<p>ইন্দোনেশিয়ার সংবিধান Undang-Undang Dasar Negara Republik Indonesia (UUD 1945) নামে পরিচিত। ইন্দোনেশিয়া ডাচ উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে ১৯৪৫ সালে। স্বাধীনতার পরের দিন ১৮ আগস্ট ১৯৪৫ সালে গৃহীত হয় সংবিধানটি, যা ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক, সামাজিক, ও সাংস্কৃতিক ভিত্তির মূল স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে।</p> <p>সংবিধানটি ৩৭টি ধারা নিয়ে গঠিত। ১৯৯৮ সালে স্বৈরাচারী শাসক সুহার্তোর পদত্যাগের পর সংবিধানে বেশ কিছু সংশোধনী আনা হয়। উল্লেখযোগ্য সংস্কারগুলো ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে সম্পন্ন হয়।</p> <p>ইন্দোনেশিয়ার সংবিধান ইসলামী আইন বা শরিয়াভিত্তিক আইনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেনি। তবে দেশটিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মুসলিম ধর্মীয় আইন প্রয়োগের সুযোগ আছে। বিশেষভাবে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে (Aceh) শরিয়া আইন চালু রয়েছে, যা স্থানীয়ভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নীতি হিসেবে স্বীকৃত। আচেহ প্রদেশের শরিয়া আইন ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় সংবিধানের অধীনেই কার্যকর, যা ইন্দোনেশিয়ার ভৌগোলিক এবং সামাজিক বৈচিত্র্যের প্রতিফলন। </p> <p><strong>শরিয়া আইনের বিভিন্ন ক্ষেত্র ও প্রয়োগ</strong></p> <p>আচেহে শরিয়া আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে যা ইন্দোনেশিয়ার অন্য অঞ্চলে নেই। </p> <p>১. মদ ও মাদকদ্রব্য : আচেহ প্রদেশে শরিয়া আইন অনুযায়ী মদ এবং মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ। আইন লঙ্ঘনকারীদের জন্য শরিয়া আইন অনুযায়ী বেত্রাঘাতের শাস্তি প্রদান করা হয়।</p> <p>২. জুয়া নিষিদ্ধ : শরিয়া আইনের নির্দেশনা অনুযায়ী আচেহ প্রদেশে জুয়া খেলার উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং এতে দোষী সাব্যস্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দেয়া হয়।</p> <p>৩. শালীন পোশাক : নারীদের জন্য শরিয়া মোতাবেক পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক। এর ব্যত্যয় ঘটালে শাস্তি হিসেবে জরিমানা বা প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করা হয়।</p> <p>৪. বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক : শরিয়া আইনে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিষিদ্ধ এবং এই অপরাধের জন্য শরিয়া আদালতে বিচার হয়। প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে শাস্তি হিসেবে বেত্রাঘাতের ব্যবস্থা আছে।</p> <p><strong>শরিয়া আদালত ও বিচারিক প্রক্রিয়া</strong></p> <p>আচেহ প্রদেশের শরিয়া আদালত ‘মাহকামাহ শারিয়াহ’ নামে পরিচিত। এই আদালত মূলত শরিয়া আইন লঙ্ঘনকারীদের বিচার করে এবং যথাযথ শাস্তি প্রদান করে। বিচারিক কার্যক্রমে ‘Wilayatul Hisbah’ নামে শরিয়া পুলিশ কাজ করে, যারা আইন লঙ্ঘনকারীদের চিহ্নিত করে এবং আদালতে প্রেরণ করে। </p> <p><strong>ধর্মবিশ্বাস ও সংবিধানের অবস্থান</strong></p> <p>ইন্দোনেশিয়ার সংবিধান ধর্মবিশ্বাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং ধর্মীয় স্বাধীনতাকে সমর্থন দেয়। </p> <p>২৯-(খ) ধারা: এটি ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম এবং অমুসলিম উভয় নাগরিককেই স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার দেয় এবং ধর্মীয় বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। ইন্দোনেশিয়ার এই ধারাটি ধর্মীয় সমতার একটি উদাহরণ। মুসলিমদের জন্য এটি তাদের ধর্মীয় কার্যক্রম পালন এবং ইসলামিক সংস্কৃতির বিকাশের সুযোগ দেয়। একইসাথে, অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও তাদের নিজস্ব ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে সমান স্বাধীনতা ভোগ করেন।</p> <p><strong>শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মের ভূমিকা</strong></p> <p>ইন্দোনেশিয়ার সংবিধানের ৩১তম ধারা শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করে এবং শিক্ষার মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। ইন্দোনেশিয়ার স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা বাধ্যতামূলকভাবে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করে, যা তাদের নিজেদের ধর্মের ওপর ভিত্তি করে থাকে। এই শিক্ষাব্যবস্থা মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামী শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করে এবং একই সাথে অন্যান্য ধর্মের শিক্ষার্থীদেরও তাদের নিজ নিজ ধর্ম সম্পর্কে শিক্ষার সুযোগ দেয়। এটি ধর্মীয় সহনশীলতার চর্চা এবং একটি মুসলিম-অধ্যুষিত রাষ্ট্রে ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সম্মান প্রদর্শনকে স্পষ্ট করে।</p> <p>৩৩তম ধারা : এই ধারায় অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার, সামাজিক সমতা এবং সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইসলামের মূল্যবোধে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং দারিদ্র্য বিমোচনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, যা ইন্দোনেশিয়ার সংবিধানেও প্রতিফলিত হয়েছে।</p> <p>৩৪তম ধারা: দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণের জন্য রাষ্ট্র দায়িত্বশীল, যা ইসলামের সামাজিক দায়িত্ববোধের ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।</p> <p>ইন্দোনেশিয়ার উন্নয়ন এটাই প্রমাণ করে যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজ একটি আধুনিক, বহুত্ববাদী এবং উদার রাষ্ট্র হিসেবে সফল হতে পারে। ধর্মীয় আদর্শ এবং আধুনিকতাকে একত্রিত করে ইন্দোনেশিয়া একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।</p> <p><em>সূত্র : প্রবন্ধ : Islamic Law in Contemporary Indonesia: Ideas and Institutions. Institute of Southeast Asian Studies; The Implementation of Islamic Law in Contemporary Aceh, Indonesia. Oxford University Press.</em><br />  </p>