<p>কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারীরা বর্তমানে অপসারণ আতঙ্কে রয়েছেন। রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন হওয়ার পর পরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগে জড়িতদের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছেন ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে একটি স্কুলে বাধ্য হয়ে প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। আরেকটি বিদ্যালয়ের প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে প্রশাসনিক কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।</p> <p>উপজেলা মাধ্যমিক অফিস সূত্র মতে, ভৈরব উপজেলায় মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৪টি ও মাদরাসা রয়েছে ৯টি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী।</p> <p>বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলের প্রভাব খাটিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া টানা ১৫ বছর দল ক্ষমতায় থাকার কারণে বেশির ভাগ স্কুল-কলেজ কমিটির সভাপতির পদ দখলে রাখেন সরকারদলীয় ব্যক্তিরা। প্রভাব খাটিয়ে করেন ব্যাপক অনিয়ম। তবে বর্তমানে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি বিলুপ্ত করায় এসব অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ভার এসে পড়েছে প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের ওপর। অনিয়মে জড়িত প্রত্যেক শিক্ষকদের অপসারণ দাবি করছেন ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা।</p> <p>গত মঙ্গলবার পৌর এলাকার হাজী জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে হাজারো ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন। পরে মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, অহিদুর রহমান বিএনসিসি শিক্ষক থেকে অবৈধভাবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে নানা অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায়েরও অভিযোগ করেন তাঁরা।</p> <p>এর আগে শনিবার ভৈরব সরকারি কে বি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে অনিয়মের অভিযোগে এক দফা দাবিতে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও করেন ছাত্র-ছাত্রীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন স্কুলের প্রধান শিক্ষক নূরুল ইসলাম।</p> <p>এদিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শ্রীনগর ইউনিয়নের শ্রীনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ফিরিস্তির ১১টি অভিযোগের বিবরণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যালয়ে জমা পড়েছে। অভিযোগের মধ্যে প্রধান অভিযোগ হলো বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান ২০১৬ সাল থেকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতির পদে রয়েছেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে শ্রীনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাহালুল আলম বাচ্চুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন।</p> <p>মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার স্বপ্না বেগম বলেন, যদি কোন স্কুলের অনিয়ম থাকে তাহলে নিয়ম অনুযায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে হবে।</p> <p>ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদুয়ান রাফি বলেন, আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে  প্রতিবেদন পাঠাবো।</p> <p>ভৈরবের ইউএনও শাকিলা বিনতে মতিন কালের কণ্ঠকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ও মাদ্রাসাপ্রধানদের নিয়ে আলোচনা করেছি।</p> <p> </p>