<p style="text-align:justify">ফরিদপুরের সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদী ঘেঁষে চরাঞ্চলে বসতি পরিবারগুলোতে শীতের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। গত কদিন ধরে তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এসব পরিবারের সদস্যরা। পদ্মা নদীর তুষারাচ্ছন্ন বাতাস আর হাড় কাঁপানো শীতে জবুথবু দুস্থ পরিবারগুলো। </p> <p style="text-align:justify">তাদের ঘরে চাল নেই, পরনের বস্ত্র নেই। নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন হতদরিদ্র পরিবারের সংখ্যা রয়েছে অন্তত ১০ হাজার। শীতের বস্ত্র কেনার সামর্থ্য তাদের নেই। এক ফালি সূর্যের কিরণই তাদের শীতের চাদর। এ বছর সরকারি ও বেসরকারিভাবে কোনো শীত বস্ত্র পায়নি বলে জানিয়েছেন দুস্থরা। </p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, দুই উপজেলার ভাঙন কবলিত ছিন্নমূল পরিবারের বেশিরভাগ শ্রমজীবী, মজুর ও জেলে পেশাজীবী। এসব কর্মজীবীরা কাদা পানির মধ্যেই দিন কাটিয়ে থাকে। ফলে তাদের শীতের প্রকোপ সইতে হয় অনেক বেশি। শীতের প্রকোপ সইতে না পেরে অনেক বৃদ্ধ শ্রমিক, মজুর ও জেলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। শীতার্ত পরিবারে দেখা দিচ্ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগ। শীত বস্ত্রের অভাবে ওইসব পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশুরা এক ফালি রোদ্র তাপের উষ্ণতায় দিনভর বসে থাকে উন্মুক্ত পদ্মাপার। কেউ কেউ আবার রান্না চুলো ঘিরে উষ্ণতা মেটায়। </p> <p style="text-align:justify">চরভদ্রাসন উপজেলা পদ্মা নদীর চরশালেপুর গ্রামের ছগীর বিশ্বাস (৫৫) জানায়, গত কয়েক দিনে পদ্মাপারের তুষারাচ্ছন্ন শীতে পরিবার-পরিজনসহ গৃহস্থালি গরু ছাগল রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু শীত নিবারণের জন্য পর্যাপ্ত বস্ত্র জোগাড় করতে পারি নাই।</p> <p style="text-align:justify">বালিয়া ডাঙ্গী গ্রামের কুসুম বালা (৫০) জানায়, তার স্বামী করিম ব্যাপারী হাপাঁনী রোগী। শীত বাড়ার ফলে কদিন ধইরা কামলা দিতে পারে নাই, তাই অভাব অনটনে দিন কাটাচ্ছি। </p> <p style="text-align:justify">গাজীরটেক ইউনিয়নের বিন্দু ডাঙ্গী গ্রামের লক্ষ্মী রানী (৪৮) জানায়, তার স্বামী চিত্ত হালদার (৬০) পদ্মা নদীর একজন মৎস্যজীবী। গত কদিন ধরে তীব্র শীতের কবলে সে নদীতে যেতে পারে নাই। তাই ধারদেনা করে দিন কাটাচ্ছে তার পরিবার।</p> <p style="text-align:justify">সদরপুর আকোটেরচর ইউনিয়নের শয়তান খালি গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, গত কয়দিনের শীত এতো বেশি যে, ভ্যান নিয়ে রাস্তায় বাইরে বের হইবার পারতেছি না। সকাল থাইকা কুয়াশার বেগে কিছুই চোখে দেখি না। এইভাবে কামাই রোজগার না করতে পারলে কীভাবে চলমু? কেউ আমাগো খোঁজ-খবর নেয় নাই।</p> <p style="text-align:justify">ঢেউখালি ইউনিয়নের চরবলাশিয়া এলাকার বাসিন্দা বজলু ব্যাপারী বলেন, চরাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ নিম্ন আয়ের। মানুষগুলো শীতে কাবু হয়ে গেছে। এখানকার মানুষকে শীত থেকে রক্ষা পেতে আগুন জ্বালিয়ে ঘরের সামনে বসে থাকতে হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">চরভদ্রাসন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সুদেব রায় জানান, এবছর এখনো সরকারিভাবে কোনো শীতবস্ত্র বরাদ্দ আসেনি। তাই উপজেলার দুস্থ পরিবারগুলোতে এখনো শীতবস্ত্র বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।</p> <p style="text-align:justify">সদরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুরুন্নাহার বেগমকে তার অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।</p>
