<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাত্র সাত মাস আগে ১৬ বছরের কিশোরী বিথি খাতুনের বিয়ে হয় কলেজছাত্র আশিকুর রহমান আশিকের (২৪) সঙ্গে। স্বপ্ন ছিল সুখের সংসার গড়ার। কিন্তু হাতে মেহেদীর দাগ না শুকাতেই বিধবা হয় বিথি। স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয় দুটি পরিবারের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে আহত হন আশিক। এরপর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করেও ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে। ২৮ দিন পর গত রবিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মারা যান তিনি। স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ আশিকের স্ত্রী বিথি খাতুন। যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিহত আশিক কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের সাতভিটা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম চাঁদ মিয়া। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। আশিক পাঁচপীর ডিগ্রি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। আশিকের ছোট ভাই আতিকুল ইসলামও একই কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিবারের দাবি, পড়াশোনার পাশাপাশি কলেজছাত্র আশিক বাবা চাঁদ মিয়ার সঙ্গে দিনমজুরির কাজ করতেন, যা আয় হতো তা দিয়ে চার ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচসহ সংসার চলত তাঁদের। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয়রা জানায়, তারা (আশিকের পরিবার) ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের শিকার হয়ে ১২ বছর বাঁধের ওপরে আশ্রিত ছিল। বাঁধ সংস্কার শুরু হলে গত চার বছর আগে সাতভিটার বকশীগঞ্জ বাজারের পাশে চাঁদ মিয়া ও তাঁর ভাইয়েরা মিলে প্রায় ১২ শতক জমিতে বসবাস করে আসছেন। গত চার আগস্ট পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে আশিক ও তাঁর ছোট ভাই আতিকুল ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হন। তাদের আহত অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে আতিকুল সুস্থ হলেও আশিকের মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় তাঁর অবস্থার অবনতি হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিহত আশিকের ভাই আতিকুল ইসলাম জানান, গত ৪ আগস্ট কুড়িগ্রাম শহরের শাপলা চত্বরে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থী-জনতার সংঘর্ষে মাথায় ঢিল লেগে আহত হন আশিক। এর পরের দিন আঘাতের কারণে তাঁর জ্বর ও বমি শুরু হয়। তাঁর অবস্থার অবনতি হলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা ১৮ আগস্ট ঢাকায় রেফার করেন। পরে ধানমণ্ডির একটি হাসপাতালে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত চিকিৎসা দেওয়া হলেও ক্রমে তাঁর অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল। ২৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হলে সেখানে তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রবিবার দুপুরে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। গতকাল দুপুরে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিহত কলেজ শিক্ষার্থী আশিকের চাচি খোতেজা ও ববিতা বেগম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছোট ছোট দুটি সন্তান রেখে আশিকের মা মারা যায়। এরপর ওর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু কেউ কখনো সত্মা বুঝতে পারতেন না। ছেলে দুটি অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের ছিল। এলাকায় তাদের সুনাম রয়েছে। কিন্তু তারা যে আন্দোলনে গেছে এটা আমরা জানতাম না। কাউকে বলেও যায়নি।  আহত হয়ে ফিরে আসার পর শুনছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আশিকের বাবা চাঁদ মিয়া বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই। অনেক কষ্ট করে সন্তানদের পড়াশোনা করাচ্ছি। অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমার দুই ছেলেও আন্দোলনে গেছে। যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে আমি তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>