<p style="text-align:justify">ফরিদপুরে যৌতুকের দাবিতে তানজিলা আক্তার তহেরা (২১) নামে এক কলেজছাত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে জিসান আহমেদ নামে এক স্বামীর বিরুদ্ধে। তানজিলা আক্তার তহেরা সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, বুধবার (১০ জুলাই) দিবাগত রাতে জিসান শহরতলীর গঙ্গাবর্দী এলাকার মারকাজ মসজিদ সংলগ্ন ভাড়া বাড়িতে তানজিলাকে পিটিয়ে আহত করে। পরে তানজিলাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে, সেখানে তার মৃত্যু হয়।</p> <p style="text-align:justify">খবর পেয়ে বুধবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সালাউদ্দিন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকালে স্বামী জিসান আহমেদকে আটক করেছে কোতয়ালী থানা পুলিশ।</p> <p style="text-align:justify">এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা সাবেক সেনা কর্মকর্তা তোবারেজ মোল্লা বাদি হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।</p> <p style="text-align:justify">থানার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫ মাস আগে সদর উপজেলার পূর্বগঙ্গাবদী এলাকার জাহিদ ফকিরের ছেলে জিসান আহমেদের সঙ্গে তানজিলা আক্তার তাহেরা বিয়ে হয়। এর আগে তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের কিছুদিন পর তাদের মধ্যে যৌতুক নিয়ে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। এরই জের ধরে গত বুধবার রাত ১০ টার দিকে জিসান ফরিদপুর শহরের বদরপুর এলাকার মারকাজ মসজিদ সংলগ্ন ভাড়া বাসায় স্ত্রী তানজিলাকে পিটিয়ে আহত করে।</p> <p style="text-align:justify">আহত অবস্থায় স্ত্রীকে নিয়ে স্থানীয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গেলে, জরুরি বিভাগের চিকিৎসক লিটন গাঙ্গুলি তানজিলার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি দেন। মেডিক্যালের সার্জারি ওয়ার্ডের ৫ তলায় বেডে নেওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়।</p> <p style="text-align:justify">ময়না তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বাদ আসর জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তানজিলার লাশ দাফন করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">তানজিলার বাবা তোবারেজ মোল্লা বলেন, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য আমার মেয়ের উপর জিসান ও তার মা জবেদা বেগম নির্যাতন করতো। জামাতা জিসানকে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে মেয়েকে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতো। গত দুই মাস আগেও একবার মেয়েকে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করে জিসান।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, গতকাল বুধবার রাত ৮ টার দিকে মেয়ের সঙ্গে শেষ কথা হয়। রাত ১২ টার দিকে আমার মেয়ের নাম্বার দিয়ে জিসানের এক বন্ধু ফোন করে বলে তানজিলা আত্মহত্যা করতে গেছিল। আমরা তাকে মেডিক্যালে ভর্তি করেছি। পরে হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের লাশ দেখতে হয়। আমার মেয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জিসান নেশাগ্রস্ত ছিল। যৌতুক না পেয়ে আমার মেয়েকে সে (স্বামী) পিটিয়ে হত্যা করেছে।</p> <p style="text-align:justify">জিসানের মা জবেদা বেগম বলেন, জিসান ও তানজিলার দুইজন ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। আমার ছেলে তাকে কেন নির্যাতন করতে যাবে? আর আমিও কখনো যৌতুকের জন্য তানজিলাকে নির্যাতন করিনি। ঘটনার দিন রাতে জিসান বাড়ির বাইরে একজনের কাছ থেকে টাকা আনার জন্য অপেক্ষা করছিল। রাত ১০ টার পরে তানজিলার ফোনে সে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন টাকা না নিয়েই। বাড়িতে গিয়ে সে দরজা বন্ধ দেখতে পায়। পাশের এক দোকান থেকে রড নিয়ে দরজা ভেঙ্গে জিসান দেখতে পায় তানজিলা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। তারপর স্থানীয় লোকজনদের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।</p> <p style="text-align:justify">তানজিলার স্বামী জিসানকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সালাউদ্দিন বলেন, জিসানের পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মহত্যার কথা বলা হলেও তানজিলার শরীরে অস্বাভাবিক কিছু জখমের চিহ্ন রয়েছে। মেয়ের বাবার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জিসানকে আটক করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, এটি হত্যা না আত্মহত্যা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে বিস্তারিত বলা যাবে। ময়না তদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।</p>