<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা তার প্রজনন এবং বসবাসের জন্য নতুন নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ায় তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বাড়ার সঙ্গে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি এবং ডেঙ্গুর সংক্রমণও বাড়ছে, যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ডেঙ্গু ভাইরাসের সরাসরি সম্পর্ক নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা যে করোনাভাইরাসের মতো ডেঙ্গু ভাইরাসও পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/28-10-2024/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="261" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/28-10-2024/kalerkantho-ed-2a.jpg" style="float:left" width="350" />বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিবছরই বর্ষাকালে এই রোগের প্রাদুর্ভাব তীব্র হয়। বিশেষত বর্ষার সময় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশা দ্রুত প্রজনন করে। রোগীর সংখ্যা বছরে বছরে পরিবর্তিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান শুধু ঢাকার ৭৭টি হাসপাতাল এবং কয়েকটি জেলার হাসপাতালের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। বাস্তবতা হচ্ছে, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ছোট-বড় ক্লিনিকে আরো অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে এবং এমন অনেক রোগী আছে, যারা ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে। প্রতিবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ একই সময়ে ফিরে আসছে এবং আমরা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছি। এডিস মশা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নতুন রোগীদের নিয়ে অক্টোবরের প্রথম ২৬ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৪ হাজার ৭২৫ জন এবং এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১০৮ জনের। গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭০৫। সাম্প্রতিক আক্রান্তের পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যাচ্ছে, সঠিক পদক্ষেপ  না নিলে সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডেঙ্গুর প্রকোপ কম বা বেশি হওয়ার পেছনে জনসাধারণের সচেতনতা, এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে তাদের সহযোগিতা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমি উল্লেখ করেছিলাম যে অক্টোবর মাসটি ডেঙ্গুর জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে। আমাদের গবেষণায়ও সেই পূর্বাভাস বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের গবেষণাদল ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার ঘনত্বের যে গবেষণা করছে, তা থেকেও স্পষ্টভাবে জানা যাচ্ছে যে পরিস্থিতি খুবই জটিল। ব্রুটো ইনডেক্স নামে পরিচিত মশার ঘনত্বের সূচক যদি কোনো এলাকায় ২০-এর ওপরে থাকে, তবে সেই এলাকায় ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রভৃতি রোগের ঝুঁকি বেশি হয়। আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে ব্রুটো ইনডেক্স এখনো ২০-এর ওপরে রয়ে গেছে। এডিস মশার ঘনত্ব এমনই থাকলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে শীতের মধ্যেও ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের দেশে সাধারণত শীতকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ কমে আসে। কারণ ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় মশার প্রজনন কম হয়। তবে দেখা যাচ্ছে যে এ বছর পরিস্থিতি ব্যতিক্রমী হতে পারে। তাই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো তৎপর হতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও বেশিসংখ্যক ডেঙ্গু রোগীর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে নভেম্বর-ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অন্যান্য বছরের মতো খুব বেশি কমবে না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যে এলাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে, সেখানে দ্রুত হটস্পট ম্যানেজমেন্ট প্রয়োজন। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি নেওয়া অপরিহার্য। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনসাধারণকেও এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হতে হবে। ডেঙ্গু রোগীর বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে সেই বাড়ির চারপাশে নিয়মিত ফগিং করে এডিস মশা নিধন করতে হবে, যাতে মশাটি অন্য কাউকে সংক্রমিত করতে না পারে। হাসপাতালগুলোতেও নিয়মিত ফগিং করতে হবে এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের সর্বদা মশারির নিচে রাখতে হবে, যাতে এডিস মশা রোগীদের কাছাকাছি আসতে না পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আগামী ১৫ দিন হটস্পট এলাকাগুলোতে মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের জন্য ব্যাপক কার্যক্রম চালালে হয়তো নভেম্বরে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীকে এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হতে হবে। নগরবাসী তাদের ঘরবাড়ি ও আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে সচেতন থাকলে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ঢাকার মতো ডেঙ্গুর অবস্থা যাতে অন্য শহরগুলোতে না হয়, সে জন্য প্রতিটি নগরের প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে। সঠিক সময়ে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নিলে ডেঙ্গু সমস্যা মোকাবেলা সম্ভব।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বাস করি, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় প্রশাসন এবং নগরবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি টেকসই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ডেঙ্গু সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হতে পারে, যা শুধু ডেঙ্গু নয়, অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : কীটতত্ত্ববিদ, গবেষক ও অধ্যাপক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p>