<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার এবং ছাত্র-জনতার সরকার পতনের আন্দোলনে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক কাজে বসার প্রথম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রসিকিউশনের আবেদনে এই পরোয়ানা দেন আদালত। পরোয়ানা কার্যকর করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে ১৮ নভেম্বরের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><img alt="হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা" height="225" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/18-10-2024/Untitled-1 (1).jpg" style="float:left" width="313" />ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। পতনের পর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়েছে ছাত্র-জনতা। আন্দোলনে কমপক্ষে দেড় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আহত হয়েছেন হাজারো মানুষ। নজিরবিহীন এই হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার ঘোষণা দেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৪ আগস্ট তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নবনিযুক্ত অতিরিক্ত বিচারক মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান করা হয়। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই বিচারক হলেন হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী। নিয়োগের পরদিন দায়িত্ব নিয়ে গতকাল সকাল সোয়া ১১টায় প্রথম বিচারিক কাজে বসেন ট্রাইব্যুনাল। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিচারিক কাজের প্রথম দিনই প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দুটি আবেদন করা হয়। দুটি আবেদনই আদালতে উপস্থাপন করে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর (প্রধান কৌঁসুলি) মো. তাজুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম ও বি এম সুলতান মাহমুদ।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিচারিক কাজের শুরুতেই চিফ প্রসিকিউটর আদালতকে মামলার আবেদন পড়ে শোনান। এ সময় আওয়ামী শাসনের দেড় দশকে সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনী, ২০০৮ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন ঘটনায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার পরিসংখ্যান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ নিবর্তনমূলক বিভিন্ন আইনের হয়রানিমূলক মামলার পরিসংখ্যান, ক্ষমতার দেড় দশকে অর্থপাচারের পরিসংখ্যান এবং ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বল প্রয়োগ, খুন, হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের  তথ্য তুলে ধরেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এরপর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন উপস্থাপন করে তাজুল ইসলাম শুনানিতে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আসামির বিরুদ্ধে তদন্তে গণহত্যার প্রাথমিক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি প্রভাবশালী। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানে আসামির লোকজন বিভিন্ন অবস্থানে আছে। তাই আলামত নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া যেসব অভিযোগে মামলার আবেদন হয়েছে, সেসব অভিযোগের তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করছি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শুনানিতে আদালত শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তাঁর অবস্থান সম্পর্কে রাষ্ট্রের কোনো বক্তব্য আছে কি না জানি না। শুধু এটুকু জানি তিনি পলাতক। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তারপর আদালত চিফ প্রসিকিউটরের আবেদন মঞ্জুর করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একইভাবে দ্বিতীয় আবেদন উপস্থাপন করে চিফ প্রসিকিউটর ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আরজি জানালে ট্রাইব্যুনাল সেই আবেদনটিও মঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। দ্বিতীয় আবেদনটি উপস্থাপন করতে গিয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম শুনানিতে ৪৫ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জুনাইদ আহমেদ পলক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক প্রধান হাবিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ, পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় কুমার সাহা, র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, শিক্ষক-লেখক জাফর ইকবালের নাম উল্লেখ করেন।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এরপর আদালত ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে তা কার্যকর করতে নির্দেশ দেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এই আদেশের পর চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে পরিচালিত হত্যা, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ যাঁরা করেন, তাঁদের শীর্ষে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছিল। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১৮ নভেম্বর তারিখ রেখে এই সময়ের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দিয়েছেন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন সম্পর্কে তাজুল ইসলাম বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এই আবেদনটিও মঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। অভিযোগের তদন্ত এবং গ্রেপ্তার নিশ্চিত করতে এই নামগুলো প্রকাশ করছি না। যে কটি নাম শুনানির সময় আদালতে উল্লেখ করেছি, সেই কটা নাম প্রচার-প্রকাশ করা যাবে। তাঁদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এক প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমাদের আরজি ছিল যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, তাঁদের নাম গোপন রাখার জন্য। আদালত আমাদের অনুমতি দিয়েছেন নাম গোপন রাখতে। সুতরাং এটি একটি বিচারিক আদেশ। আদালতের আদেশ কার্যকর করার স্বার্থেই বাকি নামগুলো প্রকাশ করা যাবে না।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে কেউ যদি অন্য মামলায় গ্রেপ্তার থাকেন, তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>