<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত মঙ্গলবার রাত ১১টা। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে শরীরে কাঁথা জড়িয়ে রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে বসে আছেন এক ব্যক্তি। পাশেই বালিশ ও বড় ব্যাগ রাখা। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের টিকিট হাতে এক নারী এসে লোকটিকে বলছেন, বিছানা খালি নাই। চলো ঢাকা মেডিক্যালে যাই। সেখানে হয়তো শয্যা পাওয়া যাবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কাছে গিয়ে জানা গেছে, লোকটি ডেঙ্গু আক্রান্ত। নাম মো. আজাদ মিয়া। থাকেন ভাটারা নুরের চালা এলাকায়। তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। এক দিন আগে পরীক্ষা করে জানতে পারেন ডেঙ্গুর সঙ্গে টাইফয়েড আক্রান্ত হয়েছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মো. আজাদের মতো গতকাল রবিবার সকাল ১০ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের সামনে অন্তত ১৫ জন রোগীকে ডেঙ্গু নিয়ে এমন গুরুতর অবস্থায় শয্যা না পেয়ে ফেরত যেতে দেখা গেছে। এসব রোগীর অনেকে এসেছে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে। তবে বেশির ভাগ মুগদা, মাণ্ডা, বাসাবো, মানিকনগর, ধলপুর, যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়া এলাকার বাসিন্দা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডেঙ্গু রোগীদের শয্যা না থাকায় ফেরত দেওয়া হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নে হাসপাতাল পরিচালক ডা. এস এম হাসিবুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, আগে অনেক রোগী মেঝেতে থাকার কারণে মশারি টানাতে পারা যেত না। এতে সাধারণ রোগীদেরও ডেঙ্গু হয়ে যাচ্ছিল। এ কারণে শয্যার বাইরে কোনো রোগী রাখছি না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালটিতে প্রাপ্তবয়স্ক ডেঙ্গু রোগীদের জন্য শয্যা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০টি। যার একটিও খালি নেই। গতকাল পর্যন্ত ৯৬ জন ভর্তি রোগীর মাঝে প্রাপ্তবয়স্ক ৭০ জন এবং ২৬ জন শিশু। আর তাঁদের মাঝে পুরুষ ৫৪ জন এবং নারী ৪২ জন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুপর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত গণমাধ্যমের জন্য সময় নির্ধারণ করায় নিয়ম মেনে ১২টার পর ডেঙ্গু ওয়ার্ডে প্রবেশের সুযোগ হয়। হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা চলছে অষ্টম তলায়। বড়দের জন্য হাসপাতালের ১১ তলায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাসপাতালের ভেতরে মশার উৎপাত : </span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১১ তলায়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ভর্তি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার মো. আরাফাত হোসেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রচুর পরিমাণ ডেঙ্গু রোগী আসছে। বেশির ভাগই</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> মুগদা, মাণ্ডা, বাসাবো, মানিকনগর এলাকার। এখন বিছানা ফাঁকা না থাকলে ভর্তি নিচ্ছে না। রোগীরা ঘুরে অন্য হাসপাতালে যাচ্ছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে মশারি টানানো বাধ্যতামূলক হলেও গরমের কারণে দিনের বেলা বেশির ভাগ মানুষ মশারির বাইরে থাকে। দুপুরে আপনারা সাংবাদিকরা যখন আসেন, তখন সবাই মশারি টানিয়ে রাখে। আবার রাত হলে মশারির ভেতরে থাকে। সন্ধ্যার পর হাসপাতালের ভেতরে মশায় টিকা যায় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স বলেন, হাসপাতালে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের বেশির ভাগ আশপাশের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে থাকেন। বাসায় গেলে মশার কামড় খেতে হয়, হাসপাতালে এলেও একই দশা। গত মাসে আমাদের এক স্টাফ নার্স ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। মাঝেমধ্যে শুনি ডাক্তারও আসেন না, তাঁরাও জ্বরে ভুগছেন। এমনটা নিয়মিতই দেখা যাচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেশি জটিলতা নিয়ে আসছেন নারীরা : </span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাসপাতালের</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ১১ তলায় চিকিৎসাধীন আকলিমা আক্তার। সাত দিন জ্বর থাকার পর ডেঙ্গু পরীক্ষা করে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর মা শম্পা বলেন, আট দিন ধরে তাঁরা হাসপাতালে। বাসাবোর এই বাসিন্দা বলেন, আকলিমা প্রায় সুস্থ হলেও রাত থেকে ডায়রিয়া শুরু হয়েছে। মেয়ের পেছনে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে জানালেন গৃহকর্মীর কাজ করা শম্পা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সত্যজিৎ সাহা বলেন, গর্ভকালীন সময়ে নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যে কারণে মৃত্যুহার অন্য রোগীদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি থাকে। এ ছাড়া ঋতুস্রাবকালে কোনো নারী ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। কারণ এই সময়ে তাঁদের শরীরে রক্তচাপ অস্বাভাবিক কম থাকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেপ্টেম্বরেই চিকিৎসা নিয়েছে তিন হাজার রোগী : </span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিচালক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ডা. এস এম হাসিবুল ইসলাম জানান, হাসপাতালটিতে প্রতিনিয়ত ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়েছে তিন হাজার ২৭০ জন। এর মধ্যে শিশু ৮৩৯ জন। এই সময়ে শিশুসহ মারা গেছে আটজন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা নিয়েছে আট হাজার ৮১০ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩২ জনের।</span></span></span></span></p> <p><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী হাসপাতালে ভর্তি : </span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এডিস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> মশাবাহী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো এক হাজার ২২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যা চলতি বছরে এক দিনে সর্বোচ্চ। এই সময়ে রোগটিতে মৃত্যু হয় আরো চারজন। গতকাল দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির এমন তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে গত ৬ অক্টোবর সর্বোচ্চ এক হাজার ২২১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। </span></span></p>