<p>সংকটে থাকা চার ব্যাংককে ৯৪৫ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে ঋণ হিসেবে এই সহায়তা দিয়েছে শক্তিশালী কয়েকটি ব্যাংক। এই ঋণ সহায়তার গ্যারান্টার বাংলাদেশ ব্যাংক। ধারের এসব অর্থ ব্যবহারে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এর মধ্যে গ্যারান্টি সুবিধায় পাওয়া অর্থ দিয়ে ব্যাংকের সাবেক বা বর্তমান পরিচালকদের নামে-বেনামে রাখা আমানত পরিশোধের নিষেধাজ্ঞা অন্যতম। একই সঙ্গে তাদের অনুকূলে নতুন করে কোনো ঋণ দেওয়া যাবে না। গ্যারান্টি থাকা অবস্থায় বা গ্যারান্টির বিপরীতে কোনো দায় পরিশোধ না হলে নগদ লভ্যাংশও দেওয়া যাবে না।</p> <p>বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে যেসব ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে, সেগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় তারল্য সহায়তা দিয়েছে। প্রথম ধাপে ৯৪৫ কোটি টাকা ধার পেয়েছে চার ব্যাংক। এতে সুদের হার ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ। ব্যাংকগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক। ধারের এসব অর্থ ব্যবহারে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু শর্ত দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গ্যারান্টির অর্থে নতুন কোনো ঋণ বা বিনিয়োগ করা যাবে না। বিদ্যমান ঋণ বর্ধিত করা যাবে না এবং আগের কোন ঋণ অনুমোদন হয়েছে, তবে তা ছাড় করা হয়নি, এমন ঋণও বিতরণ করা যাবে না। এই অর্থ দিয়ে ব্যাংকের বিদ্যমান কোনো আন্ত ব্যাংক দায় বা প্লেসমেন্টের অর্থ পরিশোধ করা যাবে না। একই সঙ্গে গ্যারান্টির আওতায় পাওয়া অর্থ গ্যারান্টি স্কিমে অন্তর্ভুক্ত ব্যাংকে আমানত করা যাবে না। এ ছাড়া অন্য ব্যাংকের ঋণ বা বিনিয়োগ অধিগ্রহণ করতে পারবে না, ডলার কেনার কাজে খরচ করা যাবে না এবং পরিচালনা ব্যয় আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশের বেশি বাড়ানো যাবে না। এই অর্থ দিয়ে নতুন আমানত, বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঋণাত্মক দায় পরিশোধ, সিআরআর ও এসএলআর দায় পরিশোধের পাশাপাশি গ্রাহকের আমানতের দায় পরিশোধ করতে হবে।</p> <p>জানা যায়, এখন পর্যন্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৩০০ কোটি টাকা ধার পেয়েছে। এর মধ্যে সিটি ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা এবং এমটিবি ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা করে দিয়েছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে ৩০০ কোটি টাকা দিয়েছে সিটি ব্যাংক ও এমটিবি দিয়েছে ৫০ কোটি টাকা। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ২৫ কোটি টাকা দিয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংক পেয়েছে ২৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সিটি ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা, এমটিবি ৫০ কোটি টাকা ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০ কোটি টাকা দিয়েছে।</p> <p>কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে গ্যারান্টির বিপরীতে যে টাকা ধার নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে তার ২৫ শতাংশ তারা প্রথম ধাপে পেয়েছে। এতে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে আর টাকা ধার দেওয়া হবে না। তখন কৌশল পরিবর্তন করা হবে।</p> <p>অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এরই মধ্যে পরিবর্তন করা হয়েছে। এর সব কটি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ও নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার আত্মগোপনে চলে যান। এরপর গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। তিনি যোগ দিয়েই ব্যাংক খাতের সংস্কারে মনোযোগ দেন।</p> <p>যেসব ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণহীন ছিল, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ বদলে দেওয়া হয়। একে একে ১১টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেন নতুন গভর্নর।</p> <p> </p>