<p>বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত চিংড়ি। কিন্তু উৎপাদন কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে এর রপ্তানি। আর এ জন্যই বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাগদা বা গলদার পাশাপাশি দেশে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে ভেনামি চিংড়ির চাষ। খুলনা ও কক্সবাজার থেকে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করে এখন ভেনামি চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। খুলনা জেলায় ১২ জন চাষি ২৫ হেক্টর জমিতে এবার বাণিজ্যিকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষ করছেন বলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সাধারণ ঘেরে বাগদার চেয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভেনামি চিংড়ি চাষ করা গেলে অন্তত তিন থেকে চার গুণ উৎপাদন বেশি হয় বলেও মনে করছেন মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তবে ভেনামি চাষে দেশের জিআই পণ্য বাগদা চাষে কোনো ক্ষতি করবে না বলেও সংশ্লিষ্টরা উল্লেখ করেন।</p> <p>মৎস্য বিভাগ বলছে, খুলনার পাইকগাছা নোনা পানি কেন্দ্রে ২০২১ সালে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেন যশোরের একটি মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানার মালিক শ্যামল দাস। পর পর দুই বছর পরীক্ষামূলক চাষে সফল হওয়ায় গত বছর থেকে সরকারের পক্ষ থেকে এর বাণিজ্যিক চাষের অনুমোদন দেওয়া হয়। ভেনামির পাশাপাশি আধা নিবিড় পদ্ধতির বাগদা চাষেও এগিয়ে যাচ্ছেন অনেক চাষি। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে খুলনা অঞ্চল থেকে ২৪ হাজার ১০৪ টন হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হলেও বিদায়ি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) রপ্তানি হয় ১৫ হাজার ৪৫১ টন।</p> <p>মৎস্য অধিদপ্তরের মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ বলছে, স্থানীয় বাজারে চিংড়ির চাহিদা পূরণ করেই বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিশেষ করে এখনো তেমন পরিচিতি না পাওয়ায় ভেনামি চিংড়িই বাজারে চাকা হিসেবেই কিনছেন ক্রেতারা।</p> <p>খুলনার পাইকগাছায় অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নোনা পানি কেন্দ্রের ছয়টি পুকুরে ২০২১ ও ২০২২ সালে পরীক্ষামূলক ভেনামি চাষ করে সফল হন শ্যামল দাস। তিনি দুই বছর ধরে বাণিজ্যিক চাষেও সফল হয়েছেন। এবার তিনি খুলনার বটিয়াঘাটার চকশৈলমারিতে ২০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ছয়টি পুকুরে ভেনামি চাষ করেন। তিনটি পুকুর থেকে এরই মধ্যে চিংড়ি আহরণ করে প্রতি হেক্টরে ১০ হাজার কেজি করে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন।</p> <p>ওই প্রকল্পের সার্বক্ষণিক তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন প্রসেনজিত রায়। তিনি বলেন, ‘১০২ দিনে প্রতিটি ভেনামি চিংড়ির ওজন হয়েছে ২৪ গ্রাম। ১০ লাখ পোনা ছেড়ে শতকরা ৮৫ শতাংশ পাওয়া গেছে।’</p> <p>খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, বহির্বিশ্বে ভেনামির চাহিদা থাকায় দেশে এর বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে। খুলনা জেলায় এবার ২৫ হেক্টর জমিতে ভেনামির চাষ হচ্ছে। হেক্টরপ্রতি ১০ টনেরও বেশি উৎপাদন হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। জেলার বটিয়াঘাটা, দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া উপজেলার ১২ জন চাষি ভেনামি এবং ১৮৫ জন আধা নিবিড় পদ্ধতির বাগদা চাষ করছেন।</p> <p> </p>