<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা <strong>আলী ইমাম মজুমদার।</strong> খাদ্যপণ্যের বর্তমান পরিস্থিতি এবং এ ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে সম্প্রতি কালের কণ্ঠকে অনেক কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বিশেষ প্রতিনিধি <strong>উবায়দুল্লাহ বাদল</strong></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left">কলের কণ্ঠ : বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী বলে মনে করছেন? এর মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ কী?</p> <p>খাদ্য উপদেষ্টা : খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার বেশ কিছু কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন—আসন্ন আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণভাবে ১০ লাখ টন ধান-চাল কেনা হবে। বেসরকারি পর্যায়ে আরো প্রায় ছয় লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক লাখ টন গম কেনা হবে। এ জন্য আমদানি শুল্ক তুলে দেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে তেমন সমস্যা হবে না। বড় ধরনের কোনো আশঙ্কা নেই।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : সরকারি গুদামে খাদ্যপণ্যের মজুদ কেমন?</p> <p>খাদ্য উপদেষ্টা : এ মুহূর্তে সরকারি গুদামে খাদ্যপণ্য মজুদ আছে ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৪০৮ টন। এর মধ্যে চাল সাড়ে সাত লাখ টন এবং গম চার লাখ ২৮ হাজার ৩৩৫ টন। বাকি খাদ্যপণ্যের মধ্যে ধান মজুদ রয়েছে। গত বছর এই সময়ে খাদ্যপণ্য মজুদ ছিল ১৪ লাখ চার হাজার টন। এর মধ্যে চাল ছিল ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫৪ টন এবং গম ছিল এক লাখ ৫৬ হাজার ২৩৫ টন। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় খাদ্যপণ্য মজুদ দুই লাখ ১৮ হাজার ২৭৭ টন কম।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : মজুদ পরিস্থিতি নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট কি না?</p> <p>খাদ্য উপদেষ্টা : এটি সন্তোষজনক বলা যাবে না, আবার ঝুঁকিপুর্ণ বলাও ঠিক হবে না। মজুদ আরো বাড়ানো দরকার। এ ব্যাপারে আমাদের বেশ কিছু উদ্যোগ রয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ টন চাল-গম কেনার চুক্তি হয়েছে। এ জন্য দুটি জাহাজের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন চাল কেনার টার্গেট আছে। তা পুরণ হবে বলে আশা করছি। পাশাপাশি আমদানি করা যেসব চাল-গম পাইপলাইনে আছে সেগুলো শিগগিরই আমরা পেয়ে যাব। এ ছাড়া সম্প্রতি বন্যায় ফসলের যে ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল, কৃষি বিভাগ জানিয়েছে তা হবে না। আশা করি মজুদ সমস্যা থাকবে না। বড় ধরনের কোনো আশঙ্কা এ মুহূর্তে করছি না।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : খাদ্য মজুদ ভাণ্ডার বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?</p> <p>খাদ্য উপদেষ্টা : অবশ্যই আছে। এ দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের জমির পরিমাণ কমে যাওয়া এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কম থাকায় প্রায় ১৮ কোটি মানুষের জন্য খাবার নিশ্চিত করা সরকারের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমাদের মজুদ ভাণ্ডার বাড়াতে হবে। এখন ২২ লাখ টন খাদ্য মজুদের সক্ষমতা আছে। এটাকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টনে নিয়ে যাওয়া হবে। খাদ্য মজুদের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি খুব বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছি। এ জন্য বিদেশি দাতা সংস্থার সহযোগিতাও আমরা পাচ্ছি।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : খাদ্যপণ্য মজুদে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?</p> <p>খাদ্য উপদেষ্টা : দেশে সাতটি সাইলো গুদাম নির্মাণাধীন রয়েছে। এগুলোর প্রতিটিতে প্রায় ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য রাখা যাবে। এর মধ্যে দু-একটি সাইলো গুদাম এমন জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে, এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। আগের সরকারের একজন মন্ত্রীর ইচ্ছায় টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি সাইলো নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে মালপত্র আনা-নেওয়ার খরচ অনেক বেশি হবে। দাতাগোষ্ঠী ও সরকারি কর্মকর্তারাও রাজি ছিলেন না। সাধারণত এসব সাইলো নির্মাণ করা হয় নদীপারে বা যেখানে ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু টাঙ্গাইলের পশ্চিমে যমুনা নদী থাকলেও সাইলোটি এমন জায়গায় করা হয়েছে, সেখানে ট্রাক ছাড়া অন্য কোনো বাহনে মালপত্র পরিবহন করা যাবে না। ময়মনসিংহেও প্রায় একই অবস্থা। ময়মনসিংহ সাইলোতে পরে রেলপথ টানা হয়েছে। এগুলো ব্যবহারযোগ্য হলে মজুদ বাড়ানোর সুযোগ হবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : দেশে বর্তমানে চাল-গমের চাহিদা কেমন? ঘাটতি পূরণে কী পরিমাণ আমদানি হচ্ছে?</p> <p>খাদ্য উপদেষ্টা : আমাদের বছরে তিন কোটি ৭৫ লাখ টন চাল এবং ৭০ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। উদ্যমী কৃষক ও সরকারের সহায়তায় চাল উৎপাদনে দেশ প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হলে চালের ঘাটতি দেখা দেয়। তখন আমদানি করে খাদ্যঘাটতি মেটানো হয়। চলতি বছর ১০ লাখ টন গম উৎপাদন হয়েছে। ফলে বাকি ৬০ লাখ টন আমদানি করতে হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের বড় নেটওয়ার্ক আমদানি কাজে যুক্ত আছে। খাদ্যপণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে চাল ও গমসহ কয়েকটি পণ্য আমদানির জন্য সরকার কর ও শুল্ক তুলে নিয়েছে। এতে বেসরকারি আমদানিকারকরা উৎসাহিত হচ্ছেন। আবার টাকা থাকলেও অনেক সময় চাল-গম মেলে না। অনেক দেশ কথা দিয়েও শেষ পর্যন্ত চাল-গম দেয় না—এমন নজিরও আছে। তাই আমাদের বিকল্প পথও খোলা রাখতে হয়। কোনো কারণে প্রতিশ্রুত চাল-গম না পাওয়া গেলে বিকল্প উৎস থেকে সেটা পূরণ করতে হয়।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।</p> <p>খাদ্য উপদেষ্টা : কালের কণ্ঠকেও অনেক ধন্যবাদ।</p> <p style="text-align:left"> </p>