<p>রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই দশরথ স্টেডিয়ামে শুরু মেয়েদের উদযাপনের। এদিক-সেদিক ছুটে গেলেন তাঁরা। দুই বছর আগেও এই ট্রফির স্বাদ পাওয়ায় এবারেরটায় তেমন উচ্ছ্বাস ছুয়ে গেল না সাবিনা-মনিকাদের। তবে শিরোপা ধরে রাখার যে আনন্দ তা ফুটে উঠেছে তাঁদের চোখেমুখে।</p> <p>অধিনায়ক সাবিনা খাতুন যেমন বলেছেন, ‘ভালো লাগছে। এ ছাড়া আর কী বলব। মেয়েরা ভালো খেলেছে বলেই চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। ওদের জন্য আমি গর্বিত।’</p> <p>এবারের শিরোপা এসেছে অনেক আলোচনা-সমালোচনার পর। দলের মধ্যে তৈরি হয়েছিল অন্তঃকোন্দল। কোচ পিটার বাটলার নাকি সিনিয়র কয়েকজন ফুটবলারকে পছন্দ করেন না। বাটলারও তার পাল্টা জবাব দিয়ে জানিয়েছিলেন, বাইরের লোক দলে হস্তক্ষেপ করছে।</p> <p>তিনি স্বাধীনভাবে কাজ একের ভেতর তিন জয়করতে পারছেন না। তবে সব বিতর্ক একপাশে রেখে মাঠে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে আরেকবার শিরোপা উৎসবে মাতোয়ারা হলেন মেয়েরা। বিতর্ক আর অন্তঃকলহের সঙ্গে জয়ী দলের শিরোপা যেন একের ভেতর তিন জয়ের অনুভূতিই ছড়িয়ে দিয়েছে পুরো দলে। </p> <p>নেপালের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় সাবিত্রা ভাণ্ডারিকে পুরো ম্যাচে আটকে রেখেছিলেন ডিফেন্ডার আফিদা খন্দকার। কিভাবে সেটা পারলেন এর উত্তর আফিদা দিয়েছেন এভাবে, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল উনাকে (সাবিত্রা) আটকানো। উনাকে যে বল দেবে সেটা আমরা ধরতে দেব না। আমরা অতটাও ভয় পাইনি। আমাদের ডিফেন্স লাইন শক্তিশালী, সেটা জানতাম। আমরা জানি, আমরা কতটুকু পারি। শেষ পর্যন্ত আমরা পেরেছি।’ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে নিয়মিত খেলেছেন আফিদা। ছিলেন অধিনায়কও। প্রথমবার সিনিয়র সাফে খেলতে এসেই শিরোপা উৎসবে মাতলেন তিনি। এই ডিফেন্ডার নিজের অনুভূতি জানিয়েছেন এভাবে, ‘আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, যখন বাঁশি দিছে তখনো মনে হয়নি। মেডেল, ট্রফি হাতে পাওয়ার পরও বিশ্বাস হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা চ্যাম্পিয়ন।’</p> <p>আসরজুড়েই বাংলাদেশের মধ্যমাঠে আলো ছড়িয়েছেন মনিকা চাকমা। দুই বছরের ব্যবধানে আরো ধারালো হয়েছেন এই মিডফিল্ডার। ফাইনালে তাঁর পা থেকেই এসেছে মহাগুরুত্বপূর্ণ একটি গোল। টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতে মনিকা বলেছেন, ‘অবশ্যই ভালো লাগছে। দেশের জন্য ভালো ফল এনে দিতে পেরেছি। দেশবাসী আমাদের সঙ্গে ছিল। সবাইকে ধন্যবাদ।’ নেপাল যখন সমতা ফেরায় তখন বাংলাদেশ কিছুটা চাপে পড়ে যায়। তবে মনিকা-মারিয়ারা মধ্যমাঠে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বাংলাদেশকে খেলায় রাখে। মনিকা যেমন বলছিলেন, ‘আমরা হাল ছাড়িনি। আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমরা পারব এবং পেরেছি।’</p> <p>চোটের কারণে সেমিফাইনালে খেলতে না পারা শামসুন্নাহার ফাইনালে ফিরেই দারুণ খেলেছেন। আসরে এক গোল করা এই ফরোয়ার্ডেরও এটি দ্বিতীয় শিরোপা। খুব খুশি তিনিও, ‘কী যে ভালো লাগছে। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা পেরেছি। দলের সবাইকে ধন্যবাদ। আপনাদেরও ধন্যবাদ।’ </p> <p>শিষ্যরা যখন উদযাপনে ব্যস্ত, কোচ পিটার বাটলার তখন একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একটু পরে তো মাঠই ছেড়ে গেছেন তিনি এবং জানিয়েছেন, আর মেয়েদের দায়িত্বে থাকবেন না তিনি। ব্রিটিশ এই কোচ বলেছেন, ‘মেয়েদের উপভোগ করতে দিন। আজ উপভোগ করার দিন। চ্যাম্পিয়ন হতে পারা গর্বের। আমরা গর্বিত এবং এটাই ছিল আমার মেয়েদের দলের সঙ্গে শেষ ম্যাচ।’ বাটলার শেষ বলে দিলেও এই মেয়েরা যে আরো অনেক দূর যাবেন, অনেক সাফল্য এনে দেবেন—সেটা হলফ করেই বলে দেওয়া যায়।</p>