<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে কনস্টেবল হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে। আগামী ১৪ অক্টোবর সেই রাজারবাগ থেকেই পেশাগত জীবনের ইতি ঘটবে বাচ্চু মিয়ার। শুরুতে রাজারবাগ পরিবহনসহ ডিএমপির বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালন করেন। শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি। গণমাধ্যমকর্মীদের সংবাদের উৎস ও সত্যতা নিশ্চিত করায় অসংখ্য সংবাদে উদ্ধৃত করা হয়েছে তাঁকে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><img alt="ঢাকা মেডিক্যালের সেই ‘বাচ্চু ভাই’" height="76" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/05-10-2024/890.jpg" style="float:left" width="292" />দীর্ঘ আট বছর ছিলেন সেখানে। এই সময়ে পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে অসহায় রোগীদের সেবা করাসহ অনেক মানবিক কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েছেন। জরুরি বিভাগের সামনে তো বটেই, হাসপাতালের আশপাশে কেউ বিপদে পড়লেও হাজির হতেন তিনি। তাই চিকিৎসক, ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে আশপাশের দোকানদার</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সবার কাছে তিনি </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাচ্চু ভাই</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অভিমানে ঘর ছাড়েন</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাচ্চু মিয়ার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার মামুননগর ইউনিয়নে। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ভীষণ ডানপিটে ছিলেন। এ জন্য প্রায়ই বাড়িতে নালিশ আসত। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। বড় ভাইয়ের পিটুনি খেয়ে বাড়ি ছাড়েন বাচ্চু। ঢাকার গাবতলীতে গিয়ে ওঠেন বড় বোনের বাসায়। সেখানে এক আত্মীয় জানালেন, আনসার বাহিনীতে লোক নিচ্ছে। ২১ দিনের ক্যাম্প হবে টাঙ্গাইলের সখীপুরে। বাচ্চুও সেই দলে নাম লেখালেন। তিন সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শেষে টিকে গেলেন। অস্থায়ীভাবে চাকরি হলো আনসারে। একাডেমিক পড়াশোনার ইতি সেখানেই! এটা ১৯৮০ সালের ঘটনা। বছরখানেক পর চাকরি শেষ। পরে চলে এলেন ঢাকার ডেমরায়। জাহাজের যন্ত্রপাতি তৈরির একটি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন কয়েক মাস। </span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৪০৯ টাকা বেতনে শুরু</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১৯৮৪ সালের ১১ মার্চ কনস্টেবল হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যাত্রা শুরু হলো বাচ্চু মিয়ার। ৪০৯ টাকা বেতন। প্রথম পদায়ন হয়েছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে। তবে বাচ্চু মিয়ার ঠিকানা হলো পুলিশের বাদকদলে। স্যাক্সোফোন বাজানোয় মুনশিয়ানা আছে তাঁর। সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে কর্মকর্তাদের পাসিং প্যারেডের সময় ডাক পড়ত বাচ্চু এবং তাঁর দলের। ঢাকা থেকে চলে যেতেন রাজশাহী। ১৯৯০ সালে পদোন্নতি পেয়ে নায়েক হলেন বাচ্চু। ১৯৯৬ সালে হাবিলদার (এএসআই), ২০১২ সালে হলেন উপপরিদর্শক (এসআই)। ২০১৮ সালে তিনি পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সুদানে গিয়েছিলেন</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্ব পান বাচ্চু মিয়া। তখন তিনি পুলিশের ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ফোর্স বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক (সশস্ত্র)। অবশ্য সে যাত্রায় বেশিদিন থাকা হয়নি সেখানে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল বাচ্চুর। আগেও বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সুযোগ মেলেনি। সেবার এক সহকর্মী এসে বললেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাচ্চু ভাই, মিশনের জন্য লোক নেওয়া হবে। আবেদন করেন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পরদিন সকালে দৌড় পরীক্ষা দিলেন। পরে আরো কয়েক ধাপের পরীক্ষা। একদিন রাত ১টার দিকে ফোন এলো, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">স্যার, আপনি তো মিশনে টিকেছেন!</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পরদিন গিয়ে দেখলেন তালিকার ১৪০ জনের মধ্যে ৭৬ নম্বরে তাঁর নাম। সুদানে ছিলেন এক বছর ২১ দিন। দেশে ফিরে যোগ দেন রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আবার ঢাকা মেডিক্যালে</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০১৬ সালের মার্চে আবার দায়িত্ব পেলেন ঢাকা মেডিক্যাল পুলিশ ফাঁড়ির। ১০ জনের দলের নেতৃত্ব দিতেন তিনি। বেশির ভাগ সময় সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর প্রধান কাজ ছিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, দুর্ঘটনা বা সহিংসতায় আহত-নিহতের প্রতিবেদন তৈরি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তা অবহিত করা। এর বাইরে আরেকটি কাজ করতেন তিনি</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দুর্ঘটনা বা সহিংসতায় হতাহতের খবর সাংবাদিকদের জানানো। গণমাধ্যমকর্মীদের সঠিক, সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট সংবাদ সরবরাহ করতেন তিনি। এ কারণে দৈনিক শত শত ফোনকল গ্রহণ করতে হতো তাঁকে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আগে স্বাভাবিক সময়ে বাচ্চুর দায়িত্ব ছিল রুটিনমাফিক। তিনি বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ঢাকা মেডিক্যালে আসার পর আমার টাইমটেবিল চেঞ্জ হয়ে যায়। বেশির ভাগ দিনই দেরিতে বিছানায় যেতাম। ছারপোকায় ভরা বিছানায় ঘুমাতে হতো। সকাল থেকে শুরু করে রাত ৩টা কিংবা ৪টা হোক, বড় কোনো সহিংসতা বা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে হাজির হতাম। পরিবারকে সময় দিতে পেরেছি খুবই কম।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফোন বাজতেই থাকত</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা তো বটেই, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ বা আশপাশে সংঘটিত সহিংসতায় হতাহতদের বেশির ভাগেরই ঠাঁই হতো ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অবারিতভাবেই বেজে উঠত বাচ্চুর মোবাইল ফোন। ডিএমপির ওয়্যারলেসে তাঁর কল সাইন ছিল </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হসপিটাল ওয়ান বাচ্চু</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">। পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানতে চাইতেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাচ্চু, কয়জন এলো? কয়জন মারা গেল?</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাচ্চু সব তথ্য দিতেন তাঁদের। পাশাপাশি সঠিক তথ্য দিয়ে সাংবাদিকদেরও সহযোগিতা করেছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্ব পালনের আট বছরে কত ফোনকল রিসিভ করেছেন, তার হিসাব নেই। বাচ্চু বললেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফোনের যন্ত্রণায় ঘুমাতে পারতাম না। ফোন বাজতেই থাকত। সাংবাদিকদের সবাই তো হাসপাতালে আসতেন না। আমার কাছে খোঁজ নিতেন বেশি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মাসুম বিল্লাহ বললেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ক্যাম্পাসে বা রাজনৈতিক সহিংসতায় অনেক সময় হতাহতের তথ্য নিয়ে লুকোচুরি দেখা যায় পুলিশের মধ্যে। কিন্তু বাচ্চু মিয়া এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। হতাহতের সংখ্যা জানাতে তিনি দ্বিধা করতেন না। সর্বশেষ ছাত্র আন্দোলনের ইন্টারনেটবিহীন সময়েও তিনি তথ্য দিয়েছেন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দরদি বাচ্চু</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ধর্ষণের মতো ঘটনায় সাধারণত পুলিশের অনুমতি ছাড়া ভিকটিমকে ভর্তি করতে চায় না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অনেক সময় স্বজনহারা বা ঠিকানাহীন অনেকেরও ঠাঁই হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এসব ক্ষেত্রে অভিভাবকের জায়গায় নিজের নাম দিয়ে অনেক রোগীকে ভর্তি করিয়েছেন বাচ্চু মিয়া। ওষুধ কিনে দিয়েছেন। অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত ভাড়া করে দিয়েছেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">টাঙ্গাইলের বাসিন্দা জাহিদ হোসাইন বললেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হাসপাতালে থাকার সময় আমাদের নানাভাবে সাহায্য করেছেন বাচ্চু ভাই। আমার স্ত্রী যে বেডে ছিলেন, তার পাশের বেডেই ছিলেন এক বয়স্ক নারী। সেই রোগীকে ওষুধপত্তর কিনে দিয়েছেন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">চুড়িহাট্টা, এফআর টাওয়ার, বঙ্গবাজার, বেইলি রোড ট্র্যাজেডি ও জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় লাশের সারি দেখেছেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তবে বাচ্চু মিয়ার মতে, এসবের চেয়ে তাঁর বড় পরীক্ষা নিয়েছে করোনা মহামারি। ছেলে ফেলে রেখে যাচ্ছে মাকে, স্ত্রী স্বামীকে। বোন ভাইয়ের কাছে যেতে চাইছে না। করোনার শুরুর দিকে এমন বহু ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। একটা ঘটনার কথা মনে পড়লে এখনো চোখ ছলছল করে ওঠে বাচ্চুর। ঘটনাটি জানিয়ে বাচ্চু বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">“</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মিরপুর থেকে একজন তাঁর মাকে ফেলে রেখে চলে গেছে ঢামেকের নতুন ভবনের সামনে। হাসপাতালে ঢোকার পথে দেখলাম, অসহায় সেই মা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। বললেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাবা, পোলাটা আমারে এখানে রাইখ্যা চলে গেছে!</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> পরে তাঁকে নিয়ে ভর্তি করালাম। ওষুধ ও খাবার এনে দিয়েছি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">”</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> সে সময় বাচ্চু নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়। বললেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হাসপাতালে কত অসহায় মানুষ আসে। তাদের সাহায্য করলে যে আনন্দ পাই তা তুলনাহীন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একটাই শুধু আক্ষেপ</span></span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ব্যক্তিজীবনে তিনি চার সন্তানের জনক। স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। দুই মেয়ে মুক্তা ও ঋতুবর্ণাকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে মাসুদ রানা একটি বেসরকারি কম্পানিতে চাকরি করেন। ছোট ছেলে মামুন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে স্নাতকে পড়ছেন। বিসিএস দিয়ে দুই ছেলে পুলিশে চাকরি করবে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এমন স্বপ্ন ছিল বাচ্চুর। কিন্তু ছেলেরা সেই পথে হাঁটেননি। এই একটা আক্ষেপ ছাড়া চাকরিজীবনে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই বাচ্চুর। তিনি বললেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অবসরের পরও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>