<p style="text-align:justify">নেপালের ক্রিকেটে দিনকে দিন জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। সাবেক অধিনায়ক পরশ খাড়কা এখন দায়িত্ব পালন করছেন দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক পদে। নেপালের ক্রিকেটের হালচাল নিয়ে নেপালের সাবেক অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলেছেন কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক রানা শেখ।</p> <p style="text-align:justify">প্রশ্ন: আপনার দিনকাল কেমন যাচ্ছে?</p> <p style="text-align:justify">পরশ খাড়কা: এই মুহূর্তে নেপাল প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় পার করছি। নেপাল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন চেষ্টা করছে, এমন একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে, যেখানে তরুণ ক্রিকেটাররা মেলে ধরতে পারবে, যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই লিগে আমরা বিশ্বের কিছু সেরা খেলোয়াড়কে যুক্ত করতে চাই। প্রথম সিজনেই এটা নিয়ে যেন আলোচনায় থাকে, বিশ্বের নামি কিছু তারকা থাকে সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। আট দল নিয়ে হবে এই লিগ। সবগুলো দলের কর্ণধারই নেপালের স্থানীয়। এটা খুবই ভালো শুরু হতে যাচ্ছে। এটাই আমাকে ব্যস্ত রাখছে।</p> <p style="text-align:justify">প্রশ্ন: এখন পর্যন্ত কোন কোন বড় তারকার খেলা নিশ্চিত হয়েছে?</p> <p style="text-align:justify">পরশ খাড়কা: নিউজিল্যান্ডের জিমি নিশাম একটি দলের সঙ্গে চুক্তি করেছে ইতোমধ্যে। এছাড়া নামিবিয়া, ওমানের অধিনায়ক, স্কটল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসের বেশ কিছু ভালো ক্রিকেটার ইতোমধ্যে সাইন করেছে। প্রথমবার বলে বোঝা যাচ্ছে না আমরা কাকে কাকে পাব। খেলোয়াড়দের ফ্রি থাকার ব্যাপারটাও দেখতে হচ্ছে। কেননা, এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগ চলছে। যে কারণে অনেক নামিদামি  ক্রিকেটারকে পাব না। পাঁচ মাস আগে যখন লিগ শুরুর দিন (১৩ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর) চূড়ান্ত করি তখন ভেবেছিলাম অনেককেই পাব। কিন্তু এখন দেখছি অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় ব্যস্ত খেলা নিয়ে। এরপরও আশা করছি, অনেক তারকাই এখানে খেলতে আসবে।</p> <p style="text-align:justify">প্রশ্ন: বাংলাদেশের সাইফুদ্দিনের খেলার কথা আছে এখানে...</p> <p style="text-align:justify">পরশ খাড়কা: আমার জানা মতে, অফিসিয়ালি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তাদের (দলের সঙ্গে) মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে। গভর্নিং কাউন্সিল যখন অফিসিয়ালে জানতে পারবে, ফ্র‍্যাঞ্চাইজি জানাবে তখনি এটা অ্যাপ্রুভ হবে। এছাড়া ইমরুল কায়েসও আসতে পারে খেলতে।</p> <p style="text-align:justify">প্রশ্ন: নেপাল ক্রিকেটের কাঠামো কেমন?</p> <p style="text-align:justify">পরশ খাড়কা: এই মুহূর্তে আমাদের দুটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আছে। একটি টিউ গ্রাউন্ড (ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম)। এখানেই সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়ে থাকে। ২০২২ সালে আমরা আরেকটি আন্তর্জাতিক মাঠ তৈরি করি। যেটার নাম মুলপানি ক্রিকেট গ্রাউন্ড। অনেক দিন ধরেই এই মাঠে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হচ্ছে। মাঠের কন্ডিশন অনেক উন্নত করা হয়েছে। সরকার অনুদান দিয়েছে। আমরা মাঠের উন্নতির জন্য নানাভাবে কাজ করছি। </p> <p style="text-align:justify">প্রশ্ন: স্পন্সর কোম্পানি কেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে?</p> <p style="text-align:justify">পরশ খাড়কা: নেপালের কিছু কম্পানির বেশ আগ্রহ আছে। নেপাল প্রিমিয়ার লিগের জন্য কিছু কোম্পানি স্পনসর করতে চায়। যদিও এখনো টুর্নামেন্ট শুরুর অনেক দিন বাকি। বড় পরিসরে আমরা প্রচারণা শুরু করব এটা নিয়ে।</p> <p style="text-align:justify">প্রশ্ন: আপনার ক্রিকেট জীবনে ফেরা যাক। মাত্র ১৫ বছর বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল আপনার। সেই গল্প যদি বলতেন?</p> <p style="text-align:justify">পরশ খাড়কা: ২০০৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ হয়েছিল বাংলাদেশে। আমার এখনো মনে আছে। চট্টগ্রামে সেবার আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছিলাম। আমি তখন মাত্র ১৫ বছর ৬ মাস বয়সের একজন কিশোর। সবেমাত্র ক্লাস টেনে পড়ছি। যখন আমি ক্রিকেট শুরু করি, তখন কোনো চিন্তাই ছিল না নেপালের হয়ে ক্রিকেট খেলব। এরপর আমি নেপালের হয়ে তিনটি অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপ খেললাম, ২০০৪, ২০০৬ এবং ২০০৮। অভিজ্ঞতাই আমাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো করার সাহস জুগিয়েছে। আত্মবিশ্বাস পেয়েছি সেখান থেকেই। এরপর ২০০৯ সালে নেপালের অধিনায়ক হলাম। প্রায় দশ বছর আমি অধিনায়কত্ব করেছি। নেপালকে ডিভিশন ফাইভ থেকে ওয়ানডে স্ট্যাটাস এনে দেওয়ার সাক্ষী হতে পেরেছি। যখন আমি এসব ভাবি, তখন মনে হয় অবিশ্বাস্য সময় ছিল আমার জন্য। দুই দশক ক্রিকেট খেলার পর এখন এক বছর ধরে ক্রিকেট প্রশাসনেও কাজ করছি। সেই জায়গা থেকেই এখন নেপালকে ক্রিকেট জাতি হিসেবে এগিয়ে নেওয়ার কাজটা করছি। ক্রিকেটই এখন নেপালের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, সমর্থকরা ক্রিকেট দেখতে আসছে, সরকার সাহায্য করছে। এসব কিছু মিলিয়েই নেপাল এগিয়ে যাচ্ছি। আমি স্বপ্ন দেখি, নেপাল টেস্ট স্ট্যাটাস পাবে একদিন।</p> <p style="text-align:justify">প্রশ্ন: অভিষেকের অনুভূতি কেমন ছিল?</p> <p style="text-align:justify">পরশ খাড়কা: অনুভূতি ছিল নার্ভাস। প্রতিটি ম্যাচের আগে একজন ক্রিকেটার নার্ভাসই থাকে। আমার মাথায় শুধু ঘুরপাক খেতো, যেভাবেই হোক দলকে জেতাতে হবে। ২০০৪ সালে যখন আমার সিনিয়র দলে অভিষেক হলো, তখন আমি জানতাম না কতদূর যাব। পরের টুর্নামেন্টে কেমন করব সেটা নিয়েই শুধু ভাবতাম। তরুণ ক্রিকেটারদের আমি বলি যে, যখন তুমি ক্যারিয়ার শুরু করবে তখন দলে থাকব কিনা, রান করব, উইকেট পাব, ক্যাচ ধরব; যদি এভাবে চিন্তা করো তাহলে অনেকসময় তুমি ভালো নাও করতে পারো।</p> <p style="text-align:justify">প্রশ্ন: নেপালের এই দল নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী? </p> <p style="text-align:justify">পরশ খাড়কা: ১৯৯৯ সালে কাঠমাণ্ডুতে বাংলাদেশ ও নেপাল খেলেছিল। বাংলাদেশ সে বছরই টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে যায়। আমরা সবসময় আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। সেই আফগানিস্তানও একজন টেস্ট খেলুড়ে দেশ। এখন আমাদের পরের ধাপ হচ্ছে, আইসিসির পূর্ণ সদস্য হওয়া। আমাদের দলটা তরুণ। সীমাবদ্ধতার মধ্যেই অনেক ভালো করছে। কাঠামোগত দিক দিয়ে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, নেপাল ক্রিকেট অনেক দূর এগিয়ে যাবে।</p> <p style="text-align:justify">প্রশ্ন: আপনাকে নেপালি টেন্ডুলকার নামে ডাকা হয়। কেমন লাগে?</p> <p style="text-align:justify">পরশ খাড়কা: শচীন টেন্ডুলকারের মতো একজন গ্রেটের সঙ্গে নিজের তুলনা করতে চাই না। সে ক্রিকেটের কিংবদন্তি। নেপালে ক্রিকেট খেলে যে সম্মান পেয়েছি তা সত্যি অসাধারণ অনুভূতি দেয় আমাকে।</p> <p style="text-align:justify">প্রশ্ন: বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন?</p> <p style="text-align:justify">পরশ খাড়কা: আসলে টেস্ট খেলুড়ে দেশ এবং সহযোগী দেশের মধ্যে পার্থক্য অনেক। বাংলাদেশ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে। আমার জানা মতে, বাংলাদেশ ফুটবল প্রেমীদের দেশ ছিল। সেখানে এখন ক্রিকেটের জাগরণ হয়েছে। </p> <p style="text-align:justify">প্রশ্ন: বাংলাদেশের সঙ্গে সিরিজ খেলার কোনো সুযোগ দেখেন?</p> <p style="text-align:justify">পরশ খাড়কা: আশা করছি, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলব আমরা। আমাদের সুযোগ সুবিধা ততটা ভালো না হলেও আমরা তো বাংলাদেশে গিয়ে খেলতে পারি, বিশ্বের যেকোনো দেশে গিয়ে খেলতে পারি। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো লড়াই করেছিল নেপাল। আমরা চাই, বাংলাদেশের মতো দলের সঙ্গে আরো বেশি ম্যাচ খেলতে। বাংলাদেশের বোর্ডকে আমাদের পাশে চাই।</p>