<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায়ই গড়ে উঠেছে ২০টি অবৈধ ইটভাটা। ফসলি জমি নষ্ট করে এসব ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। ইটভাটায় পোড়ানো কাঠের কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। অনুমোদনহীন এসব ইটভাটা বন্ধে গত বৃহস্পতিবার এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। শুধু নোয়াখালীর সুবর্ণচর নয়, একইভাবে দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের হাউসপুর গ্রামে স্কুলের সীমানাপ্রাচীর লাগোয়া দুটি ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে। আবার কুড়িগ্রামের চিলমারীতে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হচ্ছে দুটি অবৈধ ইটভাটা। এর মধ্যে একটি থানাহাট ইউনিয়নের ফকিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইন অনুযায়ী, কৃষিজমিতে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইনে বলা আছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে, বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটার এবং ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়কের অন্তত আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। আইন অমান্য করলে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড, অন্যূন ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।  কিন্তু  আইন অমান্য করেই সারা দেশে খেয়ালখুশিমতো চলছে ইটভাটা বাণিজ্য। এ কারণে বেশির ভাগের কোনো ধরনের দণ্ডের মুখোমুখি হতে হয় না। আবার কেউ যদি দণ্ডিত হন, পরে কৌশলে আবারও নতুন করে একই স্থানে গড়ে তোলেন ইটভাটা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা জেলা প্রশাসকদের অনুমোদন ছাড়াই সারা দেশে গড়ে উঠেছে প্রায় পাঁচ হাজার অবৈধ ইটভাটা। ইটভাটার পাশের ঘরবাড়িতে বসবাসকারীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর এসব অবৈধ ইটভাটা পরিচালিত হলেও বন্ধ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উল্টো প্রশাসনকে ঘুষ দিয়েই ইটভাটার মালিকরা এসব ভাটা পরিচালনা করছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে সারা দেশের অবৈধ ইটভাটার তথ্য চেয়েছে মন্ত্রণালয়। সেখানকার সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়ছে, সারা দেশে চার হাজার ৮৩৬টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৭৩৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮০১টি, খুলনা বিভাগে ৯৮১টি, রাজশাহী বিভাগে ৮২৪টি, রংপুর বিভাগে ৭৭৮টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৯২টি, বরিশাল বিভাগে ২০৪টি এবং সিলেট বিভাগে ২৩টি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইনের তোয়াক্কা না করে কিভাবে এত দিন এসব ইটভাটা গড়ে তোলার পর পরিচালিত হচ্ছিল সে প্রশ্ন সবার। বিষয়টি নিয়ে অন্তত ১০ জন ইটভাটা মালিকের সঙ্গে কথা হয় কালের কণ্ঠের। প্রত্যেকে নিজের নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব ইটভাটা পরিচালনা করা হচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁরা আরো জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে বছরে তাঁদের প্রত্যেককে ৪ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষের পেছনে খরচ করতে হয়। যাঁর ইটভাটা যত বড় তাঁর ঘুষের অঙ্কও তত বড়। এর বাইরে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্পন্সর করতে হয়। এসব অনুষ্ঠানের আগে অবৈধ ইটভাটা মালিকদের কাছে টাকা চাওয়া হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁরা আরো জানান, মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালিত হলেও আগে থেকে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়। মূলত উপজেলা ও জেলা অফিসে একটি সিন্ডিকেট আছে। তাদের মাধ্যমেই বিষয়টি ম্যানেজ করা হয়। কখনো উপজেলা অফিসের কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজনকে কম দামে ইট দেওয়া হয়, আবার কখনো বিনা মূল্যে। প্রতিটি জেলায় ইটভাটা মালিকদের সমিতি আছে। এসব সমিতির মাধ্যমে প্রশাসনকে ম্যানেজ করা হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনে (বিবিএমওএ) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়সভা করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সভায় উপদেষ্টা জানান, ইটভাটাজনিত বায়ুদূষণ রোধে নতুন করে আর ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়া হবে না। যেসব ইটভাটা পরিবেশ নষ্ট করছে সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। পার্বত্য এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলো স্থানান্তরের কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই বিভাগে অনেক অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। খবর পেলেই আমরা অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। অনেক ক্ষেত্রে ইটভাটা ভেঙে দেওয়ার পর আবারও ইট পোড়ানো শুরু করে। জনবলসংকটে আমরা প্রতিনিয়ত তদারকি করতে পারছি না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মাদ আব্দুল মোতালিব কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। অবৈধ ইটভাটার ব্যাপারে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অধিদপ্তরের  পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো. জিয়াউল হক কালের কণ্ঠকে  বলেন,  </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সারা দেশ থেকে অবৈধ ইটভাটার তালিকা সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। গুরুত্ব বিবেচনায় এসব ইটভাটা উচ্ছেদের কাজ শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে সব ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ চলছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাহলে কি এত দিন উপজেলা-জেলা প্রশাসনকে ঘুষ দিয়ে ইটভাটা চলছিল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনেক কিছুই ওপেন সিক্রেট।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান বাবুল কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যাঁদের অবৈধ ইটভাটা রয়েছে তাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। আমাদের অবস্থান তাঁদের বিরুদ্ধে। কিভাবে তাঁরা অবৈধভাবে ইট তৈরি করছেন সেই প্রশ্ন আমাদেরও। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই হয়তো তাঁরা এটা করছেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি আরো বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিলেট বিভাগে অনেক ইটভাটা রয়েছে, যার দূরত্ব স্কুল থেকে মাত্র ৩০০ মিটার। এগুলো কিভাবে অনুমোদন পেল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই প্রশ্ন আমাদের।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>