<p>রাজশাহীর বানেশ্বর থেকে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক পুনর্নির্মাণের কাজ ১০ মাস আগে শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গর্ত তৈরি হয়েছে। অথচ ৫৪ কিলোমিটার এই সড়কে খরচ হয়েছে ৫৫৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি বুঝিয়ে দেন ঠিকাদাররা।</p> <p>রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) তথ্য বলছে, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর থেকে চারঘাট-বাঘা-নাটোরের লালপুর হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ৫৪ কিলোমিটার। ১৮ ফুট থেকে সড়কটি করা হয়েছে ৩৪ ফুট চওড়া। সড়কের প্রশস্তকরণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। পরে আরো এক বছর সময় বাড়িয়ে কাজ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। সাতজন ঠিকাদার সাতটি প্যাকেজে কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন।</p> <p>সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চারঘাটের সিনেমা হল মোড়, ঘোষের মোড়, কাঁকড়ামারী বাজার, হাজির ঢালান, নুরুর বটতলা, বাঘার মীরগঞ্জ মোড়, বিনোদনপুর বাজার, আটঘরিয়া মোড়, মনিগ্রাম বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় পিচ উঠে গেছে। প্রায় তিন মাস ধরে সড়কের পিচ উঠে যাচ্ছে। রাস্তাটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে পিচ উঠে যাওয়া রাস্তাগুলো আবার ছোট ছোট পাথর ও বিটুমিন দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। রাস্তার কোথাও কোথাও উঁচু-নিচু সৃষ্টি হয়েছে।</p> <p>এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় অল্প দিনেই সড়ক এমন বেহাল হয়েছে। সড়ক নির্মাণের পর এরই মধ্যে কয়েকবার বিভিন্ন জায়গায় মেরামত করা হয়েছে। তা-ও আবার গর্ত হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে গর্তে পানি জমে থাকে।</p> <p>রাজশাহী শহরের সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরাসরি যোগাযোগের এ সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে ছয় ফুট ফুটপাত রাখা হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য পাশে নির্মাণ করা হয়েছে নালা। বাজার এলাকায় পানি জমে এমন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে ঢালাই সড়ক। ব্যয়বহুল ও গুরুত্বপূর্ণ হলেও বছর না ঘুরতেই বেহাল হয়ে পড়েছে অনেক জায়গা।</p> <p>সড়ক বিভাগের প্রকৌশলীরা বলছেন, নির্মাণ ত্রুটি নয়, ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে এমন হয়েছে। নির্মাণের পরবর্তী দুই বছর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিনা খরচে ত্রুটি মেরামত করবে। ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো পরিদর্শন করে সড়ক যেন টেকসই হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।</p> <p>রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাকিম বলেন, ‘একটা সড়ক নির্মাণে অনেকের সংশ্লিষ্টতা থাকে। তাই কোনো স্তরে কাজে ত্রুটি হতে পারে। কোনো সমস্যা থাকলে আমরা আবার কাজ করে দেব।’</p> <p>রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. বুলবুল আহমেদ বলেন, সড়কের পুরো উপরিভাগ এমন হলে মেরামত করেও পুরোপুরি ঠিক হবে না। স্থায়ী সমাধানের জন্য পুরো সড়কের ওপরের আবরণ তুলে নতুন করে কাজ করতে হবে।</p> <p>এদিকে এই সড়কে ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। সড়কের দুই পাশে বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা থাকায় উল্টো পাশের গাড়িচালকরা সহজে দেখতে পান না। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।</p> <p>জানা গেছে, চারঘাটের সরদহ ট্রাফিক মোড়, পাইলট স্কুল মোড়, ফকিরের মোড়, সিনেমা হল মোড় ও কাঁকড়ামারী বাজার মোড় ঝুঁকিপূর্ণ। বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জসহ মনিগ্রাম ইউনিয়নে পাঁচটি, বাজুবাঘার চণ্ডীপুর বাজারের পূর্ব পাশে চারটি ও নাটোরের লালপুর উপজেলা সদরে প্রবেশের মুখে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ দুটি বাঁক। সরু রাস্তা থাকতে এসব বাঁক যতটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, রাস্তা প্রস্থে বড় হওয়ার পর সেগুলো আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে।</p> <p>এসব বাঁক সোজা করার জন্য নতুন করে প্রকল্প নিতে পারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি জায়গা ব্যবহার করে সড়কের বাঁকগুলো সোজা করা সম্ভব হয়নি। জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। পরে আরেকটি প্রকল্প নিয়ে এই কাজগুলো শেষ করা যেতে পারে। জমি অধিগ্রহণ করে সড়ক নির্মাণ করা হলে কাজে অনেক দেরি হতো।</p> <p> </p> <p> </p>