<p>ভ্যানগাড়ি চালক ওমর ফারুক এখন বুলেটবিদ্ধ হয়ে বিছানায়। বাবার অসুস্থতা, এগারো সদস্যের সংসারের খরচ—সব মিলিয়ে ওমর এখন চরম অসহায়। মাত্র তিন মাস আগেও ওমর ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কঠোর পরিশ্রম করে সংসার চালাতেন। কিন্তু আজ তিনি অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত।</p> <p>ওমর বলেন, গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলি আমার নাভির নিচ দিয়ে ঢুকে পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। সেই গুলিতেই ভেঙে যায় আমার সব স্বপ্ন।</p> <p>ওইদিন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওমরের জটিল অস্ত্রোপচার করা হয়, যা তাকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনে। এখনো শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন, কারণ দ্বিতীয় একটি অস্ত্রোপচার করতে হবে চার মাস পরে। কৃত্রিমভাবে মলত্যাগের জন্য তার শরীরে লাগানো আছে কোলোস্টোমি ব্যাগ।</p> <p>রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩১ নং ওয়ার্ডের শেখপাড়া গ্রামের ওমর তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। তার বাবা খলিলুর রহমান (৬০) পায়ের হাড় ক্ষয়ের কারণে এখন আর কাজ করতে পারেন না। তিনি বলেন, বাবার চিকিৎসার জন্য সামান্য সঞ্চয় করেছিলাম, কিন্তু নিজের চিকিৎসা আর সংসারের খরচ সামলাতে এখন আর কিছুই বাকি নেই।</p> <p>ওমরের শ্বশুরও দিনমজুর, তবে বর্তমানে কর্মহীন। যৌথ পরিবারের ১১ জনের ভরণপোষণ নিয়ে ওমর এখন দিশেহারা। পাশাপাশি তার অস্ত্রোপচারের খরচও বিরাট চিন্তার বিষয়।</p> <p>ঘটনার দিন ওমর প্রতিদিনের মতো ভ্যানগাড়ি নিয়ে বের হন। বিকেলে ভ্যানগাড়ি মেরামতের জন্য রংপুরের মডার্ন মোড়ের ফাতেমা কোল্ড স্টোরেজের কাছে যান। সেখানে পুলিশের গুলিতে আহত হন। অজ্ঞান হওয়ার পর চেতনা ফিরে পান রংপুর মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি ওয়ার্ডে। তখন জানতে পারেন যে তাকে বাঁচাতে জটিল অস্ত্রোপচার করেছেন ডাক্তার, ছাত্র, নার্স ও কর্মীরা।</p> <p>ওমর বলেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১০ আগস্ট রংপুর হাসপাতালে এসে আমার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছিলেন। তবে এখনো কোনো সরকারি সাহায্য পাইনি। জমি বিক্রি করে এবং স্ত্রীকে ধার করতে হয়েছে আমার চিকিৎসার খরচ মেটাতে।</p> <p>ওমরের স্ত্রী জোহরা বেগম বলেন, আমার স্বামীর আয়ের ওপরই আমাদের সংসার চলত। প্রতিদিন ভ্যানগাড়িতে নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করে মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা আয় করতেন। এখন চিকিৎসা ব্যয় চালাতে ভ্যানগাড়ি ও গরু বিক্রি করেছি। তার ওপর ঋণের বোঝা দিন দিন বাড়ছে।</p> <p>তাদের পরিবার এখন আর্থিক সংকটে পড়ে নিজের খাবারটুকুও ঠিকমতো জোগাড় করতে পারছে না। জোহরা বেগম সরকারের কাছে ঋণ মওকুফ এবং স্বামীর সুস্থতার পর তার জন্য নতুন ভ্যানগাড়ির ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান।</p> <p>ওমরের দুশ্চিন্তার যেন শেষ নেই—নিজের চিকিৎসা, বাবার চিকিৎসা, সংসারের খরচ—সব মিলিয়ে তার জীবনে একের পর এক বাধা। তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা প্রয়োজন।</p>