<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছয়-সাত বছর আগে একটা এনজিও থেইক্কা অল্প কিছু টাকা লোন নিছিলাম। শর্ত ছিল এক বছরের মইধ্যে শোধ দিতে অইব। খুব চেষ্টা কইরাও এক বছরে শোধ দিতে পারি নাই। এর পরের কতা মনে আইলে কান্দন আহে। নিজের যা কিছু আছে সব বেইচ্চা কোনো রকমে উদ্ধার অইছি। দুই ছেলেমেয়ে নিয়া খুব বিপদে পড়ছিলাম। পোলা-মাইয়ার পড়ালেহা বন্ধ হইয়া গেছিল প্রায়। তহনই খোঁজ পাইছি, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন থেইক্কা সুদমুক্ত ঋণ দেয়। সেলাইয়ের কাজ জানতাম। বসুন্ধরার ঋণ নিয়া একটা মেশিন কিনছি। টুকটাক কাজ কইরা সংসারে সচ্ছলতা ফিরাইছি। আমার মাইয়াডা এহন ইন্টারে (ইন্টারমিডিয়েট) পড়ে। পোলাডাও মেট্টিক (এসএসসি) পাস করছে। এইবার লইয়া তিনবারের মতো ঋণ নিতে আইছি। মাইয়াডায়ও ঋণ নিব। হেয়ও সেলাইয়ের কাজ শিখছে। একটা মেশিন কিইন্না মা-মেয়ে কাজ করলে সংসার খুব ভালো চলব। পোলা-মাইয়া দুইডার পড়ালেহাও চালাইতে পারব। পোলার বাপেও কৃষিকাজ করে। ছয় বছর আগে আমার সংসারের যে হাল হইছিল, এহন আর সেইটা নাই। বসুন্ধরার ঋণ নিয়া আমার পরিবারে সচ্ছলতা ফিরা আইছে। পোলা-মাইয়ায় যত দূর পড়বার চায়, তাদের পড়াইতে চাই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ক্ষুদ্রঋণ নিতে এসে বেশ হাসিমুখে কথাগুলো বলছিলেন দুর্গারামপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী হনুফা বেগম।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুরের বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের অফিসসংলগ্ন উপজেলা অডিটরিয়ামে ৭৩তম ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন। তাদের উদ্যোগে ঋণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ময়নাল হোসেন চৌধুরী এবং এফসিএস প্রধান নির্বাহী এম নাসিমুল হাই। তাঁদের হাত থেকে সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ক্ষুদ্রঋণ নেন বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৭টি গ্রামের ৪৮১ জন সুবিধাবঞ্চিত নারী। এক দিনে ৭৮ লাখ পাঁচ হাজার টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। তাঁদের মধ্যে প্রথমবারের মতো ঋণ নিয়েছেন ৫৬ জন। বাকি ৪২৫ জন আগেও ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণ সুদ করে আবার ঋণ নিতে এসেছেন। হনুফা তাঁদেরই একজন। মেয়ে ফাতেমা জান্নাতকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ঋণ নিতে। মা-মেয়ে দুজনের কথা শুনে বোঝা গেল কতটা কষ্টে দিন কাটত তাদের। এখন বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ঋণ নিয়ে তারা স্বাবলম্বী। হনুফা, লাভলি, শেফালি, পারুলরা সবাই খুব কষ্ট করে দিন অতিবাহিত করতেন। এখন তাঁদের পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত একেকটি পরিবারের কথা শুনলে চোখে পানি আসবে যে কারো।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মধ্যনগর গ্রামের শারমিন আক্তারের কোলে মাস ছয়েকের শিশু। গরমে অস্থির বাচ্চাকে বাতাস করছেন আর হাসিমুখে কথা বলছেন। তাঁর সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসার গল্প করতে গিয়ে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমনও সময় ছিল তিন বেলা খাবারের কষ্ট করতাম। আমি সেলাইয়ের কাজ জানি, কিন্তু অভাবের সংসারে সেলাই মেশিন কিনব, সেই সামর্থ্য ছিল না। বসুন্ধরা থেকে গত বছর প্রথম ঋণ নিয়ে একটি সেলাই মেশিন কিনলাম। প্রথমে টুকটাক কাজ করতাম। ধীরে ধীরে আমার কাছে অনেক কাজ আসতে লাগল। আমি বেশ কাজ করতে পারতাম এবং ভালো আয় করা শুরু করলাম। আমার আর খাওয়ার কষ্ট থাকল না। স্বামী-সন্তান নিয়ে এখন বেশ ভালো আছি। আমার ভালো থাকার পেছনের কারিগর বসুন্ধরা গ্রুপ। তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আমার দিন ফিরে এসেছে। এবার ঋণ নিয়ে দুটি ছাগল কিনব। অনেকেই ছাগল পালন করে বেশ লাভবান হয়েছেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দোয়ানী গ্রামের মরিয়ম বেগম এক বছর আগে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুটি ছাগল কিনেছিলেন। দুটি থেকে তাঁর ছাগল হয়েছিল মোট ছয়টি। গত ঈদে ছাগল বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন বলে জানান মরিয়ম। তার পরও তিনটি ছাগল আছে। নতুন করে আবারও কেন ঋণ নিতে এসেছেন জানতে চাইলে মরিয়ম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই টাকার সঙ্গে নিজের কিছু টাকা যোগ করে একটি গরু কিনব। এক বছর গরু পালতে পারলে ভালোই লাভ হবে। বসুন্ধরা আমাগো দিন ফিরাইছে। আল্লায় হেগো ভালো করবেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঋণ নিতে আসা প্রতিটি নারীর গল্পই ভিন্ন ধরনের। তাঁরা জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করে টিকে আছেন। বেশ ভালো করেই টিকে আছেন। তাঁদের এই টিকে থাকার মনোভাব তৈরি করে দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তাঁদের সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ক্ষুদ্রঋণে স্বাবলম্বী হয়েছে কমপক্ষে ২৭ হাজার পরিবার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ডিজিএম মাইমুন কবির বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান এই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে আমাদের ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে আমরা বাঞ্ছারামপুর, নবীনগর ও হোমনা উপজেলার ১০১টি গ্রামের মানুষকে ঋণ বিতরণ করে থাকি। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৩৪০ জন নারী আমাদের ঋণ সহায়তার আওতায় এসেছে। তারা প্রত্যেকেই এখন স্বাবলম্বী। আমাদের এই কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নাসিমুল হাই বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান সাহেব অসহায় অসচ্ছল মানুষকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য এই প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। শুরুর পর থেকেই বসুন্ধরা গ্রুপ ধারাবাহিকভাবে মানুষের কল্যাণে সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ বিতরণ করছে। বাঞ্ছারামপুরের মানুষ ঋণ গ্রহণ করে যেভাবে বিনিয়োগ করছে, তারা বেশিদিন আর অসচ্ছল থাকবে না। তাদের সচ্ছল করে তোলাই গ্রুপের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঋণ নিতে আসা নারীদের উদ্দেশে ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ঋণ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। কোনো ধরনের লাভ ছাড়া এমন কাজ করতে পারে একমাত্র বসুন্ধরা গ্রুপ। গ্রামীণ অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করতে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান নানা ধরনের কাজ করে থাকেন। এই ঋণ বিতরণ তার মধ্যে অন্যতম। এখন পর্যন্ত ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে এবং আদায়ের হার শতভাগ। অনেকের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ঋণ নিয়ে তাঁরা নানা ধরনের কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়েছেন। ঋণগ্রহীতাদের একটাই অনুরোধ করব, বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া এই ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কেউ অপব্যবহার করবেন না, অবৈধ কাজে লাগাবেন না। আপনারা ভালো থাকলে দেশ ভালো থাকবে। বসুন্ধরা গ্রুপ মানুষের কল্যাণে কাজ করে, দেশের কল্যাণে কাজ করে। সবাই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করবেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>