<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অগণন মানুষ। কেউ নির্বাক। কেউ অস্ফুট আর্তনাদ করছেন। কেউবা ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। তবে তাঁদের সবার চোখের ভাষা ছিল একই রকম। তাঁদের অসহায় চোখগুলোর সহজ-সরল অনুবাদ কী করে দেওয়া সম্ভব? না, থাক। ওগুলো যে চোখের নোনা জলে এখন ভেজা! আর তাঁদের ক্ষতবিক্ষত মনগুলো সাগরের উত্তাল জলরাশির মতো চারদিকে আছড়ে পড়ে এই গ্রহবাসীকে কী যেন বার্তা দিতে চাইছে, কী যেন ফরিয়াদ করতে চাইছে। আপনারা কি শুনতে পাচ্ছেন তাঁদের বুকফাটা কান্নার উদ্দাম কলরব?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৬২ বছরের রফিকুল ইসলাম রাজধানীর রায়েরবাগ এলাকায় থাকেন। শেখ হাসিনা সরকারের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছেলে নাসির উদ্দিন (৩৮) শহীদ হন। গত ২০ জুলাই রায়েরবাগ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন দর্জি নাসির। ২৩ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুগদা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। ৯ ভাই-বোনের মাঝে তিনিই ছিলেন আয়কর্তা। সেই নাসিরকে হারিয়ে দিশাহারা পুরো পরিবার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনে দিনব্যাপী আন্দোলনে শহীদ পরিবার নিয়ে আয়োজিত এক সভায় কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে রফিকুল এসব কথা জানান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শহীদ নাসিরের বাবা রফিক বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা গরিব, দিনে আনি দিনে খাই। আমাদের সবার দায়িত্ব ছিল নাসিরের কাঁধে। নাসির সেদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে শহীদ হয়। আল্লাহর মেহেরবানিতে হাসিনার পতন হয়েছে। মামলা করেছি যাত্রাবাড়ী থানায়। আমরা চাই খুনিদের বিচার হোক।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> তিনি জানান, নাসিরকে হারিয়ে তিনি নিজেই এখন উপার্জনের চেষ্টা করছেন। শুধু রফিকুলই নন, তাঁর মতো আরো অনেকে জুলাই-আগস্ট মাসে হারিয়েছেন প্রিয় সন্তান, ভাই কিংবা বাবা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রবিবার রাজধানীতে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়সভা করে জামায়াতে ইসলামী। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনে সে সভায় আসেন শহীদ পরিবারের সদস্যরাসহ বিভিন্ন সেক্টরের মানুষ। অসহায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শহীদ মিজানুরের (২৯) বাবা কামাল হোসেন বলেন, রামপুরা বনশ্রী জি-ব্লকে ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হন তাঁর ছেলে। পরে পঙ্গু হাসপাতালে সেদিনই মারা যান। তিনি মুদি দোকান চালাতেন। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তিনি নিরুপায়। দুই বছরের একটা নাতি আছে। আর্থিক টানাপড়েন ও নাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছেলে যে দোকানটা চালাত, সেটি কোনো রকমে আমার এক মেয়েকে নিয়ে চালানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু বয়স তো হলো...শরীরেও মানতে চায় না। আমি কিডনি ও হার্টের রোগী। আর কদিন বাঁচব...? এরপর আমার নাতিটার কী হইব?</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সকালে তিনি ও তাঁর স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এখানে এসে মিজানের মতো আরো অনেক তরুণ শহীদের কথা জানতে পেরেছেন তিনি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯ জুলাই উত্তর বাড্ডায় শহীদ হওয়া সুমন শিকদারের বাবা ইউসুফ শিকদার বলেন, পিকআপচালক ছেলেকে হারিয়ে দিশাহারা তাঁর পরিবার। দুই ছেলের মধ্যে তিনি ছিলেন বড় এবং একমাত্র উপার্জনক্ষম। ছেলের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারকে গ্রামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী পাঠিয়ে দিয়েছেন। ছেলে হত্যার মামলা দেখাশোনা করার চেষ্টা করছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুপুরে সম্মেলন কেন্দ্রের গেটে চোখ মুছতে মুছতে জোবাইদা খাতুন নামের এক নারী বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মিরপুর-১ এলাকায় আন্দোলনে ১৯ জুলাই আমার রবিনকে গুলিতে ঝাঁঝরা করেছে পুলিশ। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এ সময় পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা এবং একই দিনে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় শহীদ সাকিব রায়হানের (১৯) বোন আন্নি আক্তারও ভাই হারানোর কষ্টে নীরবে আতনার্দ করে চোখের জল ফেলেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁদের মতো যাত্রাবাড়ীতে শহীদ সাইফুল্লাহ আল মাসুদ, পল্টনের রাব্বি আলম, লিটন উদ্দিন ও নতুনবাজারের নাঈমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপকালে দেখা গেছে, সবাই স্বজন হারানোর ব্যথায় কাতর। তাঁদের কেউ কেউ কান্নার জন্য কথাও বলতে পারছিলেন না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুপুর ২টার দিকে খোরশেদ আলম ও ফয়সাল নামের দুই তরুণকে দেখা যায় অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে। তাঁরা দুজনে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত হন। এখনো তাঁদের শরীরে রয়ে গেছে স্প্লিন্টার ও গুলির ক্ষত। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁরা বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সেদিন মিরপুর-১০ মোড়ের দিকে যাওয়ার সময় আমাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। সেখানে অনেকের মতো আমরা দুজনও আহত হই। এ সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ও ক্ষমতাসীন দলের লোকজন পাবলিকের দিকে নির্বিচারে গুলি চালায়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাবেক চাকরিজীবী খোরশেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওইদিন (১৯ জুলাই) যাঁরা ঘটনাস্থলে ছিলেন না তাঁদের বলে বোঝাতে পারব না, কী ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে গোপনে চিকিৎসা নিয়েছি। ২৯ জুলাই অপারেশন হয়। এখনো অনেক আহতের চিকিৎসা চলছে। তবে চাকরিটি আর এখন করতে পারছি না। পরিবারের বোঝা হয়ে রইলাম মনে হচ্ছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p>