<p style="text-align:justify">তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) তিনটি আবেদনের শুনানি ১৭ নভেম্বর হবে। দুই পক্ষের সময় আবেদনে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই তারিখ দেন।</p> <p style="text-align:justify">আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। আর আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া, জয়নুল আবেদীন ও মোহাম্মদ শিশির মনির।</p> <p style="text-align:justify">শুনানির শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই বিষয়টিতে (রিভিউ আবেদনে) অনেক সাংবিধানিক বিষয় জড়িত। শুনানির জন্য আমাদের প্রস্তুতির প্রয়োজন। সেজন্য চার সপ্তাহ সময় চাচ্ছি।</p> <p style="text-align:justify">এরপর বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ আবেদনকারীর আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়েছি। এ বিষয়ে মোট তিনটি রিভিউ আবেদন হয়েছে। আমরা একটি আবেদনের পক্ষে। শুনানির জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে। চাইলে শুনানি হতে পারে। অথবা আপনি যদি অন্য কোনো তারিখ নির্ধারণ করেন, আমাদের কোনো আপত্তি নাই।</p> <p style="text-align:justify">তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এর (রিভিউ আবেদন) সাথে সর্বোচ্চ জাতীয় স্বার্থ জড়িত। সেজন্য ভাল প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। আমি সময় চাচ্ছি। এটা (রিভিউ আবেদন) খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  </p> <p style="text-align:justify">এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আবেদনকারীরা রিভিউ চেয়েছেন। আপনি সময় চাচ্ছেন কেন?</p> <p style="text-align:justify">জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হচ্ছে রাষ্ট্র। তাই প্রস্তুতির জন্য সময় চাচ্ছি।</p> <p style="text-align:justify">আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া তখন বলেন, তিনটি আবেদনেই রাষ্ট্র বিবাদী। ত্রয়োদশ সংশোধনীর যে রায় হয়, সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের আগেই সরকার সংশোধনীটিকে বাতিল করে দেয়। ফলে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। বিচারপতি ফারাহ মাহুবুবের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে একটি আবেদন বিচারাধীন।</p> <p style="text-align:justify">প্রধান বিচারপতি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর সঙ্গে এর সম্পর্ক কি?</p> <p style="text-align:justify">জবাবে শরীফ ভূঁইয়া বলেন, সর্বোচ্চ আদালত ত্রয়োদশ সংশোধনী অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। আর সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিষয়টিকে বাতিল করেছে। ফরে এর সঙ্গে একটি যোগসূত্র আছে।</p> <p style="text-align:justify">তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা কোনো বিষয় না। স্বতন্ত্রভাবে রিভিউ আবেদনের শুনানি করতে কোনো অসুবিধা নাই।</p> <p style="text-align:justify">এরপর বিএনপির মহাসিচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আইনজীবী জয়নুল আবেদীনও শুনানি পেছাতে চার সপ্তাহের সময়ের আরজি জানান। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।</p> <p style="text-align:justify">১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের চাপে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আনে বিএনপি সরকার। ১৯৯৬ সালের ২৭ মার্চ এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রবর্তন ঘটে। এরপর এই পদ্ধতির অধীনে ১৯৯৬ সালে সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম এবং ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। </p> <p style="text-align:justify">২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের চার দলীয় জোট সরকারের আমলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অগণতান্ত্রিক ও সংবিধানবহির্ভূত আখ্যা দিয়ে আইনজীবী এম. সলিমউল্যাহসহ তিন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন। শুনানির পর তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন। রায়ে বলা হয়, ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানসম্মত ও বৈধ। এ সংশোধনী সংবিধানের কোনো মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি।</p> <p style="text-align:justify">এরপর সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। জারী করা হয় জরুরী অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একটি নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। </p> <p style="text-align:justify">২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়। ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট। ওই বছর রিট আবেদনকারীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। ২০১০ সালে আপিল শুনানি শুরু হয়। আপিল বিভাগ এ মামলায় এমিচি কিউরি (আদালতকে সহায়তাকারী) হিসেবে দেশের আটজন সংবিধান বিশেষজ্ঞের বক্তব্য শোনেন। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও এর পক্ষে মত দেন। </p> <p style="text-align:justify">আপিল বিভাগের ৭ জন সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের মতামতের ভিত্তিতে রায়ের জন্য দিন ঠিক হলে ৬ বিচারপতির তিনজনই অ্যামিকাস কিউরিদের পক্ষে একমত হন। অপর তিন বিচারপতি ভিন্ন মত তুলে ধরেন। এ পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ বি এম খায়রুল হকের হাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে রায় দেন। পরের বছর সেপ্টেম্বরে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। </p> <p style="text-align:justify">অভিযোগ ওঠে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক পূর্ণাঙ্গ রায় পরিবর্তন করেছেন। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়কে আশ্রয় করে দলীয় সরকারের অধীনে পর পর তিনিটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় টিকে থাকেন শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট তাঁর পতন হয়। </p> <p style="text-align:justify">এরপর আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত ২৭ আগস্ট রিভিউ (পুনর্বিচেনার) আবেদন করেন বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন। এরপর ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় বাতিল চেয়ে গত ১৭ অক্টোবর আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর একই আবেদন করে জামায়াত। </p>