<p>দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর কোটা পূরণ হচ্ছে না। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১২ হাজার কর্মী পাঠানোর কোটা দিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া, কিন্তু সেই জায়গায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র দুই হাজার ১৮১ জন কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়েছে। অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাকি তিন মাসে ৯ হাজার ৮১৯ জন কর্মী পাঠানো প্রায় অসম্ভব। এ কারণে গত বছরের মতো চলতি বছরও কোটা পূরণ করতে পারছে না বাংলাদেশ।</p> <p>শুধু কোটা পূরণই নয়, বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৪৯ শতাংশ এবং ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৩৭ শতাংশ কর্মী কম গেছেন। বিএমইটির হিসাব বলছে, ২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় মোট কর্মী গেছেন চার হাজার ৯৯৬ জন। এর মধ্যে ওই বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গিয়েছিলেন চার হাজার ২১৮ জন। আর ২০২২ সালে কর্মী গিয়েছিলেন পাঁচ হাজার ৯১০ জন। এর মধ্যে ওই বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গিয়েছিলেন তিন হাজার ৪৫৯ জন।</p> <p>২০০৮ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী যাওয়া শুরু করলেও এই শ্রমবাজারে ধস নামার কারণ হিসেবে ভাষা সমস্যা, কাজ পরিবর্তন ও অদক্ষতাকে চিহ্নিত করেছেন অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজ করতে যাওয়া কর্মীরা শুধু ভাষা পরীক্ষায় পাসের জন্যই প্রস্তুতি নিলেও ওই দেশে গিয়ে সেখানকার মানুষদের সঙ্গে ঠিকভাবে কথা বলতে ও বুঝতে পারেন না। এ ছাড়া কাজের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ থেকে বেশির ভাগ অদক্ষ কর্মী ওই দেশে যান। ফলে তাঁরা সেখানকার কাজের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেন না। আর বাংলাদেশি কর্মীরা সব সময় ওভারটাইম কাজের খোঁজে থাকেন। দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক কম্পানিতে ওভারটাইম নেই। ফলে ওভারটাইম না পাওয়া কর্মীরা অস্থির হয়ে কম্পানি পরিবর্তন করেন।</p> <p>কম্পানি পরিবর্তনের কারণে কর্মী নিয়োগে বড় সমস্যা তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। দূতাবাসের কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় উৎপাদন ও জাহাজ নির্মাণ খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া হয়। এই খাতগুলোয় দক্ষ কর্মী নেয় দক্ষিণ কোরিয়া। সেখানে গিয়ে অনেক কর্মী দু-তিন মাস পর কম্পানি পরিবর্তন করেন, যা নিয়োগকর্তাদের জন্য বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ তাঁরা দীর্ঘ সময়ের জন্য অন্য দেশের কর্মী নিয়ে আসেন। এখানে বড় ধরনের বিনিয়োগও রয়েছে।</p> <p>এসব সমস্যা দূর করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বোয়েসেলের নির্বাহী পরিচালক মো. শওকত আলী। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমরা এর জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি, যারা সেখানে চাকরি পরিবর্তন করবে আমরা তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করব এবং প্রয়োজনে তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা এরই মধ্যে কয়েকজনের বিষয়ে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, যাতে অন্যরা কাজ পরিবর্তন না করে।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে ভাষা পরীক্ষা আরেকটু ভালো করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। কাজের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়ায় অদক্ষ কর্মী যায়। আমরা এর জন্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছি। দুটি প্রশিক্ষণ এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে। একটি হচ্ছে ওয়েল্ডিং আরেকটি হচ্ছে মোল্ডিং। মোল্ডিংটা আমরা শুরু করছি বিপাক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, আর ডিকেটিটিসির মাধ্যমে ওয়েল্ডিংটা শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে ৪০ জন দক্ষিণ কোরিয়ায় গমনেচ্ছু কর্মী বাছাই করে এই প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়েছে। সর্বশেষ আমরা কর্মীদের কাজ পরিবর্তন না করার ব্যাপারে উৎসাহ-উদ্দীপনা দিতে শুরু করেছি। আশা করছি, এ ব্যবস্থাগুলোর মাধ্যমে সেই দেশে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা বাড়বে।’</p> <p> </p> <p>কম্পানি বদলের বিষয়ে কর্মীদের স্বীকারোক্তি  </p> <p>ঢাকার সাভারের মিরাজ ফকরুল পাঁচ বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকেন। কাজ করেন ইস্পাত কারখানায়। বাংলাদেশি কর্মীদের কম্পানি বদলের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক কম্পানি বেসিক বেতনে কাজ করাতে চায়, কিন্তু অনেক কর্মী এভাবে কাজ করতে চায় না। সে যখন দেখে যে বাংলাদেশি কোনো কর্মী অন্য কম্পানিতে বেসিকের বাইরে ওভারটাইম করে বাড়তি আয় করছে, তখন সে-ও আর বেসিক নিয়ে পড়ে থাকতে চায় না। সুযোগমতো অন্য কম্পানিতে চলে যায়।’</p> <p>মিরাজ আরো বলেন, ‘আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, অনেক কম্পানিতে তাদের নিজ ব্যবস্থাপনায় খাবার দেওয়া হয়। এর মধ্যে কোনো কোনা কম্পানির খাবার কর্মীরা খেতে পারে না। তখন কর্মীরা কম্পানি বদল করে।’</p> <p> </p> <p>বেসরকারি খাতেও যাচ্ছেন না কর্মী</p> <p>সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই হাজার ১৮১ জন কর্মী গেলেও বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে কোনো কর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় যাচ্ছেন না।</p> <p>বিএমইটির তথ্য বলছে, গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো মাত্র ৩৪০ জন কর্মী পাঠালেও চলতি বছর তারা কোনো কর্মী পাঠাতে সক্ষম হয়নি।</p> <p>রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মালিকরা বলছেন, সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সির বাইরে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে সেভাবে অনুমোদন দেয় না দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস। এ কারণে তাঁরা কর্মী পাঠাতে পারেন না।</p> <p>দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বেসরকারি খাতে কর্মী পাঠানো বাড়লে বাড়তি টাকা নিয়ে ভিসা বাণিজ্য শুরু হয়ে যেতে পারে। কেউ কেউ প্রতারণা করার সুযোগও নিতে পারে। এতে এই শ্রমবাজারে এক ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তাই সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে কাউকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিচ্ছে না দূতাবাস।</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>