<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাইফুল, তামিম ও জিসান তিন বোনের তিন ছেলে। জীবনের ঝুঁকি জেনেও উত্তাল সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন তাঁরা। সংসারের খরচ জোগাতে গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়াই ছিল তাঁদের একমাত্র পেশা। কিন্তু  এই সমুদ্রযাত্রায় গিয়ে এমন বিপদ ডেকে আনবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তা জানা ছিল না কারো। ২০২৩ সালের এই দিনে (১৭ নভেম্বর) গভীর বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর তিন ট্রলারের ২৫ জেলে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে সাইফুল, তামিম ও জিসানও রয়েছেন। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এফবি হাসান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামক ট্রলারে একসঙ্গে মাছ ধরতে গিয়ে এই তিন খালাতো ভাই নিখোঁজ হয়েছিলেন। তাইতো কান্না থামছে না সাইফুল, তামিম ও জিসানের পরিবারে। উপার্জনক্ষম তিন সদস্যকে হারিয়ে তিন পরিবারের দিন কাটছে অভাব-অনটনে। বুকে পাহাড়সমান কষ্ট নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত পার করছেন সাইফুলের মা জাহানারা বেগম। রাঙ্গাবালীর ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের নয়াভাংগুনী আবাসনে অবস্থিত তাঁদের বাড়িতে কেউ পা রাখলেই তিনি ভাবেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হয়তো তাঁর ছেলের কোনো খবর নিয়ে এসেছেন কেউ। বাড়িতে গিয়ে নিখোঁজ ছেলে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুই চোখের অশ্রু ফেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন জাহানারা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাতি জিজ্ঞেস করে আমার বাবা কই? কিন্তু আমার তো কোনো জবাব নাই। কোথা থেকে তার বাবাকে এনে দিব?</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শাশুড়ির পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন সাইফুলের স্ত্রী কবিতা। এক বছর সাত মাস বয়সী ছেলে ইসানকে নিয়ে কবিতা নিরুপায় হয়ে স্বামী সাইফুলের ফিরে আসার প্রহর গুনছেন। কাঁদতে কাঁদতে যেন চোখের পানিই শুকিয়ে গেছে তাঁর। কবিতা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক বছরেও আমার স্বামীর কোনো খোঁজ পাইনি। সারাক্ষণ ছেলেটা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাবা বাবা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলে ডাকে। আল্লাহ যেন আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাইফুলের খালাতো ভাই জিসানের পরিবারও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। জিসানের মা নারজু বেগম পথ চেয়ে থাকেন ছেলে ফিরে আসবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন বিশ্বাস নিয়ে। ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে বসবাসরত টানাপড়েনের সংসারে মা-বাবা, দুই ভাই-বোনসহ পাঁচ সদস্যের সংসারে জিসান ছিল তাঁদের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জিসানের বাড়িতে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা নারজু বেগম। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জিসানের আয়ের টাকায় সংসার চলত। এখন অনেক কষ্টে আছি। কিস্তির জ্বালা, সংসারের খরচ, ছেলেমেয়ে পড়ানোর খরচ ঠিকমতো চালাতে পারছি না। না খেয়েও যদি থাকি, তবুও ছেলেকে ফিরে পেলে মনে কোন কষ্ট থাকবে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভিন্নতা নেই সাইফুল-জিসানের আরেক খালাতো ভাই তামিমের পরিবারেও।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুধু সাইফুল, তামিম আর জিসান নয়; নিখোঁজ বাকি ২২ জেলে পরিবারও একই শোক বয়ে বেড়াচ্ছে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস গড়িয়ে বছর হলেও ২৫ জেলের কারো সন্ধান মেলেনি এখনো। তারা কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন? বেঁচে আছেন কি না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেই প্রশ্ন খুঁজছেন পরিবারের লোকেরা। সংসারের উপার্জনক্ষম এসব মানুষের কোনো সন্ধান না পাওয়ায় দিশাহারা তারা। তবুও প্রিয়জন ফিরে আসার প্রতীক্ষায় আজও পথ চেয়ে আছেন কারো মা-বাবা, কারো ভাই-বোন এবং কারো স্ত্রী-সন্তান। তবে অনেকেরই ধারণা, বেঁচে থাকলে হয়তো ঝড়ের তাণ্ডবে প্রতিবেশী কোনো দেশের (ভারত-মায়ানমার) জলসীমায় প্রবেশ করায় সে দেশের জেলহাজতে আছেন তাঁরা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত বছরের ১৭ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় মিধিলিতে রাঙ্গাবালীর কাউখালী গ্রামের হাসান জোমাদ্দারের মালিকানাধীন জেলে ট্রলারের আটজন, মৌডুবি ইউনিয়নের কাজিকান্দা গ্রামের দিদার মৃধার ট্রলারের আটজন এবং একই এলাকার হিমু হাওলাদারের মালিকানাধীন ট্রলারের ৯ জন নিখোঁজ হয়েছিলেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="margin-left:24px; text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাঙ্গাবালী উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিখোঁজ জেলেদের তালিকা মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের সন্ধানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p>