<p>কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধা বাবার মৃত্যুর পর ভাতা থেকে বঞ্চিত করতে সৎমা ও ভাই-বোনেরা মো. শফিক (৫২) নামে এক ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। </p> <p>রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লা নগরীর একটি রেস্টুরেন্টের হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন শফিক।</p> <p>ভুক্তভোগী শফিক জেলার মুরাদনগর উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ ইউনিয়নের কালাডুমুর এলাকার মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলামের ছেলে। </p> <p>শফিকের ভাষ্য, মৃত বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা যেন না পান এজন্য সৎমা আয়েশা বেগম তাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। </p> <p>সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বাবা মফিজুল ইসলাম একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে সরকারিভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকে তার বাবা নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসেন।<br />  <br /> তিনি আরো জানান, তার (মুক্তিযোদ্ধা মফিজের ছেলে শফিকের) বয়স যখন ৪ বছর তখন তার মায়ের সাথে বাবার বিচ্ছেদ হয়। পরে নাবালক শিশু শফিকের কথা চিন্তা করে ৪-৫ বছর পরে মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম আয়েশা বেগম নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই শফিক তার সৎমায়ের রোষানলে পড়তে থাকেন। পরে শফিক সৎমায়ের রোষানল থেকে বাঁচতে নানার বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং সেখানেই বেড়ে ওঠেন। অপরদিকে তার সৎমা দুজন ছেলে ও ৩ মেয়ের জন্ম দেন।</p> <p>তিনি বলেন, ‘প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সকল কাগজপত্রে বাবার নাম মফিজুল ইসলাম উল্লেখ করি। আমার বাবার বাড়ি আর নানার বাড়ি একই গ্রামে। পুরো এলাকার মানুষ সবকিছুর বিষয়ে অবগত আছে। ২০২৩ সালের রমজান মাসে মৃত্যবরণ করেন আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম। তার মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ সালিশে বসেন। তাতে কাজ না হওয়ায় মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনওর) কাছে আবেদন করলে ইউএনও সিফাত উদ্দিন উভয় পক্ষকে ডেকে, কাগজপত্র যাচাই করে সৎমা আয়েশা বেগম এবং শফিকের মাঝে দুইভাগে বন্টন হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে ব্যাংক হিসাব নম্বর খোলেন শফিক। গত আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মাসে ভাতার ২০ হাজার টাকার অর্ধেক ১০ হাজার টাকা শফিকের ব্যাংক হিসাবে আসে। তাতেই চটতে শুরু করেন সৎমা আয়েশা বেগম।’<br />  <br /> শফিকের ভাষ্য, শফিকের ভাতা বন্ধ করতে নানান কৌশল অবলম্বন করেন সৎমা আয়েশা। কোনো কৌশলে কাজ না হওয়ায় কিছুদিন আগে আদালতে শফিকের নামে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় শফিক বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলামের ছেলে নয়, সে প্রতারণা করে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে জন্মনিবন্ধন, ভোটার আইডিসহ সব কাগজপত্র ভুয়া বানিয়ে মফিজুল ইসলামের ছেলে সেজেছেন বলে মামলায় উল্লেখ করেন আয়েশা।’<br />  <br /> শফিক আরো বলেন, ‘ওই মামলার তদন্ত দেওয়া হয়েছে পিবিআইকে। পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামসুদ্দিন মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে আমার ভোটার আইডি, জন্মসদন যাচাই করেননি। এমনকি এলাকার মানুষদেরও জিজ্ঞেস করেননি আমি মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলামের ছেলে কি-না। তিনি সেসব না করেই আমাদের বাড়ি গিয়ে শুধু বলেছে- আমার ডিএনএ টেস্ট করতে হবে।’<br />   <br /> শফিক বলেন, ‘আমার ডিএনএ টেস্ট করতে কোনো আপত্তি নেই। তবে আমি একজন খেটে খাওয়া মানুষ আমার কাছে কোনো টাকা পয়সা নেই। অপরদিকে আমার সৎমা আমার মৃত বাবার সকল সহায়-সম্পত্তি ভোগ করছেন। তাদের টাকা পয়সার অভাব নেই। টাকা দিয়ে যদি ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয় তাহলে ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কায় আছি।’</p> <p>রবিবার এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী ও শফিকের সৎমা আয়েশা বেগমের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। </p> <p>মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই, কুমিল্লার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামসুদ্দিন বলেন, আদালতে মামলা দায়েরের পর আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সঠিক প্রতিবেদন আদালতে জমা দেবো। এনিয়ে কারও ভয়ের কোন কারণ নেই।</p>