<p>আজও থামছে না নিখোঁজ আসাদুল্লাহর (৩৫) মা আয়শা খাতুনের কান্না। কোটাবিরোধী আন্দোলনে নিহত ছেলের কথা মনে করে তিনি বলেন, ‘আমার পুলা, পুলার বউ আর নাতি-নাতনিরে লইয়া ঢাহার বাওনিয়াতে থাকতাম। ছাত্রদের আন্দোলনের সময় আসাদুল্লাহ, বউমা আর নাতি-নাতনিরে লয়ে দলিপাড়ায় ছোট পুলার বাসায় আমাকে দেখতে আহে। পুলা আমারে কইলো, আমার চোহের চিকিৎসা করাব। চশমা  আর কাপড় কিন্না দেব। আসরের নামাজ পড়ার কথা কইয়া বাসা থাইকা বাইর অয়। আর ফিরে আয়ে নি।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘পুলার খোঁজ পাওয়ার আগেই দাফন কইরা ফালাইছে। আমি পুলার লাশটাও দেখতে পাইলাম না।’ </p> <p>আসাদুল্লাহর স্বজনরা জানায়, আসাদুল্লাহ শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ছনকান্দা গ্রামের আ. মালেকের ছেলে। ১৭ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠেন আসাদুল্লাহ। প্রাইভেট কারের চালকের চাকরি করে সংসার চালাতেন তিনি। স্বপ্ন ছিল নিজেই প্রাইভেট কার কিনে ভাড়ায় চালাবেন। মা আর স্ত্রী সন্তানদের সুখের জন্য নিরলস প্রচেষ্টাও চালিয়েছেন আসাদুল্লাহ। কিন্তু ১৯ জুলাই বাসা থেকে আসরের নামাজের জন্য বের হয়ে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর রোডে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ২২ জুলাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ২৪ জুলাই বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম ঢাকায় তার মরদেহ দাফন করে। ১১ আগস্ট শাহবাগ থানার ফোনে জানতে পারে তার পরিবার। </p> <p>নিহত আসাদুল্লাহর স্ত্রী ফারজানা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী আন্দোলনের সময় নিখোঁজ হন। তার আর কোনো সন্ধান পাইনি। আমাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ওদের এখন কে দেখবে? কে ওদের পড়াশোনার খরচ চালাবে? এই দেড় মাস চলতেই খুব কষ্ট অইছে। সামনের দিনগুলো কেমনে চলমু আল্লাহ জানেন।’  </p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘ওই দিন বাসা থেকে যাওয়ার সময় আমাকে বলেন, মাগরিবের নামাজের পর সবাইকে বাসায় নিয়ে যাবে। তার ফিরতে দেরি হওয়ায় আমরা বাসায় আসি। রাতে বাসায় না ফেরায় খোঁজাখুঁজি করি। কোনো খোঁজ পাইনি। ১১ আগস্ট শাহবাগ থানা থেকে জানতে পারি, আমার স্বামী ১৯ জুলাই ঢাকা উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে ২ নম্বর রোডে গুলিবিদ্ধ হন। পরে তার চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। ২৪ জুলাই বেওয়ারিস লাশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম আমার স্বামী মরদেহ দাফন করে।’<br />  <br /> ফারজানা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী শাশুড়িকে দেখাশোনা করতেন। আমাদের বড় ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করার কথা। তার নিহতের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহযোগিতা পাইনি। তবে জামায়াতে ইসলামী থেকে দুই লাখ টাকা দিয়েছে।’</p> <p>নিহত আসাদুল্লাহর ছোট ভাই রমজান আলী বলেন, ‘মায়ের বয়স ৬০ বছর। ভাইয়ের মারা যাওয়ার পর থেকে শুধু কাঁদেন। ভাইয়ের টেনশনে মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’</p> <p>মরদেহ দাফনের বিষয়ে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের পক্ষ থেকে দাফন সেবা কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জানান, ২৪ জুলাই তারা বেওয়ারিশ হিসেবে রায়ের বাজার এবং মোহাম্মদপুর কবরস্থানে একাধিক মরদেহ দাফন করেছেন। তার কাছে আসাদুল্লাহর কবর কোনটি এটা বলা সম্ভব না। </p> <p>শ্রীবরদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাবের আহামেদ দৈনিক কালের কণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাইনি। তবে তার পরিবার যদি ডেড সার্টিফিকেটসহ লিখিতভাবে আবেদন করে তাহলে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।</p>