<p>কুমার নদে ফরিদপুর জেলা সদরে কয়েকটি স্থানে অসময়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদের পারের কয়েক কিলোমিটারজুড়ে অর্ধশতাধিক স্থানে এ ভাঙনের তীব্রতায় ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হওয়ার পথে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে কয়েকশত পরিবার। </p> <p>গত কয়েক দিনে কুমার নদের ভাঙনে শহরঘেঁষা গুহ লক্ষ্মীপুর ও অম্বিকাপুর এলাকার ৮-১০টি বসতবাড়িসহ স্থাপনা ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থাপনার তলদেশের অংশ দুমড়েমুচড়ে নদের বুকে আছড়ে পড়ছে। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সকালেও কুমার নদের চুনাঘাট ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় ভাঙনের ভয়াবহতা দেখা গেছে। </p> <p>ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, কুমার নদ খননকাজ যেভাবে করার কথা ছিল, সেভাবে কাজ করেননি ঠিকাদার। নদীর মাটি কেটে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন তারা। অথচ ওই মাটি নদের তীর বাঁধানোর কাজে ব্যবহার করার কথা ছিল। মাটি কেটে নেওয়ার ফলে নদের গভীরতা বেড়ে গেছে। এ কারণে নদের পানি টান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদের তলদেশ থেকে মাটি সরে স্থাপনাসহ বসতবাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। </p> <p>স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, জেলা সদরের মনদখালী স্লুইস গেট হতে অম্বিকাপুর সুজন বাদিয়ার ঘাট পর্যন্ত দেখা দিয়েছে নদের ভাঙন। এসব এলাকার কয়েকটি স্থানে বাড়িঘর, ফসলি জমিসহ স্থাপনা চলে গেছে নদের গর্ভে। এর ফলে নির্ঘুম রাত কাটছে কয়েক শত পরিবারের। অনেক জায়গায় স্থানীয়রা বাঁশের বাধ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।</p> <p>ভাঙন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর পৌর শহরের গুহ লক্ষ্মীপুর, অম্বিকাপুর এলাকার কয়েকটি বসতঘর ও পাকা স্থাপনা ভেঙে পড়েছে নদের গর্ভে। এ ছাড়া বর্তমানে চুনাঘাট ব্রিজসংলগ্ন এলাকায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও ব্রিজের তলদেশের মাটি ভেঙে ভাঙন হুমকিতে পড়েছে। এসব এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে কিছুটা কাজ করলেও থামছে না নদের ভাঙন। </p> <p>চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমদিকে শুরু হয় কুমার নদের ভাঙন। গত একসপ্তাহ ধরে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এদের মধ্যে অনেক পরিবার আছে যারা দুইবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে নদের পাড়ে ফের বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছে। কেউবা সরকারের রেলের জায়গা নদের তীরে বাড়ি করে একটু ঘুমানোর শেষ আশ্রয়স্থল তৈরি করছে।</p> <p>চুনাঘাট এলাকার বাসিন্দা আক্কাস আলী জানান, কুমার নদের পাড়ের বাসিন্দাদের কাছে এক আতঙ্কের নাম নদের ভাঙন। অসময়ে তীব্র ভাঙন এখন আমাদের কাছে বড় দুর্যোগ। ঘুর্ণিঝড়ে ঘর-বাড়ি উড়ে গেলেও নিজের ভিটা গাছপালা কিছু হলেও থাকে। কিন্তু নদীভাঙনে ভিটে-মাটি, ফসলি জমি, গাছপালা সব কিছু কেঁড়ে নিয়ে যায়। </p> <p>ফরিদ জমাদ্দার নামে এক বাসিন্দা জানান, বন্যায় ফসল ভেসে গেলেও জমিটুক থাকে। বাড়িঘর পুড়ে গেলে ছাইটুক থাকে। কিন্তু নদী ভাঙনে সবটুকু শেষ হয়ে অবশিষ্ট আর কিছুই থাকে না। নদী ভাঙনে সকাল বেলার বাদশা সন্ধ্যা বেলায় একেবারে নিঃস্ব ফকির হয়ে যায়। পৌরসদরের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কুমার নদের দুই পাড়ে যে সব বসতি আছে তাদের বাড়ি-ঘর ভাঙন থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। </p> <p>ভাঙন এলাকা পরিদর্শনকারী ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, কুমার নদের যে সব এলাকা ভাঙছে, সেই ভাবে নদীর তলদেশ ভাঙন বলাও যাচ্ছে না। কি কারণে ভাঙছে কারিগরি এক্সপার্টদের আসতে বলা হয়েছে। তারা এসে রিপোর্ট দিলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নদের ভাঙন প্রতিরোধের সব কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।</p>