<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে দুই চোখ হারিয়ে আবেদুল ইসলামের জীবনে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। অর্থাভাবে তাঁর চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবার। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় আর্থিক সংকটে পড়েছে তারা। শুধু একটি ঘর ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রংপুর সুপারমার্কেটের সামনে মাস্ক বিক্রি করতেন আবেদুল ইসলাম (৪০)। গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের রাবার বুলেটে তাঁর দুই চোখে নেমে এসেছে অন্ধকার। তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মহানগরীর আমাশু কুকরুল এলাকার মো. নুরুল ইসলামের ছেলে আবেদুল ইসলাম। পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী। বিভিন্ন মার্কেটের সামনে মাস্ক বিক্রি করতেন। মা-বাবা বেঁচে থাকলেও অভাবের কারণে তাঁরাও সন্তানের পাশে দাঁড়াতে পারছেন না। আবেদুলের ছোট বোন রুমানা আক্তার মিতু ভাইকে নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেছেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই দিন চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করা হয় জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে। সেখানে চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সঞ্জয় কুমার দাসকে দেখান। পরে ২১ জুলাই অপারেশন করে তাঁর চোখের গুলি বের করলেও রেটিনা ফেটে যাওয়ায় ভারতের চেন্নাইয়ে নিয়ে যেতে বলেন। তবে টাকার অভাবে আর ভারতে যাওয়া হয়নি। বর্তমানে ঢাকার ইস্পাহানি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আর চোখের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। বাঁ চোখ কখনো ভালো হবে না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন তথ্য দেন তাঁর ছোট বোন মিতু।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বড় ভাই রাসেল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেদিন ছিল ১৯ জুলাই শুক্রবার। অনেকেই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। আমার ছোট ভাইও অংশগ্রহণ করে। ওই দিন সন্ধ্যার দিকে নগরীর সুপারমার্কেটের সামনে গেলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি করে। পুলিশের গুলি ভাইয়ের দুই চোখ ও শরীরে লাগে। এখন ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার, এত টাকা খরচ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি আরো বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছোট ভাইয়ের পায়ে, হাতে ও চোখে ১৫০টির বেশি গুলি লাগে। এ সময় ভাইকে কয়েকজন আন্দোলনকারী উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরের দিন জ্ঞান  ফেরে ভাইয়ের। হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, তার চোখের অবস্থা খারাপ। পরে তাকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক টাকা দরকার ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য। এখনো ঢাকায় চিকিৎসা চলছে। কিছু টাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা চিকিৎসার জন্য দিয়েছেন। সরকার থেকে কিছু সহযোগিতা করে। তবে তা দিয়ে এই চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। এ পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খচর হয় ভাইয়ের চিকিৎসায়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আহত আবেদুল ইসলাম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেদিন পুলিশের গুলি ঝড়ের মতো শরীরে লাগে। এরপর আর কিছুই জানি না। আমার চিকিৎসার জন্য কিছু টাকা ঋণ করে ঢাকার জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাই। সেখানে সঠিক চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ঢাকার ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবার।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে তাঁর দুই চোখ হারানোর পথে। দুই চোখে দেখতে পারেন না। বিছানায় ছটফট করছেন। চোখের রেটিনা ফেটে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য চায় তাঁর মা-বাবা ও পরিবার।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবেদুলের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবেদ সেদিন সবাইকে ফাঁকি দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়। পরে জানতে পারি, তার শরীরে ও দুই চোখে গুলি লেগেছে। চোখ দিয়ে রক্ত ঝরেছে। প্রচুর রক্তপাত হয়েছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> তিনি বলেন, ধারদেনা করে ছেলের চিকিৎসা করা হচ্ছে। তবু আশা, তাঁর ছেলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন। তিনি ছেলের কথা বলেন আর কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছেলেকে সুস্থ দেখতে সবার কাছে আর্থিক সহায়তা কামনা করেন আবেদুলের মা-বাবা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবেদুলের ছোট বোন রুমানা আক্তার মিতু বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বড় ভাইকে ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়েছি। কিন্তু টাকার অভাবে ভাইয়ের বাঁ চোখ কখনো ভালো হবে না। আর চোখে দেখতে পারবে না। এখন ঢাকার ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ডাক্তার আয়শা সিদ্দিকা তাঁর চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্যদিকে চোখ হারানের পথে আবেদুল ইসলাম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মা-বাবা, ভাই-বোনদের দেখার মতো চোখ নেই। তবু গভীর বিস্ময়ে আমি টের পাই আজ নতুন বাংলাদেশের স্বাদ।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এমন অভিব্যক্তিই যেন ঠিকরে বের হচ্ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে চোখ হারানোর শঙ্কায় কাতর আবেদুল ইসলামের মুখচ্ছবি থেকে। তাঁর অভিব্যক্তি, স্বৈরশাসক ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের সাধারণ মানুষ প্রাণ খুলে মুক্ত বাতাস উপভোগ করছে আর দুচোখ দিয়ে নতুন বাংলাদেশ দেখছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবেদুলের সারা শরীরে দেড় শতাধিক গুলি লাগে। এর মধ্যে ৫০টি গুলি বের করেন চিকিৎসক। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে দেশের মানুষ সম্ভাবনার নতুন সূর্য দেখলেও তাঁর জীবনে নেমে এসেছে এক ভয়াবহ অন্ধকার। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকার ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক আয়শা সিদ্দিকা জানিয়েছেন, তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন, তবে দরিদ্র এই পরিবারের পক্ষে তা বহন করা অসম্ভব। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চিকিৎসক যেভাবে বলেছেন, তাতে ওর দুই চোখ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। উন্নত চিকিৎসা করালে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দরিদ্র পরিবারের পক্ষে উন্নত চিকিৎসা করানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কেউ ছেলেটার খোঁজখবর নিচ্ছে না। আমি বড় অসহায় হয়ে পড়ছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বললেন আবেদুলের বাবা নুরুল ইসলাম। ছেলের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে না আনা গেলে পরিবারের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবেদুলের ভাই জানান, এ ঘটনায় তাঁর বাবা নুরুল ইসলাম ৫৯ জনের নাম দিয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। কিন্তু মামলাটি অসম্পূর্ণ হওয়ায় পরিবার তা প্রত্যাহার করে। তিনি জানান, তাঁরা মামলা করবেন। আগে ভাইয়ের চিকিৎসা, এরপর মামলা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে আবেদুল ইসলামের দুই চোখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে। সে অনেক অসুস্থ, তার চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। আবেদুল ইসলামের পরিবারের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>