<p>অতিক্ষুদ্র মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার এবং জিনের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকার ওপর আলো ফেলার স্বীকৃতিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন মার্কিন দুই বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকুন। বহুকোষী প্রাণীর দেহে কিভাবে জিনের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হয়, সে বিষয়ক ধারণার খোলনলচে বদলে দিয়েছে তাঁদের এই গবেষণা।</p> <p>গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট এবারের বিজয়ী হিসেবে ওই দুজনের নাম ঘোষণা করে। নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য বাবদ এক কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার তাঁরা ভাগ করে নেবেন।</p> <p><img alt="মাইক্রোআরএনএ গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের দুজনের নোবেল" height="107" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/08-10-2024/556.jpg" style="float:left" width="109" />কিভাবে বিভিন্ন ধরনের কোষ গঠিত হয়, শুরু থেকেই সে সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকুন। নোবেল অ্যাসেম্বলি সংবাদ সম্মেলনে জানায়, দুই বিজ্ঞানী তাঁদের আবিষ্কারে দেখাতে সক্ষম হয়েছেন যে মাইক্রোআরএনএ মূলত খুব ছোট আরএনএ অণুরই একটি নতুন শ্রেণি, যা জিন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁদের গ্রাউন্ড-ব্রেকিং আবিষ্কারটি হচ্ছে, কিভাবে জিনগুলোকে নিয়ন্ত্রিত করা হয় তার জন্য একটি নতুন প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছেন, যা বহুকোষী জীবের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হয়েছিল। আমরা এখন জানি যে মানুষের জিনোমে এক হাজারেরও বেশি জিন রয়েছে, যা বিভিন্ন মাইক্রোআরএনএর জন্য কোড করে। আশ্চর্যজনক আবিষ্কারটি জিন নিয়ন্ত্রণের একটি নতুন মাত্রা প্রকাশ করেছে, যাকে জীবের বিকাশ ও কার্যকারিতার জন্য মৌলিক গুরুত্ব হিসেবে দেখানো হয়েছে।</p> <p>ক্রমোজোমের মধ্যে সঞ্চিত তথ্যগুলোকে আমাদের শরীরের সব কোষের জন্য একটি নির্দেশনামূলক ম্যানুয়ালের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। প্রতিটি কোষে একই ধরনের ক্রমোজোম থাকে। এ ছাড়া প্রতিটি কোষে ঠিক একই জিনের সেট এবং নির্দেশনাবলির একই ধরনের সেট থাকে। তার পরও বিভিন্ন কোষের ধরন, যেমন—পেশি ও স্নায়ু কোষের মধ্যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কিভাবে এই পার্থক্য উদ্ভূত হয়? উত্তরটি জিন নিয়ন্ত্রিত অংশের মধ্যে নিহিত রয়েছে, যা প্রতিটি কোষকে শুধু প্রাসঙ্গিক নির্দেশনাবলি নির্বাচন করতে দেয়। প্রক্রিয়াটি এটাই নিশ্চিত করে যে প্রতিটি কোষের মধ্যে শুধু সঠিক জিনের সেটই সক্রিয় থাকে।</p> <p>উল্লেখ্য, যখন ডিএনএ অনুলিপি করতে হয়, তখন প্রথমে এটিকে প্রায় অভিন্ন অণুতে কপি করতে হয়, যাকে বলা হয় আরএনএ, যা প্রায়ই প্রোটিন গঠনের দিকে পরিচালিত করে। কিন্তু ছোট মাইক্রোআরএনএ অণু সহজভাবে এটি প্রতিরোধ করতে পারে। এই প্রক্রিয়ারও বিশাল পরিণতি রয়েছে। কারণ প্রোটিনগুলো প্রায়ই প্রাণী ও গাছপালা তৈরি করে। মানুষের শারীরিক সঞ্চালনও কিভাবে করা হয়, তা নিয়ন্ত্রণ করে।</p> <p>অধ্যাপক ফ্রেডরিক সোডারব্লম বলেন, যদি সঠিক পরিমাণে প্রোটিন না থাকে তাহলে প্রক্রিয়ায় প্রায়ই ভুল হয় এবং যা বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের দেহে সঠিক কোষে সঠিক পরিমাণে প্রোটিনের উপস্থিতি বাঞ্ছনীয়, যাতে মাইক্রোআরএনএগুলো সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।</p> <p>গবেষকরা একটি ছোট কৃমির ওপর গবেষণাকর্মটি পরিচালনা করেছিলেন, যার বৈজ্ঞানিক নাম ক্যানোরহ্যাবডিটিস এলিগানস (Caenorhabditis elegans), যা ২০০৬ সালের মেডিসিন পুরস্কারেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। এ বছরের নোবেল পুরস্কারেও সেই ছোট্ট জীবটি ছিল মূল চাবিকাঠি। এই সামান্য ‘প্রাণ’ অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বড় বড় গবেষণার মডেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কৃমি মাত্র এক হাজার কোষ দ্বারা তৈরি হলেও এটি মানুষের মতো একই জাতীয় টিস্যুর মাধ্যমে তৈরি বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন নোবেল কমিটির সদস্য অধ্যাপক ওলে কাম্পে। ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকুন মূলত কিভাবে বিভিন্ন কোষের বিকাশ ঘটে, সে সম্পর্কে আগ্রহী ছিলেন।</p> <p>ভিক্টর অ্যামব্রোস ১৯৫৩ সালের ১ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের হ্যানোভারে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস মেডিক্যাল স্কুল, ওরচেস্টার, এমএতে কর্মরত। গ্যারি রাভকুন একজন আমেরিকান আণবিক জীববিজ্ঞানী এবং তাঁর বয়স ৭০ বছর। বর্তমানে তিনি ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত এবং বোস্টনের হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের জেনেটিকসের অধ্যাপনায় নিয়োজিত।</p> <p> </p> <p> </p>