<p style="text-align:justify">পাঠ্যপুস্তক সমন্বয় কমিটি বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে আলেমসমাজ ও ইসলামপন্থী জনগণের নামে বিষোদগারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের বিশিষ্ট ১৫১ জন আলেম। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দিবাগত রাতে এ বিবৃতি দেন তারা। </p> <p style="text-align:justify">বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে আশায় বুক বেধেছিল এ দেশের সর্বস্তরের জনতা। কারণ, বিগত সরকার পাঠ্যপুস্তককে আমাদের সন্তানদের ঈমান হরণের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছিল। আমরা আশা করেছিলাম, পতিত স্বৈরাচারের সময়ে এনজিও প্রেসক্রিপশনে রচিত পাঠ্যপুস্তকের পাতায় পাতায় পশ্চিমা অপসংস্কৃতির যেই নগ্ন অনুপ্রবেশ ঘটেছিল, তা থেকে আমরা এবার পুরোপুরি মুক্ত হতে পারবো। </p> <p style="text-align:justify">কিন্তু গভীর হতাশার সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করলাম, নতুন বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক সমন্বয় কমিটিতেও পশ্চিমা সেই বস্তাপচা সংস্কৃতির ধারক ও বাহকেরা জেঁকে বসেছে। সমন্বয় কমিটিতে বাম, সেক্যুলার, ইসলামবিদ্বেষী ও সমকামী সাপোর্টাররা থাকলেও ছিল না দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি। </p> <p style="text-align:justify">এই বাস্তবতায় আমরা ইসলামপন্থী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নানা ধরনের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করি এবং কমিটি থেকে চিহ্নিত ইসলামবিদ্বেষী ও যৌন বিকৃতির সাপোর্টারদের অপসারণের দাবি জানাই। তারপর আমরা দেখতে পেলাম, খুব তড়িঘড়ি করে পুরো কমিটি বাতিল করা হলো, যা আমাদের দাবি ছিল না। বরং কমিটি গঠন ও বাতিলের পুরো প্রক্রিয়াটাই সন্দেহজনক। </p> <p style="text-align:justify">বিবৃতিতে আরো বলা হয়, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আলেমসমাজ ও ইসলামপন্থীদেরকে ‘মৌলবাদী ও স্বার্থান্বেষী মহল’ ট্যাগ দিলেন। এছাড়া জনবিচ্ছিন্ন কিছু বাম ও ইসলামবিদ্বেষী সেক্যুলার ‘১২২ নাগরিকের বিবৃতির নামে মিথ্যার বেসাতি সাজালেন। আমাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কারণে তারা আলেম সমাজ ও ইসলামপন্থী জনতাকে ফ্যাসিবাদের দোসর ট্যাগ দিলেন এবং ‘গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা নস্যাৎ করার পাঁয়তারা’ বলে অভিহিত করলেন৷ </p> <p style="text-align:justify">শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকে এভাবে ট্যাগিং করা নিঃসন্দেহে ফ্যাসিবাদী আচরণ। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।  আমরা দেখেছি, এই বাম ও চেতনাপন্থীরাই পতিত স্বৈরাচারের হাতকে শক্তিশালী করেছিল এবং বিভাজনের রাজনীতি করে ইসলামপন্থীদের কোণঠাসা করে রেখেছিল বিগত ১৫ বছর। আবু সাইদ ও আসহাবুল ইয়ামিনরা ইসলামের আদর্শ ও শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে যে নতুন বাংলাদেশ আমাদের উপহার দিয়েছে, সেই বাংলাদেশকে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে এই জনবিচ্ছিন্ন ১২২ নাগরিক। তারা জনগণের আকাঙ্ক্ষার নামে নিজেদের অসৎ আকাঙ্ক্ষাকে ইসলামপন্থী জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। প্রকৃত সত্য এটাই যে, বাংলাদেশের মানুষ পাঠ্যপুস্তকে পশ্চিমা সংস্কৃতি চায় না, ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কনটেন্ট চায় না। </p> <p style="text-align:justify">এমতাবস্থায়, ইসলামিক স্কলারদের একটা টিম কর্তৃক পাঠ্যপুস্তকগুলো রিভিউ করা অত্যন্ত জরুরি। এই টিম পাঠ্যপুস্তকে কোনো ইসলামবিদ্বেষী কনটেন্ট থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করে বাদ দেবার সুপারিশ করবেন৷ এই রিভিউ ছাড়া যদি বই বাজারে আসে আর সেখানে ট্রান্সজেন্ডারসহ পশ্চিমা অপসংস্কৃতি ও ইসলামের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক কনটেন্ট থাকে তবে তীব্র জনরোষের সৃষ্টি হতে পারে। </p> <p style="text-align:justify">আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শুভাকাঙ্ক্ষী। আমরা চাইবো সরকার কিছু জনবিচ্ছিন্ন বাম ও ইসলামবিদ্বেষীর কথায় প্রভাবিত না হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিকে আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবেন।</p> <p style="text-align:justify">বিবৃতিদাতারা হলেন- আল্লামা সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন আব্দুল্লাহ জাফরী, প্রফেসর ড. এবিএম হিজবুল্লাহ, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ, ড. আবুল কালাম আজাদ বাশার, মুফতী মুহা. কাজী ইব্রাহীম, মাওলানা শরীফ মুহাম্মাদ, ড. গিয়াসউদ্দীন তালুকদার, ড. মুহাম্মদ গোলাম রববানী, ড. মীর মনজুর মাহমুদ, ডা. খলীলুর রহমান আল মাদানী, প্রফেসর ড. সায়্যেদ মাকসুদুর রহমান, প্রফেসর ড. মো. মুস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইউবী, প্রফেসর মুখতার আহমেদ, ড. ইউসুফ সুলতান, ড. মানজুরে এলাহি, শায়েখ মুরতাজা হাসান ফয়জী, শায়েখ আহমাদুল্লাহ, ড. মো. রফিকুল ইসলাম আল মাদানী, ড. রশিদ আহমদ, মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী, ফখরুদ্দীন আহমাদ, মাওলানা আবদুল্লাহ আল-আমিন, মুফতি আমির হামজা, কামরুল ইসলাম সাইদ আল আনসারী, আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাযযাক, আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মুফতি রেজাউল করিম আবরার, মহিউদ্দীন ফারুকী ও আহমাদ বিন ইউসুফ আযহারী প্রমুখ। </p>