<p>মসজিদ মহান আল্লাহর ঘর। পৃথিবীর সর্বপ্রথম নির্মিত গৃহ হলো মসজিদ, যা মক্কায় স্থাপিত এবং কাবাগৃহ হিসেবে পরিচিত। সেটিই মুসলমানদের কিবলা। সেদিক করেই নির্মিত হয় পৃথিবীর আর সব মসজিদ। মসজিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, রক্ষণাবেক্ষণ ও শিষ্টাচার পালন করা ঈমানি দায়িত্ব হিসেবে পরিগণিত। এখানে মসজিদের কিছু শিষ্টাচার আলোচনা করা হলো—</p> <p><strong>দুর্গন্ধমুক্ত হয়ে মসজিদে যাওয়া : </strong>মসজিদে যাওয়ার আগে পাক-পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন হয়ে যেতে হবে। কোনো প্রকারের দুর্গন্ধযুক্ত খাবার যেমন—কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন খেয়ে বা ধূমপান করে মসজিদে যাওয়া মোটেও উচিত নয়। এতে অন্যদের কষ্ট হয় এবং ফেরেশতারাও কষ্ট পান।আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি এসব গাছ থেকে অর্থাৎ কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন খায় সে যেন আমাদের মসজিদের কাছেও না আসে। (বুখারি, হাদিস : ৮১৫;  মুসলিম, হাদিস : ১২৮২)</p> <p><strong>ডান পায়ে প্রবেশ ও বাঁ পায়ে বের</strong><strong> হওয়া </strong>: মসজিদে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করতে হবে এবং বাঁ পা দিয়ে বের হতে হবে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) যথাসাধ্য ডানকে পছন্দ করতেন। এমনকি তাঁর পবিত্রতা অর্জন, জুতা পরিধান এবং চুল আঁচড়াতেও। (নাসাঈ, হাদিস : ১১২)</p> <p><strong>বিসমিল্লাহ, দরুদ ও দোয়া পাঠ করা : </strong>মসজিদে প্রবেশকালে প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ এরপর দরুদ, তারপর দোয়া পাঠ করা। তিনটি একত্রে এভাবে বলা যায়—‘বিসমিল্লাহি ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা রাসুলিল্লাহি আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রহমাতিক।’ মসজিদ থেকে বের হয়ে প্রথমে বিসমিল্লাহ, এরপর দরুদ, তারপর দোয়া পাঠ করা। তিনটি একত্রে এভাবে বলা যায়। বিসমিল্লাহি ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা রাসুলিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিক। একাধিক হাদিস থেকে বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ১৬৮৫; তিরমিজি, হাদিস : ৩১৪; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭৭১)</p> <p><strong>বের হয়ে ডান পায়ের জুতা আগে</strong> <strong>পরা </strong>: মসজিদ থেকে বের হয়ে ডান পায়ের জুতা আগে পরিধান করা। (দ্র. নাসাঈ, হাদিস : ১১২)</p> <p>সে ক্ষেত্রে মসজিদ থেকে বাঁ পা দিয়ে বের হয়ে জুতার ওপর রেখে ডান পায়ের জুতা আগে পরিধান করলে সব কিছুই ঠিকঠাক আমল হয়ে যায়।</p> <p><strong>তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করা</strong> : মসজিদে প্রবেশ করেই দুই রাকাত নামাজ আদায় করাকে তাহিয়্যাতুল মসজিদ বলা হয়। মসজিদে প্রবেশ করে সুযোগ পেলে এ নামাজ আদায় করা উচিত। আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন বসার আগে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। (মুসলিম, হাদিস : ১৬৮৭; তিরমিজি, হাদিস : ১২৯)</p> <p><strong>অনর্থক ও দুনিয়াবি কথা না বলা </strong>: মসজিদ ইবাদত-বন্দেগির স্থান। কাজেই সেখানে ইবাদত-বন্দেগি করতে হবে অথবা চুপচাপ বসে থাকতে হবে। অন্যের ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা, অনর্থক গল্প-আড্ডা বা দুনিয়াবি কথাবার্তা বলা যাবে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ যখন নামাজ আদায় করে স্বস্থানে বসে থাকে ফেরেশতারা তার জন্য ক্ষমা ও রহমতের দোয়া করতে থাকেন, যতক্ষণ না অপবিত্র হয় বা উঠে চলে যায়। (আবু দাউদ,  হাদিস : ৪৬৯)</p> <p><strong>হারানো জিনিসের ঘোষণা না দেওয়া</strong> : মসজিদে হারানো জিনিসের ঘোষণা দেওয়াও মসজিদের পবিত্রতার পরিপন্থী কাজ। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মসজিদে কোনো লোককে হারানো জিনিসের ঘোষণা দিতে শুনবে, সে যেন বলে, আল্লাহ তোমার জিনিস ফিরিয়ে না দিন। কারণ মসজিদ এ জন্য নির্মিত হয়নি। (মুসলিম, হাদিস : ১২৮৮; আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৩)</p> <p><strong>বাজার না বানানো </strong>: মসজিদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়—এমন কোনো কাজকর্ম মসজিদে করা সমীচীন নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মসজিদে যেসব কাজ অনুচিত তা হলো—মসজিদকে যাতায়াতের পথ বানাবে না, সেখানে অস্ত্র ছড়িয়ে দেবে না, ধনুক নড়াবে না, তীর বের করবে না, কাঁচা গোশত নিয়ে অতিক্রম করবে না, দণ্ডের শাস্তি প্রয়োগ করবে না, রক্তের প্রতিশোধ নেবে না এবং বাজার বানাবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭৪৮)</p> <p>পরিশেষে বলা যায়, মসজিদ সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় স্থান। মসজিদের শিষ্টাচার রক্ষার মাধ্যমে এ স্থানের মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা করা জরুরি। আল্লাহ সবাইকে সে তৌফিক দান করুন। আমিন।<br />  </p>