<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বেসরকারি চাকুরে মাসুদ পারভেজ। ছোট পরিবার নিয়ে তাঁর বসবাস। আগে কখনো তিন হাজার টাকার বেশি বিদ্যুৎ বিলের পেছনে ব্যয় করতে হয়নি। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে প্রতি মাসে তাঁকে গড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। কোনো মাসে আবার আট থেকে ৯ হাজার টাকাও রিচার্জ করতে হয়েছে। বিষয়টি বিতরণ কম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডে (ডিপিডিসি) একাধিকবার অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাননি। মাসুদের মতো এমন অস্বাভাবিক বিলের কবলে দেশের লাখ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক। বিদ্যুতের পেছনে এ বাড়তি ব্যয় করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছেন তাঁরা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিতরণ কম্পানিগুলোর দাবি, গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি বিল নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকের ব্যয় বেড়েছে। প্রি-পেইড মিটার নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভোগান্তি কমানোর কথা বলে চালু করা বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার এখন অনেক গ্রাহকের কাছে আতঙ্কের নাম। এ প্রি-পেইড মিটারের বেসামাল বিদ্যুৎ বিলে টালমাটাল গ্রাহকরা। তাঁদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ ব্যবহারের চেয়ে টাকা বেশি কাটা হচ্ছে। বেশ কয়েক মাস ধরে মিটারে রিচার্জ করলে টাকা থাকছে না, বাড়তি টাকা কেটে নিচ্ছে কম্পানিগুলো। প্রতিবার প্রি-পেইড মিটারে তিন হাজার টাকা রিচার্জে দুই হাজার ৬০০ টাকা থাকে। মুহূর্তেই তিন হাজার টাকার মধ্যে ৪০০ টাকা নাই হয়ে যায়। যতবারই রিচার্জ করা হয় ততবারই টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, বিতরণ পর্যায়ে গ্রাহককে ডিমান্ড চার্জ, মোট বিলের ৫ শতাংশ বিলম্ব মাসুল (বিলম্বে বিল পরিশোধ) এবং ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) দিতে হয়। বিইআরসির অনুমোদন ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর কোনো ধরনের চার্জ বা অর্থ আরোপ করার ক্ষমতা নেই বিতরণ কম্পানির। অথচ দেশের ছয় বিতরণ কম্পানি এমন সব খাতে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নিচ্ছে, যাতে বিইআরসির অনুমোদন নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজধানীর বিদ্যুৎ বিতরণকারী দুই কম্পানি ডিপিডিসি এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) একাধিক প্রি-পেইড গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে বিদ্যুতের এ বাড়তি বিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকার ডিপিডিসির গ্রাহক শাহ জামাল কালের কণ্ঠকে জানান, গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে তাঁর প্রি-পেইড মিটারে খরচ হয় যথাক্রমে ১২০০ ও ১৪০০ টাকা। মে ও জুন মাসে তাঁর প্রায় দ্বিগুণ খরচ হয়। অথচ এই চার মাস বিদ্যুতের ব্যবহার একই রকম ছিল বলে দাবি তাঁর। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজধানীর দক্ষিণ কুড়িল এলাকার ডেসকোর গ্রাহক রিপন তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আগে আমার দেড় হাজার টাকা রিচার্জে এক মাস ভালোভাবেই চালানো যেত। এখন আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা রিচার্জ করেও মাস শেষ হচ্ছে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানতে চাইলে ডেসকোর প্রধান প্রকৌশলী (এসঅ্যান্ডডি অপারেশন) মো. মনজুরুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিয়মের বাইরে আমরা কোনো বাড়তি টাকা নিইনি। প্রচণ্ড গরমের কারণে গ্রাহকরা বিদ্যুতের ব্যবহারও বাড়িয়েছে। বেশি ব্যবহারের কারণে এক ইউনিটের জন্য গ্রাহক শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, তখন বিলও বেশি আসছে। বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়া, স্ল্যাব পুনর্বিন্যাস ও গরমে ব্যবহার বাড়ায় গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল বেশি হচ্ছে। ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত আবাসিকে প্রতি ইউনিট ৮ টাকার মতো, ৪০১ ইউনিট হলে তা সাড়ে ১২ টাকার ওপরে চলে যায়। মূলত এ কারণে গ্রাহকের বেশি টাকা কাটা যায়, অনেক সময় গ্রাহকরা বিষয়টি না বুঝে অভিযোগ দেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রধান প্রকৌশলী আরো বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রি-পেইড মিটার নির্দিষ্ট সফটওয়্যারে চলে। এখানে কম্পানির নিজের ইচ্ছামতো কিছু করার নেই। গ্রাহকদের এসব অভিযোগ নিয়ে বিতরণ কম্পানিগুলোতে নিয়মিত শুনানি হয়। গ্রাহকদের কিছু অভিযোগ তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয়। মিটারে সমস্যা থাকলেও তাৎক্ষণিক চেক করে পুনরায় নতুন মিটার বসানো হয়। এর পরও যদি কোনো প্রি-পেইড মিটার নিয়ে কারো অভিযোগ থাকে, তাহলে খতিয়ে দেখা হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ছয় বিতরণ কম্পানির বিদ্যুৎ গ্রাহক মোট চার কোটি ৭১ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৫২ লাখ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করেন। বাকিদের ক্রমান্বয়ে এর আওতায় আনার কাজ চলছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকার বাইরে পল্লী বিদ্যুতের বিতরণ এলাকায় পোস্টপেইড গ্রাহকদেরও বাড়তি বিলের বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। ওই সব গ্রাহক বলছেন, পোস্টপেইড মিটারে অতিরিক্ত বিল আসছে, দেরিতে বিল পাঠিয়ে জরিমানা নেওয়া হচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার পোস্টপেইড গ্রাহক মিনুয়ারা বেগম। তিনি মাত্র দুটি সিলিং ফ্যান ও দুটি লাইট ব্যবহার করেন। আগে তাঁর মাসে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বিল এলেও গত জুলাই মাসে তাঁর বিল এসেছিল ৭১১ টাকা। মিনুয়ারা কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্রামাঞ্চলে ঠিকমতো বিদ্যুৎ না থাকলেও মাস শেষে বাড়তি বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এলাকার সবার এখন একই সমস্যা। ব্যবহার না করেও আমাদের বাড়তি বিল দিতে হচ্ছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ব্যপারে আরইবির এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্রাহকদের বাড়তি বিল আসার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। কিছু মিটার সমস্যার কারণে হয়তো এমন হতে পারে। গ্রাহকদের অভিযোগ পেলে আমরা মিটার পরিবর্তন করে দিচ্ছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রি-পেইড মিটার নিয়ে অভিযোগ তদন্তে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গত ১২ জুন বিচারপতি মো. মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারের বিল আদায় ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনাসহ কয়েকটি নির্দেশনা চেয়ে গত ৬ জুন সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবীর পক্ষে রিট আবেদন করেন আব্দুল্লাহ আল হাদী। আবেদনে বলা হয়, প্রি-পেইড বৈদ্যুতিক মিটার চালু থাকা সত্ত্বেও ভোক্তাদের অতিরিক্ত চার্জ ও গোপন চার্জ দিতে হয়। বিদ্যুতের বিল আদায় ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। এসব বিষয় পর্যালোচনা ও সংস্কার প্রয়োজন।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৪২ শতাংশ বেড়েছে বিদ্যুতের দাম</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত গ্রাহক পর্যায়ে ১৪২ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় খুচরায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় দাম ছিল তিন টাকা ৭৩ পয়সা। বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম আট টাকা ৯৫ পয়সা।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈদ্যুতিক মিটারের রেন্ট ও ডিমান্ড চার্জ প্রত্যাহারের দাবি</span></span></strong></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিদ্যুতের অবৈধ মিটার রেন্ট ও ডিম্যান্ড চার্জ প্রত্যাহারের দাবিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। গত শনিবার খুলনার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে খুলনা নাগরিকসমাজের উদ্যোগে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সালে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে ওজোপাডিকো। যার অধীন খুলনায় ২০১৫ সালে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। ওজোপাডিকোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিনা মূল্যে এ মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। এ বাবদ কোনো মূল্য নেওয়া হবে না। কিন্তু কিছু দিন যেতে না-যেতেই সংস্থাটি মিটারপ্রতি আবাসিক মিটারে মাসে ৪০ টাকা এবং বাণিজ্যিক মিটারে ২৫০ টাকা হারে ভাড়া গ্রহণ করা শুরু করল, যা গ্রাহকদের সঙ্গে রীতিমতো মিথ্যাচার ও প্রতারণা। </span></span></span></span></p>