<article> <p>ওর্লি এলাকার খান আব্দুল গাফফার রোডের শত বাড়ির মাঝখানে ‘স্পোর্টস ফিল্ড’কে আলাদা করে নেওয়া কঠিনই। এই ইংরেজি শব্দের আক্ষরিক বাংলা করলে অবশ্য ভুল করবেন। এটি খেলার মাঠই নয়। সমুদ্রের দিকে মুখ করে থাকা ৯ তলা অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের এমন নামও অপ্রাসঙ্গিক নয়।</p> </article> <article>এখানেই যে ভারতীয় ক্রিকেটের এক রত্নভাণ্ডার সংরক্ষিত আছে। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া জমিতে তিলে তিলে গড়ে তোলা এই এক ভবনেই বাসা ভারতের চার-চারজন সাবেক অধিনায়ক—সুনীল গাভাস্কার, দিলীপ ভেংসরকার, রবি শাস্ত্রী ও অজিত ওয়াদেকারের। এঁদের মধ্যে শেষেরজনকে মজা করে বলতে শোনা যায়, ‘সুনীলের চেয়ে একটি জায়গায়ই কেবল আমি এগিয়ে আছি। ও থাকে আমার নিচের ফ্লোরে, আমি নবম তলায়।’  <p align="left">সেই ১৯৮৭ সাল থেকে এই এক ঠিকানায় থেকে আসছিলেন তাঁরা। এখন অবশ্য তাঁদের সবারই সয়-সম্পত্তি বেড়েছে। অন্যান্য জায়গায়ও বাড়িঘর কিনেছেন তাঁরা। তবে স্পোর্টস ফিল্ডের ফ্ল্যাট অন্য কারো হাতে ছেড়ে দেননি। ক্রিকেটীয় কীর্তিতে মুম্বাইয়ের সূর্যসন্তান হয়ে ওঠা এই তারকাদের যাত্রা শুরুর জায়গাও কিন্তু অভিন্ন।</p> </article> <article> <p align="left">মারাঠি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছত্রপতি শিবাজীর নামে এই শহরের যে শিবাজী পার্ক, সেখানেই তাঁদের প্রত্যেকের ক্রিকেটে হাতেখড়ি। অর্জনের চূড়া ছোঁয়ার পথে শচীন টেন্ডুলকারের যাত্রা শুরুর গল্পেও অবধারিতভাবে এসে যায় এই পার্কের মাঠ। এখানেই ভারতের ব্যাটিং ঈশ্বরকে ব্যাট ধরা শিখিয়েছিলেন রমাকান্ত আচরেকার। মুম্বাই ক্রিকেটের সেকাল আর একালকে এক করে দেওয়া পার্কের মাঠ থেকেই উত্থানের শুরু ভারতীয় দলের বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মারও।</p> </article> <article> <p align="left">তবে ক্রিকেটারদের যাত্রা শুরুর ভিত্তিভূমিতে বাজে বিদায় আর বিষাদের সুরও। এখানে যাত্রা শুরুই হয় না শুধু, শেষও হয়। যেমন হয়েছিল মুম্বাইয়ের এক মায়ের। মারাঠি ভাষায় যাঁর ‘আঈ’ নামটি সর্বজনীনও ছিল। এর অর্থ মা। কে তিনি? ভারতের ‘নাইটিঙ্গেল’ লতা মঙ্গেশকর। এক জীবনে কণ্ঠের মায়া আর সুরের জাদুতে সারা পৃথিবীকে মোহাবিষ্ট করে রাখা এই কিংবদন্তি ভীষণ স্নেহ করতেন শচীনকে। তাঁর বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল ভারতীয় ক্রিকেট মহাতারকার। কভিডকাল প্রায় শেষ হওয়ার পথে এই ভাইরাসটি থাবা বসিয়ে যায় কিংবদন্তি শিল্পীর শরীরে। শেষ পর্যন্ত গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি ৯২ বছর বয়সে মহান শিল্পীর সুরযাত্রা থমকে যায় কভিডে। শোকস্তব্ধ হয়ে যায় গোটা ভারতও।</p> <p align="left">শোকের অশ্রুভেজা চোখে তাঁকে শেষবিদায় জানানোর আয়োজনও চলতে থাকে। শিবাজী পার্কের এক কোনায় যে মন্দিরটি, সেখানেই সারা হয় লতাজির শেষকৃত্য। বিদায়ের বেদিতে নিষ্প্রাণ শিল্পীর জন্য বেদনার বিউগলে বেজে ওঠে সকরুণ শ্রদ্ধা। প্রাণহীন মায়ের শেষযাত্রার ভূমিই মুম্বাইয়ের অতীত-বর্তমান-আগামীর ক্রিকেটারদের কাছে পায় এক তীর্থের মর্যাদা। এ জন্যই সুবিশাল শিবাজী পার্কে কচিকাঁচার মেলা লেগেই থাকে। এমন নয় যে শুধু ক্রিকেটই হয় এখানে। ফুটবল, ভলিবল থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক খেলায় মজে থাকা শিশুদের কলরবে মুখর থাকে পার্কটি। এর মধ্যে ক্রিকেটই যে সবচেয়ে বেশি হয় এখানে, তা আর না বললেও চলছে। এই শনিবারের সকালে সেখানে হানা দিয়ে দেখা গেল, একই সময়ে চার-চারটি ম্যাচে চলছে খুদে ক্রিকেটারদের লড়াই।</p> <p>এভাবেই একদিন লড়াইয়ের শুরু হয়েছিল শচীনের। তাঁর আগের একাধিক প্রজন্মের যেমন, তেমনি তাঁর পরের অনেক প্রজন্মেরও। এখান থেকে এগিয়ে যাওয়ার সিঁড়ি ভাঙার গল্পের শুরুটা সবারই প্রায় এক। যাত্রা শুরুর সেসব রোমাঞ্চকর গল্পে বিষাদের প্রলেপ দিতে থাকে মায়ের শেষযাত্রার বেদনাও!</p> </article>