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করে। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো কবিকে নিয়ে করে নানা আয়োজন। এবার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে কোনো আয়োজন ছিল না। তাই শ্রাবণের আয়োজন আশ্বিনে করে ছায়ানট। রবীন্দ্র প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে তাদের এ আয়োজন গতকাল শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টায় ছায়ানট মিলনায়তনে।</p> <p>শুরুর সম্মেলক গানের পর একক গান নিয়ে আসেন মাকসুরা আখতার অন্তরা। এক তালে তিনি পরিবেশন করেন ‘ভয় হতে তব অভয় মাঝে’। এ টি এম জাহাঙ্গীর কাহারবা তালে গেয়ে শোনান ‘আপনি অবশ হলি’। সত্যম কুমার দেবনাথ ‘বাঁধন ছেঁড়ার সাধন হবে’, তানিয়া মান্নান ‘আমি মারের সাগর পাড়ি দেব’ এবং অভিজিৎ দাস শোনান ‘নিশি-দিন ভরসা রাখিস’ গানগুলো।</p> <p>সুমনা বিশ্বাস পাঠের পর আবারও একক কণ্ঠে অসীম দত্ত পরিবেশন করেন  ‘তবু, পারি নে সঁপিতে প্রাণ’। আইরিন পারভীন অন্না পরিবেশন করেন ‘তোর আপন জনে ছাড়বে তোরে’। সুর ফাঁকতালে মোস্তাফিজুর রহমান তূর্য পরিবেশন করেন ‘প্রচণ্ড গর্জনে আসিল একি দুর্দিন’। অমী দেবনাথ ‘এই কথাটা ধরে রাখিস’, তাহমিদ ওয়াসীফ ঋভু ‘পিনাকেতে লাগে টঙ্কার’, আজিজুর রহমান তুহিন ‘এখন আর দেরি নয়’ গানগুলো গেয়ে শোনান। শিশুতীর্থের অংশবিশেষ আবৃত্তি করেন জয়ন্ত রায়। তারপর সম্মেলক কণ্ঠে পর পর দুটি সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা। তাঁরা গেয়ে শোনান ‘বুক বেঁধে তুই দাঁড়া দেখি’ এবং ‘ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলে’। আয়োজনটি শেষ হয় সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে।</p> <p>পুরো আয়োজনে যন্ত্রানুষঙ্গে তবলায় ছিলেন সুবীর ঘোষ ও মৃত্যুঞ্জয় মজুমদার। সেতারে ফিরোজ খান, কিবোর্ডে রবিন্স চৌধুরী, মন্দিরায় প্রদীপ কুমার রায়।</p> <p> </p>