<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আপনি কি এমন কোনো পেশায় নিয়োজিত হতে চান, যার সঙ্গে জনগণের স্বার্থ বা ভালোমন্দ, এমনকি জীবন-মৃত্যুর সম্পর্ক আছে? তাহলে আপনাকে সেই পেশার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পড়াশোনা করে জ্ঞান অর্জন করতে হবে, পরীক্ষায় পাস করতে হবে, হাতে-কলমে শিক্ষানবিশ হিসেবে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে, পেশাগত ছাড়পত্র বা লাইসেন্স অর্জনের পরীক্ষায় সফল হতে হবে, আর শুধু তখনই আপনি সেই পেশায় কাজ করতে পারবেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কল্পনা করুন, আরো শত শত যাত্রীর সঙ্গে আপনি বাংলাদেশ বিমানে আরোহণ করেছেন, একটু পরেই বিমান আকাশে উড়বে, এমন সময় বাংলাদেশের খুবই প্রতাপশালী এক রাজনীতিবিদ বিমানের প্রথম শ্রেণি থেকে উঠে এসে বললেন, তাঁর খুব ইচ্ছা তিনিই বিমানটি চালাবেন। কারণ অনেক আগে তিনি কিছুদিন বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন, তবে লাইসেন্স নেওয়ার পরীক্ষাটি আর দেওয়া হয়নি। তিনি আপনাদের হাত তুলে তাঁকে সমর্থন করার জন্য আহ্বান জানালেন, আপনারা কি সানন্দে তাঁকে সমর্থন করবেন, না ভয়ে চিৎকার করে উঠবেন?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অথচ এই মানুষটি যদি কখনো আপনাদের বলেন তাঁকে ভোট দিয়ে দেশ চালানোর ভার তাঁর হাতে তুলে দিতে। আপনি কি তাঁর কাছে দেশ চালানোর কোনো লাইসেন্স দেখতে চাইবেন? নিশ্চয়ই না। কারণ রাজনীতিবিদদের যোগ্যতার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কোনো ছাড়পত্র বা লাইসেন্স দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই, আছে ভোটের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা, আর সে জন্য অযোগ্য, বাকসর্বস্ব কোনো সুযোগসন্ধানী রাজনীতিবিদের হাতে দেশ তুলে দিয়ে একটি জাতির সর্বনাশের অনেক কাহিনি ইতিহাসে লেখা আছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র পড়লেই আপনি উদ্দীপ্ত হবেন। কারণ জনগণ ও দেশের কল্যাণে যা কিছু করা প্রয়োজন তার একটি দীর্ঘ তালিকা এবং তা বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার ও আশ্বাস তাতে থাকে, শুধু থাকে না কিভাবে তা বাস্তবায়িত হবে তার কোনো পরিকল্পনা বা রূপরেখা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দলের গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র ও নেতাদের বক্তব্য জনগণের সামনে এত চমকদার ও মোহনীয়ভাবে উপস্থাপন করা হয় যে আপনার মনে হতে পারে এটি একটি পণ্যের বিজ্ঞাপন, যার গ্রাহক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার সব স্বপ্ন বাস্তবায়নের সূচনা হবে। প্রতিটি দল আপনার কাছে তাদের অঙ্গীকার পূরণের প্রাথমিক মূল্য হিসেবে আপনার সমর্থন চায় আর ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য চায় ভোট অর্থাৎ একবার ক্ষমতায় যেতে পারলেই তারা তাদের সব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="বিনা পরীক্ষায় পাস ও দেশের সর্বনাশ!" height="219" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/25-11-2024/Untitled-1f.jpg" style="float:left" width="336" />বাস্তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান ও একমাত্র লক্ষ্য থাকে আগে ক্ষমতায় যাওয়া, তারপর দেশ ও জনগণের জন্য অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া অর্থাৎ পরিস্থিতি বুঝে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। এই ভুল পদক্ষেপের কারণে ক্ষমতায় যাওয়ার পর নির্বাচিত সরকারগুলো একের পর এক সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে দিশাহারা হয়ে যায় অথবা সংকটময় মুহূর্তে সঠিক ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, সেই সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে, তারাও একই কায়দায় মানুষকে আশ্বাস দিতে থাকে যে তাদের ক্ষমতায় বসালেই তারা সব সংকটের নিরসন করতে পারবে, ক্ষমতায় যাওয়ার কয়েক বছর পর তাদের একই অবস্থা হয়। কারণ কোনো রাজনৈতিক দলের দেশ গঠনের কোনো সার্বিক পরিকল্পনা নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যাদের ভোট নিয়ে অথবা যাদের ভোট চুরি করে যে দল ও তাদের নেতারা ক্ষমতায় যান, সেই জনগণকেই পরে তাঁদের ভয় লাগতে শুরু করে, তখন তাঁরা যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চান, তাঁরা তাঁদের দলের লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করে, প্রশাসনের নিরপেক্ষ চরিত্র নষ্ট করে সেখানে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ করেন, যাতে বিপদের সময়ে তাঁরা রক্ষকের ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাঁরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে অবাধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ছাড়পত্র দেন, যাতে ক্ষমতাসীনের বিন্দুমাত্র সমালোচনা করলে কাউকে নৃশংস শারীরিক অত্যাচার, গুম বা বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা বা নিপীড়নমূলক মামলায় বন্দি করা যায়, তাঁরা নির্ভীক ও সত্যবাদী সাংবাদিককে দিনের পর দিন বিনা বিচারে জেলে আটকিয়ে রেখে নৃশংস অত্যাচার করে হত্যা করেন আর কুখ্যাত ও গণধি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‌</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কৃত শত শত কোটি টাকার লুটেরাকে দুর্নীতি দমনের নাটক করে কিছুদিন জেলে আটকে রাখার পর মুক্তি দিয়ে সমাজে পুনর্বাসিত করেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোনো একটি দলের পক্ষে স্রেফ পেশিশক্তির বলে দেশ শাসন করা ও দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়, গণতন্ত্রের মিথ্যা লেবাস পরে কখনোই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় না, যে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় গুণী, জ্ঞানী, ত্যাগী, সৎ ও দক্ষ জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ থাকে না, সেখানে অপরাধী, দুর্নীতিবাজ, গণবিরোধী, সুবিধাবাদী ও অযোগ্য ব্যক্তিরা তাঁদের অর্থ ও পেশিশক্তির বলে জনপ্রতিনিধির আসন দখল করে নেন, নির্বাচনের পরে রাষ্ট্রীয় ও জনগণের সম্পত্তি আত্মসাৎ করে তাঁরা তাঁদের সম্পদের পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করে তাঁদের দুঃশাসন চিরস্থায়ী করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে কোনো দল ক্ষমতায় যাওয়ার আগে তাদের দেশ চালানোর যোগ্যতা ও দক্ষতা বিচার করার কোনো কার্যকর পদ্ধতি নেই, দেশের জনগণ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের জ্বালাময়ী বক্তৃতা, প্রতিশ্রুতি আর বিপক্ষ দল ও তাদের নেতাদের সমালোচনা শুনে কাকে সমর্থন করবে সে বিষয়ে মনস্থির করে, অনেক সময় কাউকে সমর্থন করার মতো না পেলে অতীতে ক্ষমতাচ্যুত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মন্দর ভালো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কে সমর্থন করে এবং পরবর্তী সময়ে তাঁদের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সত্যিকারের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো নিয়ে তাদের রাজনৈতিক নেতারা জনগণের সামনে বিতর্কে অংশ নেন, তাঁরা কিভাবে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করবেন, দারিদ্র্য বিমোচন থেকে শুরু করে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করবেন, দেশের প্রতিরক্ষা সুদৃঢ় করবেন, সে ব্যাপারে তাঁদের দলের নীতি ও পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেন। তাঁদের বিতর্ক সব গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়, যাতে জনগণ কাকে নির্বাচিত করলে দেশের ও জনগণের কল্যাণ হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিতর্ক শেষ হওয়ার পর জনগণের আস্থাভাজন জরিপ সংস্থাগুলো নেতাদের বিষয়ে জনগণের মতামত যাচাই করে তাঁদের প্রতি জনসমর্থনের হার প্রকাশ করে। বাংলাদেশের ৫০ বছরের অস্তিত্বে কোনো দলের শীর্ষতম নেতা বা রাজনৈতিক দল এ ধরনের বিতর্কে অংশ নেয়নি, কোনো সরকার কখনো বিতর্ক আয়োজনের ফলপ্রসূ উদ্যোগও নেয়নি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও রাজনৈতিক নেতারা যদি সত্যি দেশের কল্যাণ করতে চান, তাহলে তাঁদের সর্বান্তঃকরণে নিস্বার্থ হতে হবে, তাঁদের স্বীকার করতে হবে যে কোনো বিশেষ একজন নেতা বা কোনো বিশেষ একটি দল বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন ও জনগণের সর্বাত্মক কল্যাণ করার ক্ষমতা রাখে না। দেশ গঠনে, জনগণের কল্যাণে কতগুলো জাতীয় বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সব দল ও তাদের বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ জরুরি, যাতে সরকার পরিবর্তন হলেও ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিটি রাজনৈতিক দলের উচিত ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই দেশের সমস্যা সমাধানের জন্য বাস্তবমুখী ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রূপরেখা তৈরি করা ও তার যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য জনসমক্ষে উপস্থাপন করা, যাতে শুধু বিশেষজ্ঞরা নয়, দল-মত-নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিক সেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে পারে ও মতামত দিতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের টিকে থাকার জন্য কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে সব সময়ে নজর দিতে হবে। সর্বস্তরে দুর্নীতির অবসান, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা, খাদ্য ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, বিদেশ থেকে আমদানীকৃত জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা, নেপাল ও ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত নদীগুলোর সুষম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং বন্যা নিরোধ করা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উন্নত দেশগুলোতে দেশের রাজনৈতিক নেতারা, তাঁদের দলের কর্মীরা ও সাধারণভাবে দেশের জনগণ দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে ব্যাপক জ্ঞান রাখে। ফলে রাজনৈতিক নেতারা শুধু ফাঁকা বক্তৃতা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারেন না। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ যাঁরা ক্ষমতায় যেতে চান, আইন করে তাঁদের ও তাঁদের দলের যোগ্যতা বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনুষ্ঠিত অবাধ বিতর্ক ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে যাচাই করার ব্যবস্থা করা উচিত, তা না হলে বাংলাদেশের যোগ্য ও দক্ষ রাজনীতিবিদরা অযোগ্য, অদক্ষ, অদূরদর্শী, সুযোগসন্ধানী, স্বার্থপর ও নীতিহীন রাজনীতিবিদদের ষড়যন্ত্র পার হয়ে দেশের নেতৃত্বে আসতে পারবেন না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : বাংলাদেশ টেলিভিশনের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান আইন আদালতের (১৯৮৩-১৯৮৭) উপস্থাপক ব্যারিস্টার ও সলিসিটর, কানাডা</span></span></span></span></p> <p> </p>