<p>অর্থসংকটে আগের অর্থবছরের মতো নতুন অর্থবছরেও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থবিরতা কাটেনি। গতানুগতিক প্রতিবছরের মতোই সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে। গত জুন মাসেও যেখানে অর্থবছরের সর্বোচ্চ এডিবি বাস্তবায়ন হয়, সেখানে পরের মাস জুলাইয়ে যে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে তা ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই মাস বাদে গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অর্থবছরের শুরুতে পেপার ওয়ার্কের কাজগুলো করা হয়, এ জন্য বাস্তবায়ন কম হয়।</p> <p>গত অর্থবছরের এডিপি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদায়ি ২০২৩-২৪ অর্থবছরজুড়েই অর্থসংকটে এডিপি বাস্তবায়নে ছিল মন্থরগতি। নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও বাস্তবায়নে কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। কিন্তু শেষ মাসে এসে উল্লেখযোগ্যহারে বেড়েছে এডিপি বাস্তবায়ন হার। কিন্তু তাতেও সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়নের রেকর্ড এড়ানো সম্ভব হয়নি। বরং প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং পর্যাপ্ত অর্থছাড় না হওয়ার কারণে সদ্য বিদায়ি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হার নামে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৮০.৯২ শতাংশ। এমনকি করোনার সময় ছাড়া এর আগে কখনো এত কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়নি।</p> <p>পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরের শুধু জুন মাসে যেখানে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৩.৩৮ শতাংশ কাজ হয়েছে আর ব্যয় হয়েছে ৫৯ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। সেখানে জুলাইয়ে কাজ হয়েছে মাত্র ১.০৫ শতাংশ। আর খরচ হয়েছে দুই হাজার ৯২২ কোটি টাকা। গত ১০ বছরে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন চিত্রের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।</p> <p>অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বছরের শুরুতে অবহেলার কারণে বছর শেষে তড়িঘড়ি করে এডিপি বাস্তবায়নের প্রবণতা থাকে। এতে প্রকল্পের গুণগত মান রক্ষা করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। নির্ধারিত সময়ে কাজ না হওয়ায় অনেক সময় প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বেড়ে যায়।</p> <p>অর্থবছরের শুরুতে কাজ কম হওয়ার বিষয়ে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, অর্থবছরের শুরুতে সাধারণত প্রকল্পের সারা বছরের কাজের পরিকল্পনা নিতে হয়। বিভিন্ন ধরনের পেপারওয়ার্ক থাকে। টেন্ডারের বিষয় থাকে, ক্রয় প্রস্তুতির বিষয় থাকে। এসব কাজে তো তেমন অর্থ খরচ হয় না। এসব কারণে অর্থবছরের শুরুতে কাজ হলেও অর্থ ব্যয় না হওয়ায় এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যায়।</p> <p>এডিপি বাস্তবায়নের বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আগে থেকে প্রস্তুতি না নিয়ে বাজেট পাস হওয়ার জন্য বসে থাকে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো। পাসের পর বিভিন্ন পেপারওয়ার্ক, টেন্ডারিং, অনুমোদন—এসব করতেই বছরের অর্ধেক চলে যায়। তারপর দেখা যায়, বছরের শেষে তাড়াহুড়া করে কাজ করে। তখন কাজের মান খারাপ হয়, তদারকি থাকে না। ফলে ব্রিজ করলে দেখা যায় তিন মাস পরই ভেঙে পড়ে। রাস্তা করলে দুই মাস পর ঢালাই উঠে যায়।</p> <p>গত কয়েক বছরের জুলাইয়ের আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ১.২৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ০.৯৬ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১.১৪ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১.৫২ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১.৮৪ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ০.৫৭ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ০.৯৩ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ০.৫৬ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ শতাংশ, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ শতাংশ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ২ শতাংশ। অর্থাৎ কোনো অর্থবছরই ২ শতাংশের বেশি কাজ হয়নি।</p> <p>এদিকে গত কয়েক অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের চিত্রে দেখা যায়, পুরো অর্থবছরের এক-তৃতীয়াংশ কাজই হয়েছে জুন মাসে। তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুন মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২৩.৩৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২২.৪৪ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৭.৯০ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৩.৭৫ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৩.০২ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৬.৬৯ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩১.২২ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৫.০৫ শতাংশ এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৩১ শতাংশ।</p> <p>চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সরকার দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছে। এডিপিতে মোট এক হাজার ৩৫২টি প্রকল্প রয়েছে। এবারের এডিপিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য বরাদ্দ ৩৭ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জন্য ৩০ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য ৩৩ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য ১১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৩ হাজার ১২৫ কোটি টাকা।</p> <p> </p>