<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এবারের এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সম্মেলন (এপেক) এবং জি২০ সম্মেলনটি আগামী দিনের বিশ্বব্যবস্থা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নির্বাচন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার টিকিট পাওয়া। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ চলছে। এই দুই যুদ্ধেই চীন ও রাশিয়ার তুলনামূলক নিষ্ক্রিয়তার কারণ ছিল সর্বাগ্রে অর্থনৈতিক। পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক কাঠামো যেখানে হোঁচট খেয়েছে, সেখানে রাশিয়া এই যুদ্ধের একটি বড় পক্ষ হয়েও নিজের অর্থনীতিকে সঠিক ধারায় রাখতে পেরেছে, এর মূল কারণ চীন। এই সময়ের মধ্যে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, রাজনৈতিক সম্পর্কও অনন্য উচ্চতা লাভ করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং গত আড়াই বছর সময়ের মধ্যে উভয়েই উভয়ের দেশ সফর করা ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ করেছেন। প্রতিবারই তাঁরা একে অপরকে অনন্য বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিশ্বের বড় শক্তিধর দেশ রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন যুদ্ধ এবং প্রক্সি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাদের সামরিক শক্তির জানান দিচ্ছে, চীন নিজের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত করার লক্ষ্যে তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে শক্তিশালী করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিছুদিন আগে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিকসের বৈঠকে শি ও পুতিন ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে এই অর্থনৈতিক জোটকে আরো শক্তিশালী করে বিশ্বরাজনীতিতে একটি বলয় সৃষ্টির অঙ্গীকার করার পর পশ্চিমা বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোকে দুশ্চিন্তাযুক্ত বলে মনে হয়েছিল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="বিশ্বরাজনীতির সম্ভাব্য মেরুকরণ ও জি২০ সম্মেলন" height="201" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/19-11-2024/5.jpg" style="float:left" width="321" />সময়ের বিবেচনায় এই দুশ্চিন্তার মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আলামত দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে। তাঁর পক্ষ থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে চাওয়া যেমন আশার কথা, অন্যদিকে চীনের পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের আগাম ঘোষণা নতুন দুশ্চিন্তার বার্তা দেয়। এর আগের মেয়াদের প্রায় পুরোটা সময় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের কবলে ভুগেছে গোটা বিশ্ব অর্থনীতি। এবার এ ধরনের ধাক্কা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে চীনের কৌশল কী হবে, সেটি নির্ধারণে চীন খুব সতর্কভাবে অগ্রসর হচ্ছে। পশ্চিমারা এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের সঙ্গে কিভাবে খাপ খাইয়ে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাবে, সেটি এখনো অজানা; সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র নিজ দেশের ভেতর এ ধরনের বাণিজ্যিক বাধা তৈরি করে নাগরিকদের অর্থনৈতিকভাবে কতটুকু স্বস্তি দিতে পারবে, সেটিও একটি শঙ্কার বিষয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বিদায়ি সাক্ষাৎ হয়ে গেছে শির। এপেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার মধ্যে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে শির পক্ষ থেকে আগামী দিনে ট্রাম্প প্রাশনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, তা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহারে যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে মানুষের ওপর আস্থাশীল হওয়ার বিষয়টি, বিশেষ করে পারমাণবিক স্থাপনার মতো বিষয়ে। বর্তমানে চীন কোনো দেশের সঙ্গে সামরিক সংঘাত ছাড়াই নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনাকে সুরক্ষিত রেখেছে। এই মুহূর্তে তাদের রয়েছে ৫০০টির বেশি পারমাণবিক ওয়ারহেড, যা ২০৩০ সাল নাগাদে এক হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের আগামী দিনের নিরাপত্তা তথা বিশ্বব্যবস্থায় আধিপত্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। একদিকে সামরিক দিক দিয়ে তাদের বৈশ্বিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, অন্যদিকে কোনো ধরনের অংশগ্রহণ ছাড়াই চীনের সক্ষমতা বৃদ্ধি তাদের উচ্চাভিলাষী সামরিক ভাবনাকেই তুলে ধরে। তাইওয়ানের বিষয়েও আলোচনায় শির পক্ষ থেকে তাইওয়ানকে নিজেদের অংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অযাচিত হস্তক্ষেপ অনুচিত, বিষয়টি বাইডেনকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এই অঞ্চলটি ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রকে ভবিষতে আরো সতর্কভাবে ভাবতেও অনুরোধ জানানো হয়েছে।    </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় চীন বর্তমানে নিজেকে কতটুকু সক্ষম করে তুলে ধরতে পারছে, সাম্প্রতিক সময়ে এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। রাশিয়ার মতো চীনেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকীর্ণতা থাকলেও দেশটি দীর্ঘদিন ধরে শাসন করছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি)। এই সিসিপির ভেতর শির অবস্থা বর্তমানে খুবই শক্তিশালী। বলা যায়, একচ্ছত্র আধিপত্যের বলে তিনি বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় চীনের আধিপত্যকে বৃদ্ধি করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। চীনের ক্রমাগত বাণিজ্যিক আধিপত্যের কারণে মার্কিন রাজনীতিকেও এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন নেতৃত্ব হোঁচট খাচ্ছে জি৭ এবং জি২০ দেশগুলোর চীনের অর্থনৈতিক শক্তির প্রতি সমীহের কারণে। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব অর্থনীতির আরেক চালিকাশক্তি ব্রিকস জোটে চীনের প্রভাব ভারতের মতো দেশকেও সরাসরি চীনের বিরুদ্ধাচরণ করতে নিরুৎসাহ করছে। পেরুর রাজধানী লিমা থেকে এপেক শীর্ষ সম্মেলন শেষ করে শি এখন অবস্থান করছেন ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো শহরে। সেখানে জি২০ সম্মেলনে অংশ নেবেন তিনি। এর আগের বছর ভারতে অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো (যেখানে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো সদস্য) জলবায়ু পরিবর্তন এবং যুদ্ধের মতো বিষয়গুলো নিয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতর ৮৫ শতাংশ এবং বিশ্ববাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের দখল এই জি২০ দেশগুলোর কাছে। বলা চলে সমগ্র বিশ্বের ভাগ্য নির্ভর করছে এই দেশগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর। তার পরও আমরা এই সম্মলনকে ঘিরে বড় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্যের অভাবের কারণে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন লক্ষ্য করছি না। এবারের রিও সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট শির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে এখানে এমন কিছু সদস্য রয়েছে, যারা ব্রিকস জোটের সদস্য, যাদের কোনো কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সৌদি আরব, রাশিয়া। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রয়েছে ইউরোপীয় জোট এবং জাপান। সামষ্টিকভাবে এবারের সম্মেলনে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া অতীতের সম্মেলনগুলোর মতো দুরূহ। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যা দেখা যায়, তা হচ্ছে জি৭-এর সিদ্ধান্তগুলো চাপিয়ে দেওয়ার এক ধরনের প্রবণতা থাকে জি২০ সম্মেলনে। সে ক্ষেত্রে ব্রিকসের পরিধি বিস্তৃত হয়ে এবার এর সদস্যসংখ্যা ১১-তে উন্নীত হয়েছে, যারা সবাই চীনের অনুসারী বলা যায়। সে ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে চীনের দিক থেকে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে। এর কারণ মূলত আগামী দিনগুলোর জন্য সে নিজেকে এরই মধ্যে অনেক প্রস্তুত করে ফেলেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়, এপেক এবং জি২০ সম্মেলন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই উভয়টিই এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকায়, একটি পেরু এবং অন্যটি ব্রাজিলে। লিমায় এপেক সম্মেলনে অংশ নেওয়ার আগে তিনি সপ্তাহব্যাপী লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। উল্লেখ্য, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্রের ঘরের উঠানে তাদের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানো বলে মনে করেন অনেকে। শি তাঁর বিভিন্ন আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে প্রকারান্তরে ইঙ্গিত করে অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের স্বার্থে একতরফাবাদ এবং সুরক্ষাবাদকে প্রত্যাখ্যান করার অনুরোধ জানান। এটি মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি একটি আগাম ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেবল ট্রাম্প নয়, বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকেও চীনের প্রতি কিছু বিষয়; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এআই, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং সেমিকন্ডাক্টরের মতো খাতগুলোতে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনার সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের আশু করারোপ মোকাবেলায় চীনকে অনেক সাবধানী নীতি অবলম্বন করার প্রয়োজন রয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের হ্যাকিংয়ের অভিযোগ বারবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকেও চীনের ওপর নজরদারির জন্য দোষারোপ করা হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব কিছু মিলিয়ে চীনকে এখন একসঙ্গে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। একদিকে জি২০ এবং এপেকের মতো বৈশ্বিক ফোরামে নিজেদের কর্তৃত্বকে আরো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কূটনৈতিক প্রজ্ঞা বৃদ্ধি করা; অন্যদিকে বিআরআই এবং ব্রিকসের মতো জোটগুলো, যেখানে চীনের একচ্ছত্র প্রাধান্য রয়েছে, সেখানে অন্য দেশগুলোর আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করা। এরই মধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে তারা ইতিবাচকভাবে কাজ করছে। বলা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি কী হবে, এটি আগাম জানা রয়েছে চীনের এবং এই লক্ষ্যে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবেলায় তারা নিজেদের প্রস্তুত করছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><a href="mailto:mfulka@yahoo.com" style="color:blue; text-decoration:underline">mfulka@yahoo.com</a></span></span></span></span></p>