<p>বেশ কিছুদিন ধরেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ থেকে শুরু করে শীর্ষ পদগুলো শূন্য রয়েছে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও ভেঙে পড়েছে প্রশাসনিক কাঠামো। পরিস্থিতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরা পদত্যাগ করেছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। তবে শীর্ষ পদগুলো শূন্য থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা পুরোদমে চলছে।</p> <p>এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় গত ১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ডিন এবং অধ্যাপকদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাকির ছায়াদউল্লাহ খানকে চলমান পরিস্থিতিতে উপাচার্য নিয়োগের আগ পর্যন্ত প্রশাসনিক এবং আর্থিক বিষয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জাকির ছায়াদউল্লাহ খান দাবি করেছেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সহায়তার কারণে শীর্ষ পদগুলো শূন্য থাকার পরও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম অতীতের চেয়ে অনেক ভালো চলছে। তিনি সার্বিক কার্যক্রমে কোনো স্থবিরতা নেই বলে দাবি করেন। যদিও তাঁর ঠিক বিপরীত দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি। </p> <p>বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ৫ আগস্টের পর দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিকসহ সার্বিক কার্যক্রম ভেঙে পড়ে। উপাচার্য থেকে শুরু করে উপ-উপাচার্য, প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা পরিচালক, ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেলের (আইকিউএসি) পরিচালক, পরিবহন প্রশাসক, তিন হলের প্রাধ্যক্ষসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা পদত্যাগ করেন।  </p> <p>বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন এবং অধ্যাপকদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মো. জাকির ছায়াদউল্লাহ খানকে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক এবং আর্থিক বিষয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা পুরোপুরিভাবে চলছে।</p> <p>তবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. আবু তাহের বলেন, ‘উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ শীর্ষ পদগুলো শূন্য থাকায় সার্বিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। আমাদের একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে শুধু জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক কাজগুলো করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত উপাচার্য ছাড়া নেওয়া সম্ভব নয়। অনেকের পদোন্নতি আটকে আছে, একাডেমিক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। শুধু পরীক্ষা, ফলাফলের কাজগুলো এবং বেতন-ভাতার কাজ বর্তমানে সচল আছে। উপাচার্য ছাড়া আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘অতীতে দেখা গেছে বাইরে থেকে কাউকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় সেভাবে লাভবান হয়নি। কারণ বাইরের কেউ এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সেভাবে জানেন না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কিছু বুঝতেই সময় শেষ হয়ে যায়। বর্তমানে আমাদের এখানেও অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের মধ্য থেকে কাউকে উপাচার্য নিয়োগ দিলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় উপকৃত হবে।’</p> <p>বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থী জানান, বিগত সময়ে উপাচার্য ও শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছিল তাঁদের শিক্ষাজীবন। উপাচার্য ও শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে দেশে প্রথমবারের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি আর দেখতে চান না শিক্ষার্থীরা। তাঁরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নির্দলীয় উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানান।</p> <p>বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক এবং আর্থিক বিষয়ের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মো. জাকির ছায়াদউল্লাহ খান বলেন, ‘আমাদের প্রক্টরিয়াল বডি পুরোপুরি খালি, কয়েকটি হলে প্রভোস্ট ও হাউস টিউটর নেই। আমি দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনই বিভিন্ন বিভাগের ডিন, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং যেসব হলে প্রভোস্ট ও হাউস টিউটর আছে—তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বসেছি। কারণ নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ আমার নেই, যার কারণে যারা আছে তাদের নিয়েই সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আপনারা লক্ষ করলে দেখবেন, আলহামদুলিল্লাহ, বিশ্ববিদ্যালয় এখন অনেক ভালো চলছে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করছে শিক্ষার্থীরা।’</p> <p> </p>