<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের কার্যক্রম ব্যাহত হয় করোনা মহামারির সময়। পরে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ। এরই ধারাবাহিকতায় আসে ডলার সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি। পশ্চিমা বাজারগুলোতে কমে আসে চাকরির চাহিদা। এমন পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে অথবা স্থগিত রাখতে হয়েছে জনবল নিয়োগের নানা পরিকল্পনা। বর্তমানে সব কিছু স্বাভাবিক। তবে দেশ সম্পূর্ণভাবে সংকট থেকে উত্তরণ পেয়েছে কি না, এটি নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এখনো শিল্প-কারখানায় নানা রকমের ষড়যন্ত্র বিদ্যমান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তার পরও এখন অনেক প্রতিষ্ঠান চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে। ফলে চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যে কালো মেঘ ছিল, তা কাটতে শুরু করছে। সরকারি চাকরিতে মানুষের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এখনো তিন লাখ ৭০ হাজার ৪৪৭টি পদ শূন্য। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল পাঁচ লাখের বেশি। নানা কারণে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হওয়ায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদগুলো পূরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিতে হবে। সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তরে আর কোনো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। সরকার চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, যা খুবই ইতিবাচক এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ হবে। তবে চাকরির বয়সসীমা বাড়ালেই হবে না, দরকার ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। কর্মসংস্থান না বাড়াতে পারলে চাকরির বয়স বাড়িয়ে দেশের কোনো লাভ হবে না। কর্মসংস্থান সৃষ্টি নিয়ে সরকারের একটি রোডম্যাপ তৈরি করা জরুরি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারি চাকরির তুলনায় বেসরকারি খাতের চাকরি সেভাবে আকর্ষণীয় নয়। দেশে মোট বেকারের ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। বাংলাদেশে ১০০ জন স্নাতকধারীর ৪৭ জনই বেকার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করা ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছে। ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি পান। গত বছরের শেষ তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বেকার বেড়েছে প্রায় আড়াই লাখ। প্রাথমিকভাবে পাঁচ লাখ তরুণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে সেটি অর্থনীতিতে বড় গতি আনতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অতিক্রম করছে। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে। একটি জাতির জীবনে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা একবারই আসে এবং তা সাধারণত ৩০ বছর স্থায়ী হয়। আমাদের এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে (কালের কণ্ঠ, ১৪ মে ২০২৪)। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/22-09-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="240" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/22-09-2024/2/kalerkantho-ed-2a.jpg" style="float:left" width="350" />এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া সহজ করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে প্রধানত বিসিএস ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার পদের জন্য লোকবলও নিয়োগ দেয় সরকার। এসব পদে নিয়োগ দিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে চূড়ান্ত চাকরি পাওয়া পর্যন্ত প্রায় দু-তিন বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ও লেগে যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া আরো সহজ করার বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করবে বলে আশা করছি। তবে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও চাকরিপ্রত্যাশীদের দীর্ঘদিনের দাবি, আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি, বিষয়টি নিয়ে বর্তমান সরকারের অগ্রগতি প্রশংসার দাবিদার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকার দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিশ্বের ১৬২টি দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর। এসব বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের দাবি অনেক প্রাসঙ্গিক। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার জন্য অনেক দিন ধরে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা দাবি জানিয়ে আসছে। এ ছাড়া এই দাবিতে অনেক ছাত্রসংগঠন মানববন্ধনও করে। সার্বিক বিবেচনায় দাবিটি প্রাসঙ্গিক এবং যৌক্তিক।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কারণ করোনার কারণে চাকরির বিজ্ঞপ্তি ছিল না এবং অনেক চাকরিপ্রার্থীর আবেদনের বয়স শেষ হয়ে গেছে। শুধু তাঁদের কথাই বলছি না। সব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের ওপর করোনা এবং নানা রকম চ্যালেঞ্জের কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এমনকি বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন কিন্তু প্রলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করে সম্পূর্ণ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে কি না, বলা যাচ্ছে না। তা নিয়ে কিছুটা জটিলতা হতে পারে। তবে অতীতে চাকরিপ্রত্যাশীদের বয়সে পাঁচ মাস বা তার চেয়ে বেশি ছাড় দিয়েছিল সরকার। কিন্তু তা বেশি কাজে আসেনি বলে মনে হচ্ছে। অর্থাৎ করোনা, দেশীয় বা আন্তর্জাতিক সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে চাকরির বয়স ৩২ থেকে ৩৫ বছর করা বা সীমা তুলে দেওয়া উচিত। এটি সরকারের শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অর্থাৎ এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হবে। কারণ যে শিক্ষার্থীর ২৫ বছরে তাঁর স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার কথা ছিল, করোনা বা নানা কারণে তা আর সম্ভব হবে না। এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শেষ করতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় বেশি লাগবে। যদি করোনা না থাকত, তাহলেই তাঁরা পাঁচ বছর চাকরির জন্য সময় পেতেন, এখন সেই সময় কমে কারো জন্য চার বছর কিংবা কারো জন্য চার বছর ছয় মাস থাকবে সরকারি চাকরিতে আবেদনের জন্য। তাই করোনার সময়কে ট্রানজিশন পিরিয়ড হিসেবে চিন্তা করে সরকারি চাকরির আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানো সময়ের দাবি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও বাস্তবতার নিরিখে এটি সময়োচিত সিদ্ধান্ত হবে। তবে চাকরিতে আবেদনের বয়স বৃদ্ধি করা হলেও অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি করা যাবে না। কারণ অবসরের বয়স বৃদ্ধি করা হলে ভবিষ্যতে বেকারত্বের হার বেড়ে যেতে পারে। সর্বশেষ ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে শুধু অবসরের বয়স ৫৭ থেকে বাড়িয়ে সাধারণের জন্য ৫৯ বছর আর মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৬০ বছর করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো দাবিদাওয়া ছিল না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৪ সালের এপ্রিল-জুন সময়ে দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৪০ হাজারে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থান কমেছে প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার। তাই সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এবং উদ্যাক্তা সৃষ্টি করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উল্লেখ্য, অনেক দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৫৫ বছর পর্যন্ত রয়েছে। এমনকি কোথাও কোথাও ৫৯ বছর পর্যন্ত। এ ছাড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০, শ্রীলঙ্কায় ৪৫, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৫, ইতালিতে ৩৫ এবং ফ্রান্সে ৪০ বছর। এমনকি অনেক দেশে আগ্রহী ব্যক্তিরা অবসরগ্রহণের ঠিক আগের দিনও সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারেন। তবে আমরা কেন পারব না। শিক্ষা ও শিক্ষার্থী বান্ধব প্রধান উপদেষ্টা এই অন্তর্বর্তী সময়ে এ বিষয়টি বাস্তবায়ন করবেন বলে আশা করছি।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তথ্যপদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ</span></span></span></span></p>