<p>বাংলাদেশের নগর এলাকার পরিকল্পনা ও উন্নয়নকে টেকসই এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য নগরকে বাসযোগ্য করতে আমাদের তরুণদের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ভাবনায় আরো ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব বসতি দিবস এর এই বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘তরুণদের সম্পৃক্ত করি, উন্নত নগর গড়ি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়বার চেতনার বাস্তবায়নে এই প্রতিপাদ্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।</p> <p>রবিবার (৬ অক্টোবর) বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে আইপিডির এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।</p> <p>বিবৃতিতে বলা হয়, তরুণদের নির্মোহ ভাবনা ও সমাজের বৃহত্তর কল্যাণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারলে নতুন বাংলাদেশের সকল নগর এলাকায় নাগরিক সুবিধাদি সুষমভাবে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। </p> <p>এক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণের বিভিন্ন পর্যায়ে তরুণদের যথাযথ সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র ও সরকারকে প্রয়োজনীয় নীতি ও কাঠামো ঠিক করবার দাবি জানাচ্ছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।</p> <p>এতে আরো বলা হয়, আমাদের নগর এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এলাকাবাসী এবং জনগণের অংশগ্রহণ, বিশেষত তরুণদের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত দুর্বল। কয়েক দশক আগেও এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংঘ এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখত। ইতিপূর্বে সরকার ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান তরুণদের এবং এলাকাবাসীর মতামতকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিত। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে নগর এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায় কমিউনিটির সম্পৃক্ততা ও অংশগ্রহণ দুর্বল হয়ে পড়েছে। </p> <p>একইসঙ্গে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন নগর এলাকায় নাগরিক সুবিধাদির পরিমাণগত ও গুণগত মান দুর্বল হয়ে পড়েছে। নগরের মধ্যেই উচ্চ আয়ের ও নিম্ন আয়ের এলাকার মধ্যে নাগরিক সুবিধাদি ও বাসযোগ্যতার বৈষম্য প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। নিম্ন আয়ের লোকদের অনেকেই মানহীন আবাসনে কিংবা বস্তি এলাকায় বসবাস করছে। খেলার মাঠ, পার্ক, লাইব্রেরি, কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধাদি অপ্রতুল। যানজট ও জলাবদ্ধতা নগর এলাকার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দেখা দিয়েছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় নগর এলাকার সমস্যার এলাকাভিত্তিক এবং চাহিদাগত ভিন্নতাও রয়েছে।</p> <p>নগরায়নের এই সকল সমস্যা সমাধানে বাহির থেকে নিয়ে আসা কৌশল বা বিদেশি মডেল অনেক সময়েই আমাদের আর্থ-সামাজিক ও পরিকল্পনাগত বাস্তবতায় অকার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আমাদের নগর এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে স্থানীয় বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে সক্ষম আমাদের তরুণদের ভাবনা ও আইডিয়াকে কাজে লাগানো প্রয়োজন বলে মনে করে আইপিডি। এক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারণ, সিটি কর্পোরেশন ও পৌর এলাকার উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় তরুণদের কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করতে পারলে বৈষম্যহীন নগরায়ন ও নগর উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।</p> <p>একইসঙ্গে নগর এলাকার খেলার মাঠ, পার্ক, উদ্যান, খাল, জলাশয় প্রভৃতির দখল রোধ এবং পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে তরুণদের সহ এলাকাবাসীকে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে আমাদের কিশোর-তরুণদের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন নগর সংস্থাসমূহের প্রাতিষ্ঠানিক সংযোগ তৈরি করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে এলাকাবাসীর নিকট সিটি কর্পোরেশন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা পরিষদ, পৌরসভাসহ অন্যান্য নগর সংস্থাসমূহের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। </p> <p>একইসঙ্গে নগর এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, খাল-জলাশয় দখল-দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পাড়া-মহল্লাভিত্তিক বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সেগুলোর কার্যকর সমাধানসহ সবার জন্য মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করতে পেশাজীবিদের বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাবনা দিয়েও সহযোগিতা করতে পারে তরুণেরা। বৈষম্যহীন নগর গড়ে তোলা এবং সবার জন্য মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করতে তরুণদের সম্মিলিত উদ্যম ও প্রাণশক্তিকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর জন্য অন্তর্বর্তী সরকারসহ বিভিন্ন নগর সংস্থাসমূহের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আহবান জানাচ্ছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।</p>