<p>কিভাবে প্রতিষ্ঠান গঠিত হয় এবং সমৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে, তা নিয়ে গবেষণার জন্য এবার অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন তিন অর্থনীতিবিদ। তাঁরা হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক ড্যারন আসেমোগলু ও সাইমন জনসন এবং ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর অধ্যাপক জেমস এ রবিনসন।</p> <p>গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে রয়াল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের স্থায়ী সেক্রেটারি প্রফেসর হ্যান্স এলেগ্রেন এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন জাতির মধ্যে সমৃদ্ধি বৃদ্ধিতে যে কারণগুলো মূলত অবদান রাখে, সেগুলো নিয়ে বিস্তৃত গবেষণার জন্য তিন অর্থনীতিবিদকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।</p> <p>অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো দেশ এগিয়ে থাকে এবং কোনো দেশ কেন পিছিয়ে থাকে, সে বিষয়ে নতুন অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছেন এবারের নোবেলজয়ী তিন অর্থনীতিবিদ। এই ব্যবধানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার ব্যবধান। যখন ইউরোপীয়রা পৃথিবীর বড় অংশে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল, তখন সেই সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলোও পরিবর্তিত হয়েছিল। তবে পরিবর্তনগুলো সর্বত্র একইভাবে ঘটেনি, বরং এটি কখনো কখনো নাটকীয়ভাবে ঘটেছিল। যেমন—কিছু কিছু জায়গায় উদ্দেশ্য ছিল আদিবাসীদের শোষণ করা এবং উপনিবেশকারীদের সুবিধার জন্য সম্পদ আহরণ করা। বেশ কিছু উপনিবেশকারী আবার ইউরোপীয় অভিবাসীদের দীর্ঘমেয়াদি সুবিধার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গঠন করেছিল।</p> <p>বিজয়ীরা তাঁদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বৈষম্যের একটি ব্যাখ্যা হলো সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো, যা উপনিবেশের সময় চালু হয়েছিল। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই এমন দেশগুলোতে চালু করা হয়েছিল, যেগুলো উপনিবেশের সময় দরিদ্র ছিল এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণভাবে সমৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছিল। স্বভাবতই সাবেক উপনিবেশগুলো যারা একসময় ধনী ছিল সেগুলো এখন দরিদ্র হয়েছে অথবা এর উল্টোটা ঘটেছে। কিছু দেশ ও তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটায়, এমন পরিস্থিতিতে আটকা পড়ে থাকে। অন্তর্ভুক্তিমূলক এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবর্তন সবার জন্য দীর্ঘমেয়াদি সুবিধার সৃষ্টি করলেও ক্ষমতায় থাকা মানুষের জন্য স্বল্পমেয়াদি লাভ প্রদান করে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থাগুলো গ্যারান্টি দেয় যে তারা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ তাদের ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করবে না। ত্রয়ী বিজয়ীদের মতে, এ কারণে কোনো কোনো দেশ এবং তাদের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো উন্নতি হয় না।</p> <p>ইতিবাচক পরিবর্তনের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য যে অক্ষমতাগুলো কাজ করে, সেগুলোরও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যখন বিপ্লবের হুমকি থাকে, তখন ক্ষমতায় থাকা লোকেরা একটি দ্বিধাদ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়। তারা ক্ষমতায় থাকতে পছন্দ করবে এবং অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনসাধারণকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করবে। কিন্তু জনগণ কখনোই বিশ্বাস করবে না যে পরিস্থিতি স্থির হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা পুনরায় পুরনো ব্যবস্থায় ফিরে আসবে না। শেষ পর্যন্ত একমাত্র বিকল্প হতে পারে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।</p> <p>ড্যারন আসেমোগলু তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ১৯৬৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯২ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কেমব্রিজের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে অধ্যাপনায় নিয়োজিত। তিনি একজন তুর্কি-আমেরিকান অর্থনীতিবিদ, যাঁর রাজনৈতিক অর্থনীতি ও উন্নয়ন অর্থনীতি নিয়ে সুদূরপ্রসারী কাজ রয়েছে; যা তাঁকে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ অর্থনীতিবিদদের একজন করে তুলেছে।</p> <p>সাইমন জনসন যুক্তরাজ্যের শেফিল্ডে ১৯৬৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন যুক্তরাষ্ট্রের কেমব্রিজের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ১৯৮৯ সালে। বর্তমানে একই প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি একজন ব্রিটিশ-আমেরিকান অর্থনীতিবিদ, যিনি অর্থনৈতিক সংকটের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানগুলো যে ভূমিকা পালন করে, তার বিশেষজ্ঞতা অর্জনের জন্য পরিচিত।</p> <p>জেমস এ রবিনসন ১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে অধ্যাপনায় নিয়োজিত। এই অর্থনীতিবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দারিদ্র্য ও সমৃদ্ধির পেছনের অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলোর ব্যাপারে ব্যাপকভাবে অনুসন্ধান ও গবেষণা করেছেন।</p> <p>উল্লেখ্য, আলফ্রেড নোবেলের উইলে পাঁচটি বিষয়ে পুরস্কারের কথা উল্লেখ থাকলেও অর্থনীতিতে পুরস্কার দেওয়ার কথা ছিল না। ১৯৬৮ সাল ‘দ্য ব্যাংক অব সুইডেনের’ নেওয়া এক বিশেষ সিদ্ধান্তে অর্থনীতিতে পুরস্কার প্রদানের কথা ঘোষণা করা হয়। অর্থনীতির পুরস্কারটি নোবেলের অন্যান্য পুরস্কারের মতো একই সময় ঘোষণা এবং প্রদান করা ছাড়াও পুরস্কারের প্রাইজমানি নোবেলের অন্যান্য পুরস্কারের মতো সমান হওয়ায় সম্মাননার দিক থেকে তা নোবেল পুরস্কারের মতোই বিবেচিত হয়। সেই থেকে বিশ্বে অর্থনীতির পুরস্কারটি ‘বিকল্প নোবেল পুরস্কার’ হিসেবে পরিচিতি এবং গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।</p> <p>প্রতিবছর আলফ্রেড নোবেলের প্রয়াণ দিবস ১০ ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।</p> <p> </p>