<p style="text-align:justify">অন্তর্বর্তী সরকার ৩১টি এলওআই (লেটার অব ইনটেন্ট) নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এতে বিদেশি বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরইএ)। নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো থেকে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার বা ৫৯ হাজার ৮২০ কোটি টাকার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="সৌর প্রকল্পের ৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কা" height="180" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/09/08/1725738607-e09b25009e22d599036b8b8ce3582e11.jpg" style="float:left" width="300" />বিনিয়োগকারীরা বলেছেন, এর মধ্যে বিনিয়োগকারীরা এলওআইয়ের ভিত্তিতে আংশিক বিনিয়োগ করেছেন। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে এখান থেকে দুই হাজার ৬৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব, যা আগামী বছরগুলোতে দেশের বিদ্যুতের ঘাটতি কমানোর পাশাপাশি ব্যয়বহুল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর চাপ কমাবে। বর্তমানে দেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের মোট সক্ষমতা এক হাজার ৩৭৯ মেগাওয়াট।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে বিশেষ আইনের আওতায় হওয়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য সম্প্রতি পাঁচ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটিও গঠন করা হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">জানতে চাইলে বিএসআরইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চীন, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের প্রায় ৫০টি বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে যুক্ত।</p> <p style="text-align:justify">৩১টি এলওআইপ্রাপ্ত বিনিয়োগকারীরা নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য প্রায় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ পেতে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে জমি কেনাসহ ৩১টি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যান্য পদক্ষেপ।’</p> <p style="text-align:justify">মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, এই অবস্থায় প্রকল্পগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে প্রত্যক্ষভাবে বিদেশি ও দেশি বিনিয়োগের অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। তাই বিএসআরইএর পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত এলওআইয়ের শর্তা অনুযায়ী প্রকল্প উদ্যোক্তারা জমি অধিগ্রহণ, লজিস্টিক সম্প্রসারণ, পরিশোধিত মূলধনসহ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য নানা প্রক্রিয়ার কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা ছিল।</p> <p style="text-align:justify">উদ্যোক্তারা সে অনুযায়ী প্রকল্পের কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। এখন যদি এলওআই প্রক্রিয়াটি আবার প্রথম থেকে শুরু করা হয়, তাহলে কমপক্ষে প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণেই এক বছর বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।</p> <p style="text-align:justify">মোস্তফা আল মাহমুদ বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির আরেকটি সম্ভাবনাময় উৎস বায়ু বিদ্যুৎ, যা সর্বনিম্ন জমি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়ে থাকে। দুই হাজার ৬৭৮ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে। অনবায়নযোগ্য উৎসর ওপর আমাদের নির্ভরতা কমাতে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎসকে অগ্রাধিকার দেওয়া খুব জরুরি।’</p> <p style="text-align:justify">বিএসআরইএর সমীক্ষা অনুসারে, দুই হাজার ৬৭৮ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের সঙ্গে সমপরিমাণ এইচএফও বেসড (তেলভিত্তিক কেন্দ্র) বিদ্যুৎ উৎপাদনের তুলনা করলে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে প্রতিবছর ৮২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে সরকারের। এতে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি কমে যাবে, রিজার্ভের ওপর চাপ কমাবে।</p> <p style="text-align:justify">বিএসআরইএর সহসভাপতি জাহিদুল আলম বলেন, ‘নবায়নযোগ্য প্রকল্পগুলো প্রতিযোগিতা বাজার মূল্য ও এই প্রকল্পগুলোতে কোনো ধরনের ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান ছাড়াই নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্টের ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হওয়ায় সরকারের বিদ্যুৎ খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে। এ জন্য প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।’</p> <p style="text-align:justify">জ্বালানি খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. জাকির হোসেন খান বলেন, সৌরবিদ্যুতের প্রকল্প বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন করা উচিত। মূল্যায়ন করে যদি বাতিল করা হয়, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারবেন—কী কারণে এটি বাতিল হলো। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ ধরনের আশঙ্কার মধ্যে যাতে না থাকেন, এখানে তারা বিনিয়োগ করতে এসেছেন, পরে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে তাঁদের চুক্তিও বাতিল হয়ে যাবে। এই অনিশ্চিয়তা তৈরি করা ঠিক হবে না।’</p> <p style="text-align:justify">ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল এনালিসিসের (আইইইফা) বাংলাদেশের জ্বালানি খাতবিষয়ক প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতকে টেকসই করতে, সাশ্রয়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুবিধা নিতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে আমাদের যেমন একটি ভিশন লাগবে, তেমনি খাতের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘কিছু নবায়নযোগ্য প্রকল্পে যদি সরকারি জমি লিজ দেওয়া যায় এবং ট্রান্সমিশনের খরচ সরকার বহন করে, তবে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে খরচ আরো কমানো সম্ভব।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>বর্তমান অবস্থা ও পরিকল্পনা</strong></p> <p style="text-align:justify">নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা-২০০৮ এবং পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান (পিএসএমপি)-২০১৬ অনুযায়ী, সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুতের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা, যেমন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহের কারণে লক্ষ্য পূরণ করতে ব্যর্থ হয়।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট উৎপন্ন বিদ্যুতের ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস ও ক্লিন এনার্জি থেকে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। এখন ৩১টি প্রকল্প বাতিল করা হলে কোনোভাবেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।</p>