<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উম্মতে মুহাম্মদির সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম হলো নবীজি (সা.)-এর প্রিয় সাহাবিরা, তারপর তাবেঈরা, অতঃপর তাবে-তাবেঈরা। এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত বাকি সব সেলাক, যাঁরা সময় ও সোহবতের দিক থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকটবর্তী তাঁরাই হচ্ছেন নিজ যুগে পরবর্তী প্রজন্মের তুলনায় সবচেয়ে উত্তম প্রজন্ম। এই ধারাবাহিকতায় একসময় এমন লোকদের সময়ে কিয়ামত সংঘটিত হবে, যারা সৃষ্টিজগতের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং আল্লাহ তাআলার ইবাদত থেকে পৃষ্ঠপ্রদর্শনকারী। হাদিস শরিফে এসেছে, মিরদাস আসলামি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, নেককার ব্যক্তিরা একে একে চলে যাবেন। আর অবশিষ্টরা যব ও খেজুরের অব্যবহার্য অংশের মতো পড়ে থাকবে। আল্লাহ এদের প্রতি গ্রাহ্যও করবেন না। (বুখারি, হাদিস : ৬৪৩৪)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই হাদিসের বিশ্লেষণে বিখ্যাত হাদিসবিশারদ ইবনু বাত্তাল (রহ.) বলেন, উল্লিখিত হাদিসে নেককারদের মৃত্যু কিয়ামতের পূর্বাভাসের লক্ষণ বলা হয়েছে। তা ছাড়া এর মাধ্যমে সেলাকদের অনুসরণের প্রতি উৎসাহ এবং তাঁদের বিরুদ্ধাচরণের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। কারণ যারা তাঁদের বিরুদ্ধাচরণ করবে তারা ওই সব লোকের অন্তর্ভুক্ত হবে, যাদের (ভালো-মন্দের) আল্লাহ পরোয়া করেন না। এই হাদিস থেকে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়, শেষ যুগে ভালো মানুষদের বিলুপ্তি ঘটবে। এমনকি খারাপ মানুষ ছাড়া কেউ বাকি থাকবে না। বিপর্যয় এমন পর্যায়ে পৌঁছবে, পৃথিবীর সব আলেম চলে যাবেন, কেবল বাকি থাকবে মূর্খ ব্যক্তিরা। (ফাতহুল বারি)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মূলত উপরোক্ত হাদিসে পৃথিবীতে সৎ ও নিকৃষ্ট লোকদের মূল্যায়ন নিয়ে একটি উপমা পেশ করা হয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছে, সেলাকেদর একের পর এক উঠিয়ে নেওয়া হবে। অর্থাৎ তারা একের পর এক মৃত্যুবরণ করতে থাকবে। একসময় অবস্থা এমন হবে, কোনো সেলাকই পৃথিবীতে আর অবশিষ্ট থাকবে না। বাকি থাকবে শুধু খেজুর ও যবের উচ্ছিষ্টের মতো খারাপ ও নিকৃষ্ট মানুষরা। আর পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী এই নিকৃষ্ট লোকদের খেজুর ও যবের সঙ্গে তুলনা করার কারণ হলো, খেজুর ও যব যখন শুকিয়ে যায় তখন তা তুলে নেওয়া হয় এবং এর উচ্ছিষ্ট সেখানে পড়ে থাকে, যা ঘর ও তার আশপাশকে ময়লা করা ছাড়া অন্য কোনো কাজে লাগে না। তাই মানুষ নিজের  ঘরবাড়ি ও তার আশপাশ এসব ময়লা থেকে পরিষ্কার রাখে। এমনকি এই উচ্ছিষ্টাংশকে ময়লার স্তূপে নিক্ষেপ করে। এতে তাদের কোনো আফসোসও হয় না; বরং ঘর ও আঙিনাকে আবর্জনা থেকে মুক্ত করতে পেরে স্বস্তি লাভ করে। তেমনি নেক ব্যক্তিদের পর আর কোনো মাধ্যম থাকে না, যা বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্কের বন্ধন তৈরি করবে। তখন অজ্ঞতা ও মূর্খতায় নিমজ্জিত নিকৃষ্ট লোকেরা হয় পৃথিবীতে আবর্জনাতুল্য, যাদের প্রতি আল্লাহ রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। এমনকি তাদের কোনো আমলও গ্রহণ করা হবে না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই হাদিসের মাধ্যমে আমাদের জন্য কয়েকটি শিক্ষা রয়েছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১. নেককার বান্দাদের মৃত্যু কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২. এই হাদিসে সৎ ও নেককার বান্দাদের অনুসরণ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং তাঁদের বিরোধিতা থেকে সতর্ক করা হয়েছে। কারণ তাদের বিরুদ্ধাচরণ মানুষকে ওই পাপিষ্ঠদের মধ্যে শামিল করে দেয়, যাদের প্রতি আল্লাহর রহমতের দৃষ্টি থাকবে না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৩. শেষ যুগে শুধু মূর্খ ব্যক্তিরাই অবশিষ্ট থাকবে, যারা ভালো-মন্দের পরিচয় জানবে না। মানুষ তাদেরকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে আরো পথভ্রষ্ট হবে। যেমনটি হাদিসে এসেছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যখন কোনো আলেম অবশিষ্ট থাকবে না তখন লোকেরা মূর্খদেরকেই নেতা বানিয়ে নেবে। তাদের জিজ্ঞেসা করা হলে না জানলেও ফতোয়া প্রদান করবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">(বুখারি, হাদিস : ১০০)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেলাকদের সংস্পর্শে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।</span></span></span></span></p>