<p>একসঙ্গে একমঞ্চে চার পাঁচজন শিল্পী গাইজেন। সম্মিলিত সেই গানে মুগ্ধ হয়ে ডুবে যাচ্ছেন শ্রোতারা। এমন দৃশ্য একসময় ছিল সংগীতের অন্যতম এক ধারা। গ্রাম গঞ্জে পালা-মঞ্চে চার-পাঁচজন শিল্পী মিলে গাইতেন। যেন একই সূতায় গাঁথা সবাই। কালের বিবর্তনে সেই ধারা হারিয়ে যায় ধীরে ধীরে। একক গান, বাণিজ্যিক গানেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন সবাই। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আবারও দেখা যাচ্ছে সেই আদিম গানের ধারা। সমবেত গান। </p> <p>একাধিক শিল্পীর সমবেত গানের সেই ধারা ফিরে এসেছে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে। একসঙ্গে গাইছেন কয়েকজন শিল্পী, গানচিত্রেও হাজির হচ্ছেন তাঁরা। শ্রোতারা পছন্দ করছে বেশ। ক্রমেই ট্রেন্ডে রূপ নিচ্ছে সমবেত গান। সমবেত গানের এই ট্রেন্ড নিয়ে পাঠকদের উদ্দেশে লিখেছেন সুদীপ কুমার দীপ।</p> <p>এক গানে চার-পাঁচজন শিল্পীর কণ্ঠ দেওয়া গত শতাব্দীতে নিয়মিত চোখে পড়লেও এই শতাব্দীতে সে ধারা উঠে গিয়েছিল। তবে গত বছর আগস্টে প্রকাশিত ‘চোখ লাল কিসে’ গানটির মাধ্যমে সমবেত কণ্ঠে গাওয়ার প্রচলন ফিরে এসেছে। এই গানটি গেয়েছিলেন খায়রুল ওয়াসি, কামরুজ্জামান রাব্বী, এমডি মানিক, রাজু মণ্ডল ও এস ডি সাগর। খায়রুল ওয়াসির কথা ও সুরে গানটির সংগীতায়োজন করেছিলেন এস ডি সাগর। এক বছরেই গানটি ইউটিউবে ভিউ হয়েছে প্রায় দুই কোটি ৪০ লাখ। শূন্যের কোটায় সাবস্ক্রাইব থাকা ইউটিউব চ্যানেল জে এল মিউজিকও এখন এক লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার পেয়েছে।</p> <p>বড় ব্যাপার হলো, এই গানের সফলতার পরে ‘টাকার যন্ত্রণা’, ‘দুঃখ ছাড়ে না’সহ বেশ কয়েকটি গান প্রকাশ পেয়েছে। গানগুলো গেয়েছেন রাজু মণ্ডল, কামরুজ্জামান রাব্বী, অশোক বালা, অবিনাষ বাউল, পূর্ণ মিলন, বাউল ফারুক, এস ডি সাগর। প্রতিটি গানই সফলতা পেয়েছে। এই ধারায় এখন মুক্তির অপেক্ষায় আছে মৌসুমী আক্তার সালমা, ফারদিন খান, রুমী খানের গাওয়া ‘লক্ষ্মী ভাবীজান’, জসিম উদ্দিন জাকির, রুমি সেন, সেলিম আউয়াল, সজীবের গাওয়া ‘আদর নিও’সহ বেশ কয়েকটি গান।</p> <p>অডিও কম্পানিগুলোও এখন নতুন করে এই ধরনের গানের পরিকল্পনা করছে বলে জানালেন ‘চোখ লাল কিসে’র গীতিকার, সুরকার ও গায়ক খায়রুল ওয়াসি। তিনি বলেন, ‘একটা ট্রেন্ড তৈরি করতে পেরেছি। আমরা যখন ছোট ছিলাম, বাংলাদেশ টেলিভিশনে দেখতাম এক গানে গুণী অনেক শিল্পী কণ্ঠ দিচ্ছেন। কোনোটা দেশের গান, কোনোটা আবার ফোক বা ভাটিয়ালি। মাঝখানে শিল্পীদের মধ্যে একতা ছিল না। আমার মনে হয় এই ট্রেন্ডের মাধ্যমে আবার শিল্পীরা কাছাকাছি হবেন।’</p> <p>এখন সমবেত কণ্ঠে বেশি গান করছেন রাজু মণ্ডল। ফোক গানে তাঁর আধিপত্য চোখে পড়ার মতো। তাঁর গাওয়া ‘আজকে মরলে কালকে দুদিন’, ‘মাটি দেবে’, ‘আজরাইলে খায় না ঘুষ’ গানগুলো কোটি ভিউ হয়েছে ইউটিউবে। রাজু বলেন, ‘আমি একক ক্যারিয়ার দাঁড় করালেও সবাইকে নিয়ে পথ চলতে চাই। এই যে একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে, শ্রোতারাও কিন্তু গ্রহণ করেছে। একটা গানে পাঁচ-সাতজন শিল্পী থাকলে আলাদা মুনাফাও আছে। যেমন আমার ভক্ত আছে, সালমার ভক্ত আছে, খায়রুল ওয়াসিরও ভক্ত আছে। সবাই যখন এক গানে কণ্ঠ দিই ভক্তরাও গানটি শোনার জন্য এক হয়ে যায়। পাঁচজন শিল্পীর পাঁচ লাখ করে ভক্ত হলেও কিন্তু শুরুতে পঁচিশ লাখ ভিউ আসে গানে। আর সেটা যদি ভালো গান হয় তাহলে তো কথাই নেই!’</p> <p>এ ধরনের গানে একটু খরচ বেশি হয় বলে জানালেন অডিও প্রযোজনাপ্রতিষ্ঠান প্রোটিউনের কর্ণধার প্রসেনজিৎ ওঝা। তবে তিনিও এ ধরনের গানে সমর্থন করেন। বলেন, ‘একসঙ্গে চার-পাঁচজন শিল্পী হলে শুরুতে একটা ভিউ পাওয়া যায় এটা সত্য। তবে একটা গানে কিন্তু সবাইকে পারিশ্রমিক দিতে হয়। একজন শিল্পী গাইলে যে পারিশ্রমিক, পাঁচজন গাইলে অবশ্যই তার চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক হবে এটাই স্বাভাবিক। তার পরও এক গানে কয়েকজন শিল্পীর কণ্ঠ এটা সময়ে চাহিদা। আমিও মেনে নিয়েছি। হয়তো অন্য কম্পানির মালিকরাও মেনে নিয়েছেন।’</p> <p>আজ বিকেল ৩টায় প্রকাশিত হবে মৌসুমী আক্তার সালমা, ফারদিন খান ও রুমি খানের গাওয়া ‘লক্ষ্মী ভাবীজান’। সালমাকে সাধারণত একক ও দ্বৈত গানে পাওয়া যায়। সমবেত কণ্ঠেও যে গানগুলো গেয়েছেন সেগুলো ছিল দেশের বা কোনো উৎসবের। এবারই প্রথম এ ধরনের গানে পাওয়া যাবে সালমাকে। তিনি বলেন, ‘আসলে কম্পানির চাহিদাতেই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছি। তবে গানটি রেকর্ড হওয়ার পর শুনে মনে হয়েছে আলাদা মাত্রা পেয়েছে। একটা সময় আমাদের চলচ্চিত্রে কিন্তু এ ধরনের গান হতো। এক গানে তিনজন বা তারচেয়ে বেশি শিল্পীও কণ্ঠ দিয়েছেন। এখন যদি সেই সময়টা ফিরে আসে খারাপ লাগবে না। এ ধরনের গানে আগামীতে প্রস্তাব পেলে খুশিই হবো।’</p>