<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজিতে এফডিআরের নামে ৩০ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এই বিপুল অর্থ জমা রাখার রসিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হলেও বর্তমানে জানা গেছে তা জাল। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের নামে মামলা হওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট অর্থ পরিচালকের ওপর দায় চাপিয়ে টাকা আত্মসাৎ করা বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সূত্র জানায়, গত আগস্ট মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন নিয়ে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় থেকে ব্যয় নির্বাহ না হওয়ায় এফডিআর ভাঙার প্রশ্ন ওঠে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নথিপত্রে প্রায় ৩০ কোটি টাকার এফডিআর থাকার তথ্য পাওয়া যায়। সেখান থেকে তাত্ক্ষণিক ব্র্যাক ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও আইডিএলসির প্রায় ১২ কোটি টাকার এফডিআর ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা কাগজপত্র নিয়ে ব্যাংকে যোগাযোগ করা হলে এ নামে কোনো এফডিআর নেই বলে জানানো হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়টির সব আর্থিক দায়িত্বে থাকা পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের কাছে বাকি ১৮ কোটি টাকার এফডিআরের কাগজপত্র চাওয়া হলে তিনি তা দেখাতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে এফডিআরের যেসব কাগজপত্র জমা রয়েছে, সেগুলোয় বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নামসহ সিলমোহর রয়েছে। যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ব্র্যাক ব্যাংকের উত্তরা শাখায় পাঁচ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এফডিআর করার কাগজপত্র রয়েছে। গত ১৩ জুন ওপেন করা ওই এফডিআরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ১৩ জুন। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শাহ মাখদুম এভিনিউ শাখা, উত্তরায় দুই কোটি টাকার এফডিআরের কাগজপত্র রয়েছে। এক বছর মেয়াদি ওই এফডিআরের মেয়াদ গত ২০ অক্টোবর শেষ হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসিতে পাঁচ কোটি টাকার এফডিআরের কাগজপত্র রয়েছে। এক বছর মেয়াদি এই এফডিআরের মেয়াদ গত ১৭ অক্টোবর শেষ হয়েছে। তবে তিন ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছে, তাদের ব্যাংকে শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির কোনো এফডিআর নেই। এমনকি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক জানিয়েছে, এফডিআরের কাগজে যে কর্মকর্তার স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে, তিনি ওই সময় এই শাখায় কর্মরত ছিলেন না। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত ১১ সেপ্টেম্বর জাল এফডিআরের তথ্য পাওয়ার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর অর্থ পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তুরাগ থানায় ফৌজদারি মামলা করেন বিশ্ববিদ্যায়টির রেজিস্ট্রার পাড় মশিয়ূর রহমান। এরপর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মনিরুল ইসলাম রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।      </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের দুজন সদস্য ওই ৩০ কোটি টাকা জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। অর্থ পরিচালক মনিরুল ইসলাম ২০২১ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পান। তাঁর নিয়োগের অন্যতম সুপারিশদাতা হলেন ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য ডা. আহসানুল কবির ও শেখ তানভীর আহমেদ (রনি)। তাঁদের সঙ্গে মনিরুল ইসলামের সখ্য রয়েছে। ফলে এই দুই ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যের বাইরে গিয়ে মনিরুল ইসলামের অর্থ আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই। বর্তমানে মনিরুল ইসলামকে ফাঁসিয়ে পুরো ঘটনা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বোর্ডের কয়েকজন সদস্য। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এত বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির পরও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক শাহ-ই-আলম এবং ট্রেজারার অধ্যাপক শামসুন নাহার চুপ রয়েছেন। বিষয়টি এখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) অবগত করা হয়নি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক শাহ-ই-আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আইন অনুযায়ী পুরো আর্থিক দায়িত্ব ট্রেজারারের। দুর্ভাগ্য হলো, আমাদের ট্রেজারার পারদর্শী নন। কাজের প্রতি তিনি যত্নশীলও নন। এ কারণে অর্থ পরিচালক একাই সব কিছু সামাল দিতেন। তবে তাঁর অফিসের অন্য কর্মকর্তা এমনকি ব্যাংকের কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। ট্রাস্টি বোর্ডের মিটিং হয়েছে। এখন সিন্ডিকেটের মিটিং হবে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, আমরা বিষয়টি ইউজিসিকে জানাব কি না।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span>  </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত ৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের জরুরি সভা ডাকা হয়। সেখানে রেজিস্ট্রার পাড় মশিয়ূর রহমান জানান, অর্থ পরিচালক মনিরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমা করা ৩০ কোটি টাকার এফডিআরের রসিদ বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে দাখিল করেছেন। কিন্তু তাঁর জমা করা সব কাগজই জাল বলে প্রমাণ হয়েছে। বৈঠকে দুজন ট্রাস্টি বেশির ভাগ কথা বলেছেন। এত বড় জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অর্থ কমিটি থাকবে এবং ওই কমিটির সদস্যদের মেয়াদ হবে তিন বছর। কমিটিতে থাকবেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের তিনজন্য সদস্য, যাঁদের মধ্য থেকে একজন সভাপতি হবেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উপাচার্য, ট্রেজারার, উপাচার্য কর্তৃক মনোনীত একজন বিভাগীয় প্রধান, সিন্ডিকেট কর্তৃক মনোনীত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ দুজন প্রতিনিধি। পরিচালক (অর্থ) এই কমিটির সদস্যসচিব হবেন। এই কমিটি সব ধরনের আর্থিক দায়িত্ব পালন করবে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিতেও নিশ্চয়ই একটি আর্থিক কমিটি ছিল। ফলে ওই ৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার দায় আর্থিক কমিটির ওপরও বর্তায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো লেনদেন উপাচার্য, ট্রেজারার ও অর্থ পরিচালকের স্বাক্ষরে হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব ট্রেজারারের।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইমামুল কবির শান্ত ২০০৩ সালে শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করেন। রাজধানীর উত্তরায় বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস। ২০২০ সালে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে শুরু হয় নানা অনিয়ম। তাঁর ভাই-বোনসহ আত্মীয়-স্বজন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির নেতৃত্বেও আসেন। বর্তমানে ১০ জন ট্রাস্টির মধ্যে সাতজন একই পরিবারের। ফলে কোনো বিষয়ে কারো ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ নেই।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক। বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন ডা. আহসানুল কবির, মিসেস শাহানা বেগম, ডা. আনজুমানারা বেগম, মিসেস আফরোজা বেগম, গোলাম তৌহিদ, শেখ তানভীর আহমেদ, মো. রবিউল ইসলাম, রিয়াসাত ইসলাম খান। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক শাহ-ই-আলম পদাধিকারবলে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকরা জানান, এত ভালো অবস্থানে থাকার পরও পরিবারতন্ত্রের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি সুনাম হারাচ্ছে। গত দুই মাসের বেতন দিতে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তাফিজুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভিকটিম জেলে আছে। তবে এত বড় জালিয়াতিতে গ্রুপ অব পিপল জড়িত আছে। পুলিশ তদন্ত করছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিমও তদন্ত করছে। আইন অনুযায়ী যেহেতু সব আর্থিক দায়িত্ব ট্রেজারারের, তাই আমরা তাঁর কাছেও জবাব চেয়েছি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পারিবারিক ট্রাস্টি বোর্ডের ব্যাপারে মোস্তাফিজুল হক বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকে পারিবারিক ট্রাস্টি বোর্ড দায়িত্ব পালন করছে। তবে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানই বলে গেছেন, তাঁর মৃত্যুর পর আমাকে যেন চেয়ারম্যান করা হয়। ফলে আমিসহ দু-একজন বাইরের আছি। আমরা টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সে চেষ্টাও করছি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p> </p>